[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

নতুন দুই টিভি চ্যানেলের অনুমোদন দিল সরকার

প্রকাশঃ
অ+ অ-
প্রতীকী ছবি
 
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার একই প্রক্রিয়ায় বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনের লাইসেন্স দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন অনুমোদন পাওয়া দুটি চ্যানেলের নাম ‘নেক্সট টিভি’ ও ‘লাইভ টিভি’।

নেক্সট টিভির লাইসেন্স পেয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক মো. আরিফুর রহমান তুহিন। তিনি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য হিসেবে যোগ দেন। এর আগে তিনি একটি ইংরেজি দৈনিকের স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। এনসিপি গঠনের পর তিনি দলটির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হন।

অন্যদিকে লাইভ টিভির লাইসেন্স পেয়েছেন আরিফুর রহমান নামের আরেকজন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে প্রায় ছয় বছর আগে পড়াশোনা শেষ করেন। ছাত্রজীবনে তিনি একটি ইংরেজি দৈনিকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ছিলেন। তিনি জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ছিলেন, তবে এনসিপিতে যোগ দেননি।

টেলিভিশন চ্যানেল প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার মতো আর্থিক সক্ষমতা এই দুই আরিফুর রহমানের আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কী বিবেচনায় তাঁদের লাইসেন্স দেওয়া হলো, সে বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে প্রশ্ন পাঠানো হলেও উত্তর মেলেনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন টিভির অনুমোদন আগের নিয়ম মেনেই দেওয়া হয়েছে। আর সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে মোট ২৮টি টেলিভিশন চ্যানেলের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। এর বেশির ভাগই পেয়েছেন সরকার-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও রাজনীতিকেরা। এসব চ্যানেলের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন ছিল।

বর্তমানে দেশে অনুমোদিত বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে ৫০টি। এর মধ্যে ৩৬টি সম্প্রচারে আছে, আর ১৪টি সম্প্রচারের অপেক্ষায়। এছাড়া অনুমোদিত আইপি টিভির (ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিভিশন) সংখ্যা ১৫টি। টেলিভিশন চ্যানেলের নতুন অনুমোদনের জন্য আরও কিছু আবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। 

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি টিভি চ্যানেল অনুমোদনের জন্য আলাদা কোনো আইন নেই। জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা আছে, যেখানে বলা হয়েছে সব সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানকে সরকার বা সরকারের অনুমোদিত কোনো সংস্থার কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। তবে টিভির লাইসেন্স দেওয়ার নির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা এখনো তৈরি হয়নি। আবেদন পাওয়ার পর তথ্য মন্ত্রণালয়ই বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভির অনুমোদন দেয়।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের যে কেউ বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে পারেন। এ জন্য কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হয়। এর মধ্যে আছে জাতীয় পরিচয়পত্র, প্রতিষ্ঠানের গঠনতন্ত্র (আর্টিকেল অব মেমোরেন্ডাম), নিবন্ধন সনদ (সার্টিফিকেট অব ইনকরপোরেশন), ট্রেড লাইসেন্স, আয়কর সনদ, ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতার সনদ, প্রকল্প প্রস্তাব এবং টেলিভিশন চালানোর সামর্থ্য আছে—এমন ঘোষণা দিয়ে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা।

আবেদন করার পর তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যাচাই করা হয়। বেসরকারি টিভির লাইসেন্স পাওয়ার পর বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে ‘ফ্রিকোয়েন্সি ক্লিয়ারেন্স’ নিতে হয়। সাধারণত সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের অনুমতি বা ‘সবুজ সংকেত’ থাকলেই এই তরঙ্গ বরাদ্দ দেওয়া হয়।

নেক্সট টিভির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে গত ২৪ জুন। এটি ‘৩৬ মিডিয়া লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে অনুমোদন পেয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা আরিফুর রহমান তুহিন। অফিসের ঠিকানা পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার করাতিটোলা লেনে।

জানতে চাইলে আরিফুর রহমান এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, এই টিভি চ্যানেলের পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন বগুরার বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম হাফিজুর রহমানের ছেলে এ কে এম গোলাম হাসনাইন। তিনি সৌদি আরব প্রবাসী এবং সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চল বিএনপির সভাপতি।

গোলাম হাসনাইন গত রোববার মুঠোফোনে বলেন, তিনি ৩৬ মিডিয়া লিমিটেডের অন্যতম পরিচালক এবং সেখানে তাঁর বিনিয়োগ রয়েছে।

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, লাইভ টিভির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে গত ১৪ জুলাই। এই টিভির মালিক আরিফুর রহমানের প্রতিষ্ঠানের নাম মিনার্ভা মিডিয়া লিমিটেড। ঠিকানা-১৪৩ নম্বর সড়ক, গুলশান-১।

জানতে চাইলে আরিফুর রহমান বলেন, কাগজপত্র-সংক্রান্ত কিছু কাজ এখনো বাকি আছে। আশা করছেন, আগামী বছর সম্প্রচারে যেতে পারবেন। কীভাবে বিনিয়োগের অর্থের ব্যবস্থা করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর সঙ্গে আরও বিনিয়োগকারী আছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই টিভির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকছেন এক অভিজ্ঞ সাংবাদিক, যিনি বর্তমানে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের শীর্ষ পদে দায়িত্বে আছেন। তিনিই মূলত নতুন টিভি সাজানোর কাজটি করছেন।

দুটি টিভি চ্যানেলের পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকার একটি ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিভিশনের (আইপি টিভি) অনুমোদনও দিয়েছে। অনুমোদন পাওয়া আইপি টিভির নাম চেঞ্জ টিভি প্রেস। এর প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক আমিরুল মোমেনীন। 

বেসরকারি খাতে টেলিভিশন চ্যানেল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় ১৯৯৮ সালে। ওই বছর বেসরকারি মালিকানায় টেলিভিশন চ্যানেল স্থাপন ও পরিচালনার নীতিমালা প্রকাশ করা হয়। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার তিনটি টেলিভিশনের অনুমোদন দেয়। বিএনপি–জামায়াত জোট সরকারের সময় ১০টি টেলিভিশন অনুমোদন পায়।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ১০টি চ্যানেলকে লাইসেন্স দেওয়া হয়। পরের বছর ফেব্রুয়ারিতে আরও দুটি লাইসেন্স দেওয়া হয়। ২০১১ সালের জুনে একটি, অক্টোবরে আরেকটি এবং ওই বছরের ডিসেম্বরে আরও একটি টেলিভিশনের লাইসেন্স দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে ১৫টি চ্যানেলের লাইসেন্স দেওয়া হয়।
 
মতিউর রহমান চৌধুরী নকশা: পদ্মা ট্রিবিউন
 
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী  বলেন, 'এই সরকার আসার পর আমাদের আশা ছিল, সব সিদ্ধান্ত হবে নিয়ম–নীতির মধ্যে থেকে। কিন্তু দেখছি, একের পর এক সিদ্ধান্ত আগের মতোই হচ্ছে। টেলিভিশন অনুমোদনের ক্ষেত্রেও তাই। এখন দুটি টিভির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, আরও হয়তো দেওয়া হবে। প্রশ্ন হলো কোন নীতিতে? এখন তো নীতি নেই, নীতি তো এখনো করা হয়নি। আমরা আশা করেছিলাম, অন্তর্বর্তী সরকার এমন সিদ্ধান্ত নেবে, যেগুলো নিয়ে বিতর্ক হবে না।' 

মতিউর রহমান চৌধুরী আরও বলেন, 'এ মুহূর্তে বেশির ভাগ টেলিভিশন চ্যানেলের অবস্থাই খারাপ। অনেক টিভিতে নিয়মিত বেতন দেওয়া যাচ্ছে না, কোথাও কোথাও কর্মী ছাঁটাই হচ্ছে। বিজ্ঞাপনের বাজারও ছোট হয়ে আসছে। নতুন টিভি অনুমোদন দেওয়ার সময় এসব বিষয় ভাবা হয়েছে কি না, তা জানি না।' 

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, 'আমরা এই সরকারের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করেছিলাম। কিন্তু সেটা তো হলো না। আগের মতোই মুখ দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। তাহলে পরিবর্তনটা কোথায়?' 

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন