[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

দেশে চীনের ব্যাংক চান ব্যবসায়ীরা

প্রকাশঃ
অ+ অ-
ব্যাংক | গ্রাফিকস: পদ্মা ট্রিবিউন 

বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার চীন। দু’দেশের বার্ষিক আমদানি-রপ্তানি ১৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি। তবে ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংক থাকলেও বাংলাদেশে চীনের কোনো ব্যাংক নেই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে সহায়তার জন্য দেশে একটি চীনা বাণিজ্যিক ব্যাংক থাকা জরুরি। তাদের যুক্তি, এতে চীনা মুদ্রা ইউয়ানে লেনদেন করা সম্ভব হবে এবং ডলারের ব্যয় কমবে। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চীনের ব্যাংক আসলেও এর কার্যকারিতা মূলত সেবার ওপর নির্ভর করবে। ইউয়ানের স্বল্পতাও একটি সীমাবদ্ধতা।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে একটি পূর্ণাঙ্গ চীনা বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব ইতিমধ্যেই চীনা দূতাবাসে দেওয়া হয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য দ্রুত বেড়েছে। গত ১০ বছরে এটি তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের মোট আমদানি ২৬ শতাংশের বেশি চীনের ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু মোট রপ্তানির মাত্র এক শতাংশের কিছু বেশি চীনে যায়। এছাড়া বাংলাদেশের নানা প্রকল্পেও চীনের অংশগ্রহণ রয়েছে।

ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, গত অর্থবছরে চীন থেকে পণ্য আমদানি করতে ব্যয় হয়েছে ১৬.৬৪ বিলিয়ন ডলার। বিপরীতে বাংলাদেশ চীনে রপ্তানি করেছে ০.৪১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য। বড় প্রকল্পে যেমন পদ্মা সেতু, রেল সংযোগ প্রকল্প, কর্ণফুলীর টানেল এবং পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রেও চীনের অর্থায়ন ও অংশগ্রহণ রয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলেন, বর্তমানে চীনের সঙ্গে লেনদেন তিন স্তরে হয়। প্রথমে ব্যবসায়ীরা টাকায় স্থানীয় ব্যাংকে পণ্যের মূল্য পরিশোধ করেন। স্থানীয় ব্যাংক তা ডলারে রূপান্তর করে চীনের রপ্তানিকারকের ব্যাংকে পাঠায়। এরপর সেই ব্যাংক ডলারের সঙ্গে ইউয়ান রূপান্তর করে রপ্তানিকারককে দেয়। এই তিন স্তরের লেনদেনে বিনিময় ফি বেড়ে যায়। তারা আশা করছেন, যদি দেশে চীনের কোনো ব্যাংক থাকে, সরাসরি ইউয়ানে লেনদেন করা যাবে। এতে মোট লেনদেন খরচ ২-৩ শতাংশ কমে যাবে।

ডলারের সংকট ও বাড়তি দামও কমবে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চীনে রপ্তানি ও প্রকল্প সহযোগিতা মিলিয়ে ২-৩ বিলিয়ন ডলারের সমমূল্যের ইউয়ান দেশে রাখা সম্ভব। এই লেনদেনও যদি ইউয়ানে করা যায়, ডলারের ওপর চাপ অনেকটাই কমবে। ইউয়ানের স্থিতিশীল মূল্যের কারণে আমদানি খরচও হুটহাট বাড়বে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে ডলারের দাম ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। বিপরীতে ইউয়ানের মূল্য বেড়েছে মাত্র ২৭ শতাংশ। ২০২০ সালে ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৮৪-৮৫ টাকা, ২০২২ সালের মাঝামাঝি তা ১০৭ টাকায় ওঠে। বর্তমানে ১২২ টাকার বেশি। ইউয়ানের দাম ২০২০ সালে ১৩.৪৮ টাকা, ২০২৩ সালে বেড়ে ১৫.৪৮ টাকা এবং বর্তমানে ১৭.২২ টাকা।

বাংলাদেশে বর্তমানে ৬টি দেশের মোট ৯টি বিদেশি ব্যাংক কাজ করছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের ২টি, পাকিস্তানের ৩টি। অন্যগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া ও শ্রীলঙ্কার ১টি করে ব্যাংক।

বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিসিআই) সভাপতি মো. খোরশেদ আলম বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে দেশে চীনের একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। এতে নানা সুবিধা পাওয়া যাবে। আমরা চীনা দূতাবাসে প্রস্তাব দিয়েছি এবং তারা আগ্রহ দেখিয়েছে।' 

ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে সম্প্রতি সৌজন্য সাক্ষাৎ করে বিসিসিসিআই ৬টি প্রস্তাব দেন। এর মধ্যে একটি হলো দেশে চীনের পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক ব্যাংক স্থাপন করা।

বিসিসিসিআইয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আল মামুন মৃধা বলেন, 'আমাদের হাতে ইউয়ানের মজুত কম থাকে। তবে বিভিন্ন প্রকল্প ও সহায়তা মিলিয়ে ২-৩ বিলিয়ন ডলারের সমমূল্যের ইউয়ান পাওয়া সম্ভব। চীনা পণ্য আমদানির জন্য ৩ বিলিয়ন ডলারও ইউয়ানে পরিশোধ করা গেলে রিজার্ভের ওপর চাপ কমবে।' 

তিনি জানান, গত কয়েক বছর ধরে চীনের ব্যাংক স্থাপনের প্রস্তাব চীনা দূতাবাসে দেওয়া হয়েছে। দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যায়ে কিছু আলোচনা হলেও দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, 'চীনের সঙ্গে বাণিজ্য আরও বাড়ানোর সুযোগ আছে। দেশে চীনের একটি ব্যাংক থাকলে লেনদেন সহজ হবে। ইউয়ানের মজুত কম থাকলেও ডলারে লেনদেন করা সম্ভব।' 

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, 'চীন আমাদের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য সহযোগী, তাই তাদের একটি ব্যাংক থাকা স্বাভাবিক। তবে দেশ থেকে কেউ আবেদন বা প্রস্তাব দেয়নি। প্রস্তাব এলে আমরা বিষয়টি বিবেচনা করব।' 

জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, 'চীনের ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হলে সুবিধা নির্ভর করবে তারা কী এবং কতটুকু সেবা দেবে। প্রথমে ব্যাংককে বাংলাদেশে আগ্রহী হতে হবে। ইউয়ানে লেনদেনের বিষয়টা অনেকটা অপ্রাসঙ্গিক, কারণ আমাদের হাতে অত ইউয়ান নেই।' 

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন