মিরপুরে অপরাধের সিলসিলা: ফোর স্টার গ্রুপের আধিপত্য
![]() |
| রাজধানীর মিরপুরের ম্যাপ |
রাজধানীর বৃহত্তর মিরপুরে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী বিদেশ থেকে অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছেন। ‘ফোর স্টার গ্রুপ’ নামে পরিচিত এই চারজন মিরপুরকে নিজেদের মধ্যে ১৪ ভাগে ভাগ করেছেন এবং নিজ নিজ এলাকা পরিচালনার জন্য অনুসারীদের দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করছেন। কেউ পথের বাঁধা হয়ে গেলে হত্যার ঘটনাও ঘটানো হচ্ছে। সর্বশেষ শিকার হয়েছেন পল্লবীর যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়া।
মিরপুরে স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এবং গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা গেছে, ফোর স্টার গ্রুপের চাঁদাবাজিতে এলাকাবাসী আতঙ্কিত। মামলা বা জিডি করেও তারা নিরাপদ নন। পরিবহন খাতেও চলছে চাঁদাবাজি।
স্থানীয় ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, মিরপুরে চাঁদাবাজি, মাদক কারবার, দখলসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছেন মফিজুর রহমান মামুন, ‘কিলার’ ইব্রাহীম, শাহাদাত হোসেন ও মোক্তার হোসেন। তাঁদের মধ্যে মামুন মালয়েশিয়ায়, ইব্রাহীম ফ্রান্সে, শাহাদাত ইতালিতে এবং মোক্তার ভারতে অবস্থান করছেন। মামুনের এলাকায় মিরপুর ১২, পল্লবী, সাগুফতা ও বাউনিয়া, ইব্রাহীমের এলাকায় মিরপুর ১৩, মিরপুর ১৪, ভাষানটেক ও কালশী, শাহাদাতের এলাকায় মিরপুর ১, ২, ৬ ও ৭ এবং মোক্তার হোসেনের এলাকায় মিরপুর ১০ ও ১১। বিদেশে বসে তারা দেড় শতাধিক অনুসারীর মাধ্যমে অঞ্চলগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন। একজনের অনুসারীরা অন্যজনের এলাকায় ঢুকতে পারছে না।
পুলিশ জানায়, ১৭ নভেম্বর মিরপুর ১২ নম্বরের সি ব্লকের একটি দোকানে ঢুকে পল্লবী থানা যুবদলের সদস্যসচিব গোলাম কিবরিয়াকে (৪৭) গুলি করে হত্যা করা হয়। র্যাব-৪ সূত্র বলছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মামুনের এলাকায় মাদক, পরিবহন ও আবাসন খাতে চাঁদাবাজি চালাচ্ছে তার অনুসারীরা। এ বছরের জানুয়ারিতে পল্লবীর আলব্দিরটেকে এ কে বিল্ডার্সের অফিসে ৫ কোটি টাকা চাঁদার অভিযোগে মামলা হয় এবং আটজন গ্রেপ্তার হন।
বিহঙ্গ পরিবহনের একজন লাইনম্যান জানান, মিরপুরের প্রতিটি বাস ও স্ট্যান্ডে মাসিক ভিত্তিতে সন্ত্রাসীরা চাঁদা নেন। ইব্রাহীমের এলাকায় মাদকের অন্তত ১১টি বড় স্পট রয়েছে। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা শাহাদাত ইতালিতে থেকে অনুসারীদের দিয়ে একক আধিপত্য বজায় রেখেছেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে স্বাধীন মার্কেটে ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে ভাঙচুর চালানো হয়।
মোক্তার হোসেনের অনুসারীরা মিরপুর ১০ ও ১১ নম্বর সেকশনে চাঁদাবাজি ও অন্যান্য অপরাধে জড়িত। মিরপুর ১০ নম্বরের বেনারসিপল্লির ব্যবসায়ী সোহেল রানাকে ১০ লাখ টাকা চাঁদার জন্য হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘হত্যাসহ বিভিন্ন ঘটনায় যারা জড়িত ছিল, তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মিরপুরের কয়েকজন সন্ত্রাসীর বিষয়ে তথ্য রয়েছে এবং সেগুলো নিয়ে কাজ চলছে।’

Comments
Comments