সংবিধান সংস্কার জনগণের মতামতের ভিত্তিতে হওয়া উচিত: ড. কামাল হোসেন
![]() |
| ‘বাংলাদেশের সংবিধান ও সংস্কার প্রস্তাব’ প্রস্তাব শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ড. কামাল হোসেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
বাংলাদেশের সংবিধান সংস্কার অবশ্যই জনগণের মতামতের ওপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেছেন, সংবিধান হলো দেশের চলার নিয়ম, যা রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করে। গত ৫৩ বছরে এই সংবিধানে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সংবিধান সংস্কার একটি সংবেদনশীল বিষয়, তাই এটি করার সময় জনগণের মতামত অবশ্যই নেওয়া উচিত।
বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘বাংলাদেশের সংবিধান ও সংস্কার প্রস্তাব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই কথা বলেন ড. কামাল হোসেন। অসুস্থ থাকায় তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।
লিখিত বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বলেন, বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে সংবিধান পর্যালোচনা খুবই জরুরি। তবে কোনো সংস্কার করার সময় আমাদের মনে রাখতে হবে, সংবিধান হলো স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি, যা দেশের মানুষের ত্যাগ ও একতাবদ্ধ চেষ্টার ফল। কোনো এক ব্যক্তির এককভাবে সংবিধান পরিবর্তনের অধিকার নেই। সংস্কারের প্রস্তাবে অবশ্যই জনগণের ইচ্ছা প্রতিফলিত হতে হবে এবং তা সমাজের বর্তমান চাহিদার সঙ্গে আমাদের মৌলিক মূল্যবোধের সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে।
![]() |
| ‘বাংলাদেশের সংবিধান ও সংস্কার প্রস্তাব’ প্রস্তাব শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ড. কামাল হোসেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ এবং গণতন্ত্রহীনতার জন্য শুধু সংবিধানকে দায়ী করার প্রবণতা থেকে বের হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে গণতন্ত্র চর্চার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
ড. কামাল হোসেন উল্লেখ করেন, অতীতে দেশের অনেক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান দলীয়করণের কারণে জনগণের আশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। সেসব প্রতিষ্ঠানের সংস্কার জরুরি। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি এ বিষয়ে জাতীয় ঐক্য তৈরি করতে না পারে, তাহলে গণতন্ত্র কখনোই দৃঢ় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে না।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে লেখা হয়েছে। সেই সংবিধান অক্ষত থাকবে। এই সংবিধানের ওপর হাত দেওয়ার সাহস সরকারের নেই।’
সুব্রত চৌধুরী সংস্কারের বিষয়গুলো জাতীয় সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে ঐক্য না গড়ে বিভেদ তৈরি করার জন্য সরকারকে প্রশ্নের মুখে দাঁড়াতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনি ছাত্রদের রাজনীতির মাঠে নামিয়ে আবার তাদের তৃতীয় শক্তি বানিয়েছেন। বিএনপি, জামায়াত আবার এনসিপি। বাংলাদেশে যেন আর কোনো রাজনৈতিক দল নেই। মামার বাড়ির আবদার।’
সুব্রত চৌধুরী অভিযোগ করেন, অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের ভুল পথে পরিচালিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘তাদের পরিবার-পরিজনকেও অসম্মানের মুখোমুখি হতে হয়েছে। আজকাল সব জায়গায় তাদের নিয়ে কথা হয়, নানান জায়গায় তারা ভুল কাজ করছে। তারা সরকারের বিভিন্ন জায়গায় বসে অংশীদারিত্ব উপভোগ করছে। বিভিন্ন জায়গায় পদ-পদবি নিচ্ছে, নিয়োগ-ব্যবসা করছে, ট্রান্সফার করছে।’
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ও নারীপক্ষের সভাপতি শিরীন হক।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন