[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

ঢাবিতে ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে প্রামাণ্য আলোকচিত্র ও দলিলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস

প্রকাশঃ
অ+ অ-
‘রক্তের দলিল’ শিরোনামে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা আয়োজিত প্রদর্শনীর একাংশ। আজ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র–শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সবুজ চত্বরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রামাণ্য আলোকচিত্র ও দলিলের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শুরু হয়েছে একটি বিশেষ প্রদর্শনী। ‘রক্তের দলিল’ শিরোনামে চার দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র–শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সবুজ চত্বরে আয়োজিত প্রদর্শনীটি চলবে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

আয়োজকদের মতে, মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে যে বিকৃত ও বিভ্রান্তিকর বয়ান ছড়ানো হচ্ছে, তার বিরুদ্ধেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। টিএসসিতে আয়োজিত প্রদর্শনীতে মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্ন পত্রিকা ও নথিপত্রের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের ইতিহাস, গণহত্যার প্রমাণ এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

প্রদর্শনীর একটি অংশে ‘গণহত্যার সম্মতি উৎপাদন’ শিরোনামে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত গোলাম আযমের কিছু বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে একাত্তরে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান ও ভূমিকা প্রামাণ্য দলিলের সহায়তায় তুলে ধরা হয়েছে।

গত শনিবার থেকে শুরু হওয়া প্রদর্শনীতে ১৯৭১ সালের ৭ জুন মুসলিম বিশ্বের উদ্দেশে মাওলানা মওদুদীর পাঠানো একটি স্মারকলিপিও স্থান পেয়েছে। সেখানে বলা হয়েছিল, পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অভিযানের পর বিদেশে এমন প্রচারণা চালানো হচ্ছে যে সেনাবাহিনী নিরপরাধ বাঙালি মুসলমানদের হত্যা করছে। এই অভিযোগকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী ও ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের প্রচারণা’ বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া ১৯৭১ সালের ২০ জুন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর প্রধান গোলাম আযমের আরেকটি বক্তব্যও প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হয়েছে।

প্রদর্শনীর অন্যান্য অংশের মধ্যে রয়েছে ‘অপূর্ণ গণযুদ্ধ’, যেখানে মুক্তিযুদ্ধ–পরবর্তী সময়ে জনগণের চলমান সংগ্রামের চিত্র দেখানো হয়েছে। ‘যাঁরা ছিলেন, যাঁরা আছেন’ অংশে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ হওয়া বামপন্থী বুদ্ধিজীবীদের জীবন ও অবদান তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি ‘গণহত্যার সাক্ষ্য’ অংশে পাকিস্তানি বাহিনীর চালানো গণহত্যার দলিল এবং মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ওপর সংঘটিত নির্যাতন ও তাঁদের প্রতিরোধের ইতিহাস প্রামাণ্যভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

আয়োজনের বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে মুক্তিযুদ্ধের বয়ানকে একদলীয়ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের গণযুদ্ধের অঙ্গীকার ধীরে ধীরে আড়ালে চলে গেছে। এর ফলে আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধকে এক কাতারে দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি রাজাকার, আলবদর, জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্রসংঘের উত্তরসূরি ছাত্রশিবির মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করছে। তারা অনলাইন ও অফলাইনে নানা বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামকে সংখ্যা ও গুরুত্বের দিক থেকে খাটো করার চেষ্টা করছে। কখনো বলা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা হাজার, আবার কখনো দাবি করা হচ্ছে বিহারিরাই মূলত গণহত্যার শিকার হয়েছিল।

মেঘমল্লার বসু আরও বলেন, ‘এই বুদ্ধিবৃত্তিক আক্রমণের বিপরীতে প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যেই আমাদের এই আয়োজন। পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণার মাধ্যমে আমরা গণযুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহ সামনে এনেছি। একই সঙ্গে গণহত্যার বাস্তবতা এবং রাজাকারদের সেই গণহত্যার পক্ষে সম্মতি আদায়ের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে।’

শাখার সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদ বলেন, অভ্যুত্থানের পর থেকে একটি সংঘবদ্ধ চক্র পূর্ব বাংলার ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায় মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার একদিকে স্বীকৃত রাজাকারদের বেকসুর খালাস দিচ্ছে, অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরগুলোকে অবহেলায় ফেলে রেখেছে। এই পরিস্থিতিকে তারা যেমন সংকট হিসেবে দেখছেন, তেমনি সম্ভাবনার জায়গাও দেখছেন।

মাঈন আহমেদ আরও বলেন, ‘এই সময়টিকে আমরা সংকট ও সম্ভাবনা—দু’ভাবেই দেখি। স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কুক্ষিগত করা বয়ান থেকে মুক্তিযুদ্ধকে বের করে আনা এবং জামায়াত–শিবিরগোষ্ঠীর মিথ্যাচারের যথাযথ জবাব দিয়ে জনযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস সামনে আনতেই বিজয়ের মাসে আমাদের এই আয়োজন।’

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন