২৩ বছর বেতন না পাওয়া শিক্ষক হামিদ কাঁঠালপাতা বিক্রি করে সংসার চালান
![]() |
| দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় মহাসড়কের পাশের দোকানে কাঁঠালপাতা বিক্রি করছেন দুর্গাপুর উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক আবদুল হামিদ। সম্প্রতি বিরামপুর পৌর শহরের কলাবাগান এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ব্যস্ত মহাসড়কের পাশে কাঁঠাল পাতার স্তূপ। পাতা কিনতে দোকানের সামনে ক্রেতাদের ভিড়। ‘হামাক এক বোঝা পাতা দেও, মাস্টার।’ ক্রেতার চাহিদা শুনেই স্তূপ থেকে পাতা টেনে দিলেন আবদুল হামিদ। পাতা বুঝে পেয়ে ক্রেতা বিক্রেতাকে সালাম দিয়ে চলে গেলেন।
প্রায় দুই যুগ ধরে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে কলাবাগান এলাকায় কাঁঠালপাতা বিক্রি করছেন এই শিক্ষক। আবদুল হামিদ জানালেন, দিন শেষে এ থেকে যা আয় হয়, তাতেই চলে তাঁর সংসার। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কোনো বেতন পাননি।
আবদুল হামিদের (৫৮) বাড়ি দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে। তিনি ২০০২ সালের ১ জুন উপজেলার দুর্গাপুর উচ্চবিদ্যালয়ে কৃষি বিষয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। যোগদানের পর থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ৯ বার এমপিওর (মান্থলি পে–অর্ডার) জন্য আবেদন করেছেন। তবে প্রতিবারই তাঁর আবেদন বাতিল হয়েছে। দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় ধরে তিনি বিদ্যালয়ে বেতন ছাড়াই পাঠদান করে যাচ্ছেন। সংসার চালানোর জন্য বিকল্প পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন কাঁঠালপাতার ব্যবসা। এ থেকে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়।
দুর্গাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনি ওই বিদ্যালয়ে চাকরি করছেন। সরকারি কোষাগার থেকে বেতন না পেলেও বিদ্যালয়, শ্রেণিকক্ষ ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মায়ায় বাঁধা পড়েছেন। এ কারণে এখনো নিয়মিত পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন।
আবদুল হামিদ বলেন, দুই বছর পর তিনি চাকরি থেকে অবসর নেবেন। শেষ সময়ে একজন শিক্ষকের স্বীকৃতি হিসেবে বেতন পাওয়ার আশায় বুক বাঁধছেন তিনি। গত অক্টোবর মাসে শেষবারের মতো আবারও এমপিওর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছেন।
সহকারী শিক্ষক আবদুল হামিদ ১৯৯৭ সালের ৬ অক্টোবর দুর্গাপুর উচ্চবিদ্যালয়ে অফিস সহকারী হিসেবে যোগ দেন। চাকরির পাশাপাশি তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর অব অ্যাগ্রিকালচারাল এডুকেশন (বিএজিএড) প্রোগ্রামে পড়াশোনা করতে থাকেন। ২০০২ সালের ১ জুন অফিস সহকারীর পদ ছেড়ে একই বিদ্যালয়ে কৃষি বিষয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং কোর্স সম্পন্ন করে সনদ পান।
২০০৭ সালে এমপিওর জন্য আবেদন করেন, তবে বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ৩০ শতাংশ নারী কোটা পূরণ না হওয়ায় আবেদন বাতিল হয়। পরের বছরও এনটিআরসিএ নিয়োগবিধির জটিলতার কারণে তাঁর আবেদন গ্রহণ করা হয়নি। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১৯৯৬ সালের পরিপত্রে বলা ছিল, বিএজিএড প্রোগ্রামের ৬ সেমিস্টার সম্পন্ন প্রার্থী কৃষি বিষয়ে নিয়মিত সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ ও সরকারি সুবিধা পাওয়ার যোগ্য।
বিষয়টি নিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘এমপিওর জন্য যতবার আবেদন করেছি, ততবারই কোনো না কোনো কারণ দেখিয়ে আমার আবেদন বাতিল করা হয়েছে। ২০১৯ সালেও আবেদন করে হতাশ হয়েছিলাম। গত পাঁচ বছর আর আবেদন করিনি। এ বছর অক্টোবর মাসে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে আবারও আবেদন করেছি। প্রায় দুই যুগ ধরে বেতন পাইনি।’
বিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শমসের আলী মণ্ডল বলেন, গত অক্টোবর মাসে আবদুল হামিদের এমপিওভুক্তির সব কাগজপত্র যাচাই করে অনলাইনে আবেদন পাঠানো হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক থেকে এখনো কোনো চিঠি আসেনি। সব ঠিকঠাক থাকলে এবার তাঁর চাকরি এমপিওভুক্ত হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন