চাকসুর এজিএস ও ৯ হল সংসদ সদস্য বিজয় দিবসের সভা বর্জন করলেন

অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দিচ্ছেন চাকসুর এজিএস আয়ুবুর রহমান । এ সময় সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন । আজ বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুলতলায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভা বর্জন করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) এজিএসসহ হল সংসদের ৯ প্রতিনিধি। তারা জানান, শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যা নিয়ে মন্তব্য এবং সহ-উপাচার্যের উপস্থিতি তাদের এই সিদ্ধান্তের কারণ।

আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুলতলায় এই ঘটনা ঘটে। একই সময় ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হট্টগোল সৃষ্টি হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

জারুলতলায় ‘সাম্প্রতিক বাংলাদেশে বিজয় দিবসের তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভা আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সভার সভাপতিত্ব করেন সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন। সভা শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের একটি মিছিল অনুষ্ঠানস্থলে আসে। তারা মঞ্চে থাকা সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) শামীম উদ্দিন খানের পদত্যাগ দাবি করেন এবং হট্টগোল সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে এজিএস আয়ুবুর রহমান সভা বর্জনের ঘোষণা দেন।

বর্জনের ঘোষণা দিয়ে আয়ুবুর রহমান বলেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পক্ষে কথা বলার পরও দুঃখপ্রকাশ বা ক্ষমা চাননি সহ-উপাচার্য শামীম উদ্দিন খান। এ কারণেই আমরা এই আলোচনা সভা বর্জন করছি।’

এজিএসের সঙ্গে আরও ৯ প্রতিনিধি সভা বর্জন করেন। তারা হলেন মাস্টারদা সূর্য সেন হল সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) মো. তাজিম, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) মো. সাদমান, এ এফ রহমান হল সংসদের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক তানজিম আশরাফ, শাহজালাল হল সংসদের এজিএস ইমতিয়াজ জাবেদ, সমাজসেবা, পরিবেশ ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, আলাওল হল সংসদের জিএস মো. নূরনবী, খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক বনি আল আমিন সরকার, অতীশ দীপঙ্কর হল সংসদের ভিপি রিপুল চাকমা এবং শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলের স্বাস্থ্য, আবাসন ও যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক জামিল হোসেন।

বর্জনের সময় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। আয়ুবুর রহমান বর্জনের ঘোষণা দেওয়ার পর বক্তব্য দেন চাকসুর ভিপি মো. ইব্রাহীম। তিনি ছাত্রদলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে বহিরাগত নিয়ে এসে আমাদের কী বোঝাতে চান। এখানে সাধারণ শিক্ষার্থী, কর্মচারী ও কর্মকর্তা আছেন। আমি প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানাই, সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নিন।’

মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে হট্টগোল। আজ বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুলতলায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী অনুষ্ঠানে থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর সাঈদ বিন কামাল চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘আলোচনা সভা এখনো চলছে। সভা শেষে প্রক্টর বিস্তারিত জানাবেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে আমাদের পক্ষে বক্তব্য দেওয়া সম্ভব নয়।’

এর আগে গত রোববার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘যে সময় আমি (পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী) দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করছি, তখন আমি জীবিত থাকব কি মৃত, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি; সেই সময় পাকিস্তানি যোদ্ধারা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এটি আমি মনে করি অবান্তর।’ এ ছাড়া তিনি মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন।

অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের এ বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পর সমালোচনা শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলসহ ছয়টি সংগঠন তাঁর পদত্যাগের দাবি জানায়। এই দাবিতে তারা গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগায়। ফলে রাত প্রায় পৌনে ৯টা পর্যন্ত সেখানে আটকা ছিলেন সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন এবং ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম।