রামেক হাসপাতালে এলো অনুদানের ৩৬ কোটি টাকার ওষুধ
![]() |
| রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৬ কোটি টাকার বিদেশি ওষুধের ব্যবস্থা করেছেন অধ্যাপক আজিজুল হক (ডানে)। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টোরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ৩৬ কোটি ১০ লাখ টাকার ইনজেকশন দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ডিরেক্ট রিলিফ। প্রতিটি ইনজেকশনের দাম প্রায় চার লাখ টাকা হলেও রোগীরা এগুলো বিনা মূল্যে পাবেন।
গত বুধবার এসব ওষুধ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় পৌঁছে। কাস্টমস প্রক্রিয়া শেষ করে আজ শুক্রবার সকালে সেগুলো রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়।
ইনজেকশনগুলোর মেয়াদ আগামী বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক আজিজুল হক ডিরেক্ট রিলিফের সঙ্গে যোগাযোগ করে এসব ইনজেকশন আনার ব্যবস্থা করেন। সার্বিক সহযোগিতা করেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহমেদ।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অ্যাডালিমুমাব মূলত রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস, অ্যাংকাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস, জুভেনাইল ইডিওপ্যাথিক আর্থ্রাইটিসসহ কয়েক ধরনের অটোইমিউন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। সাধারণ ওষুধে যাদের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আসে না, তাদের জন্য এ ইনজেকশন কার্যকর। একজন রোগীর একাধিক ডোজ নেওয়ারও প্রয়োজন হতে পারে।
রাজশাহী মেডিকেলের সঙ্গে ডিরেক্ট রিলিফের যোগাযোগ শুরু হয় কলেজের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শীর্ষ শ্রেয়ানের হাত ধরে। গত জুলাইয়ে এমবিবিএস শেষ করা শীর্ষ এখন হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক। পঞ্চম বর্ষে পড়ার সময় তিনি ‘ওয়ার্ল্ড স্ট্রোক অর্গানাইজেশন’-এর (ডব্লিউএসও) গবেষক দলে যুক্ত হন। তাঁদের যৌথ গবেষণা আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয় এবং ২০২৪ সালের অক্টোবরে সেরা গবেষণার স্বীকৃতি পায়।
ডিরেক্ট রিলিফের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক গর্ডন উইলকক গবেষণাপত্রটি দেখে শীর্ষকে গত মার্চে ই-মেইল করেন। তিনি জানান, সংস্থাটি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্ট্রোক চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যাল্টেপ্লেস দিতে চায়। শীর্ষ বিষয়টি জানালে এতে যুক্ত হন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক আজিজুল হক ও হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহমেদ।
এই উদ্যোগের ফলে গত ২৫ আগস্ট হাসপাতালে পৌঁছে আড়াই হাজার ভয়াল অ্যাল্টেপ্লেস, যার বাজারমূল্য প্রায় ১৭ কোটি টাকা। স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ফলে জমাট বাঁধা রক্ত গলাতে ব্যবহৃত এই ওষুধের প্রায় ৬০ শতাংশ ইতিমধ্যেই রামেক হাসপাতালের রোগীদের প্রয়োগ করা হয়েছে।
ওই সফলতার পর বাতের ইনজেকশন আনার উদ্যোগ নেন অধ্যাপক আজিজুল হক। দুই মাস আগে তিনি ডিরেক্ট রিলিফের কাছে আধুনিক বায়োলজিক ইনজেকশন সরবরাহের অনুরোধ করেন। সংস্থাটি দ্রুত সাড়া দেয়। ওষুধটি আনতে প্রয়োজন হয় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহমেদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করে অনুমোদনের ব্যবস্থা করেন।
অধ্যাপক আজিজুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশে অ্যাডালিমুমাবের কপি সংস্করণ আছে। এটিও খুব দামি। গরিব মানুষের নাগালের বাইরে। ডিরেক্ট রিলিফের এই অনুদানের ফলে অনেক রোগী দীর্ঘ সময় ব্যথামুক্ত থাকতে পারবেন।’
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহমেদ বলেন, ‘এর আগে পাওয়া ১৭ কোটি টাকার স্ট্রোক ও হৃদরোগের ওষুধ এখনো বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে। নতুন যোগ হওয়া বাতের ইনজেকশন অসচ্ছল রোগীদের জন্য আশীর্বাদ হবে। কোন রোগী ইনজেকশন পাবেন, তা মেডিসিন ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক অধ্যাপক আজিজুল হক নির্ধারণ করবেন।’

Comments
Comments