[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

শতবর্ষী স্টিমার পি এস মাহসুদ নিয়ে কি বিপাকে বিআইডব্লিউটিসি?

প্রকাশঃ
অ+ অ-

শতবর্ষী স্টিমার পি এস মাহসুদ নতুন চেহারা নিয়ে নদীপথে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

রাষ্ট্রায়ত্ত নৌপরিবহন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কিছু সমস্যার মুখে পড়েছে শতবর্ষী স্টিমার পিএস মাহসুদ নিয়ে। ১৫ নভেম্বর উদ্বোধনের সময় জানানো হয়েছিল, ২১ নভেম্বর থেকে এই ঐতিহ্যবাহী নৌযানটি ঢাকা-বরিশাল নৌপথে পর্যটন সার্ভিস হিসেবে যাত্রা শুরু করবে। তবে যাত্রী না পাওয়া ও আইনি জটিলতার কারণে উদ্বোধনী যাত্রা বাতিল করা হয়েছে।

পিএস মাহসুদকে ঘিরে আরও কিছু বিষয় রয়েছে। জানা গেছে, এখন পর্যন্ত নৌযানটির বৈধ চলাচলের অনুমতি মেলেনি। শতবর্ষী এই নৌযানের ফিটনেস সনদসহ প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি। ভ্রমণ ভাড়াও চূড়ান্ত হয়নি। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্টরা প্রশ্ন তুলেছেন, পর্যটন খাতে এই নৌযানের ভবিষ্যৎ কী হবে।

নৌপরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো নৌযান নিবন্ধন বা চলাচলের অনুমতি ছাড়া নদী বা সাগরে যেতে পারবে না। তবে সরকার জানিয়েছে, পিএস মাহসুদ শুধুমাত্র পর্যটনের জন্য চলবে, তাই ফিটনেস সনদের প্রয়োজন নেই। এই দ্বন্দ্বের কারণে বিআইডব্লিউটিসির ভেতর টানাপড়েন চলেছে। সংস্থাটি বেসরকারি পর্যটন খাতে নৌযানটি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ২৬ নভেম্বর সর্বোচ্চ দরদাতার কাছে জাহাজটি বুঝিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

নির্মাণ ও বিনিয়োগ বিষয়ক পরামর্শে বলা হচ্ছে, ঢাকা-বরিশাল পথ অনেক দীর্ঘ। এই পথে চললে নৌযানটি লাভবান হবে না। তাই পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, ছোট পথ নির্ধারণ করে ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর বা পদ্মাসেতুর আশপাশে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার ভ্রমণ করা হোক।

বিআইডব্লিউটিসি জানিয়েছে, তিন বছর বন্ধ থাকার পর নৌপরিবহন উপদেষ্টার আগ্রহে সংস্থাটি নতুন করে শতবর্ষী নৌযান চালু করতে চাচ্ছে। এ জন্য নৌপরিবহন অধিদফতরের কাছে চলাচলের সক্ষমতা সনদ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। অধিদফতর নৌযানটিতে ২১ ধরনের ত্রুটির কথা জানিয়েছে। পরবর্তীতে সংস্থাটি এসব ত্রুটি ঠিক করে আবারও অনুমতির জন্য চিঠি পাঠায়। ২৩ অক্টোবর নৌপরিবহন অধিদফতরের জাহাজ পরীক্ষা ও তদারকি কর্মকর্তা মোহাম্মদ এহতেছানুল হক ফকির বিস্তারিত পরীক্ষা করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নৌযানটির অনেক দিন ধরে হালনাগাদ সার্ভে সনদ নেই। তবে ত্রুটির বেশির ভাগ ঠিক করা হয়েছে। নৌযানের নেভিগেশন যন্ত্রপাতি, নিরাপত্তা ও অগ্নিনিরোধ যন্ত্র, জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম ও কাঠামোগত ত্রুটি বার্ষিক পরিদর্শনে পরীক্ষা করা হয়েছে।

জাহাজটি ১৯২৩ সালে কলকাতায় নির্মিত। “দ্য ইনল্যান্ড শিপিং অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬”-এর ধারা ৩০(১) অনুযায়ী, ৪০ বছরের বেশি বয়সের নৌযান নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলতে পারবে না। ফলে ইঞ্জিনিয়ার ও শিপ সার্ভেয়ার সরাসরি পিএস মাহসুদকে চলার অনুমতি দিতে পারেননি। নৌযান চলাচলের উপযোগী হলেও নৌপরিবহন অধিদফতরের নির্দেশ প্রয়োজন।

নৌ-আইন বিশেষজ্ঞরা বলেন, সড়কে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস লাগে, তেমনি নদী বা সাগরে নৌযানেরও রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস সনদ লাগবে। মন্ত্রণালয় বা সচিবের নির্দেশে তা দেওয়া যায় না। একমাত্র কর্তৃপক্ষ হলো নৌপরিবহন অধিদফতর।

বিআইডব্লিউটিসির দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মেনে পিএস মাহসুদ চালাচ্ছি। এতে আইনি বৈধতা নেই।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পিএস মাহসুদের ফিটনেস সনদের প্রয়োজন নেই। ধারা ৩২ অনুযায়ী, এটি শুধুমাত্র পর্যটনের জন্য চলবে, বাণিজ্যিকভাবে নয়। তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধারা ৩২-এ শতবর্ষী নৌযান চালানোর স্পষ্ট উল্লেখ নেই। অন্য দেশের নৌযান বাংলাদেশে চলতে চাইলে সেই দেশের রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস সনদ গ্রহণ করতে হয়, যা পিএস মাহসুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

আইন বিশ্লেষকরা বলছেন, ধারা ৩০(১) অনুযায়ী পিএস মাহসুদের বৈধতা নেই। চলতে হলে অফিসিয়াল গেজেটে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অনুমতি নিতে হবে এবং প্রতি বছর নৌপরিবহন অধিদফতর থেকে ফিটনেস সনদ নিতে হবে।

বিআইডব্লিউটিসি পরিচালক এসএম আশিকুজ্জামান বলেন, 'মন্ত্রণালয়ের নির্দেশই আমাদের জন্য আইন। ঐতিহ্য সংরক্ষণের অংশ হিসেবে স্বল্প দূরত্বে পর্যটকদের জন্য জাহাজটি চলবে।'

নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'নৌযানটির ফিটনেস সনদের প্রয়োজন নেই। এটি শুধুমাত্র পর্যটনের জন্য চলবে, বাণিজ্যিকভাবে নয়।'

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন