শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আগুন নিয়ন্ত্রণে, সচল শাহজালাল বিমানবন্দর

শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে লাগা আগুন ৭ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে আসে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

সাত ঘণ্টা চেষ্টার পর ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি করা পণ্যের মজুত স্থানের (কার্গো ভিলেজ) আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এরপর আবার উড়োজাহাজ ওঠানামাও শুরু হয়েছে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় শনিবার রাত ৯টার পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

মাইকিং করে উৎসুক জনতাকে সরে যেতে বলা হচ্ছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

আজ বেলা সোয়া ২টার দিকে আগুন লাগার পর থেকে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করে। ফায়ার সার্ভিস জানায়, রাত ৯টা ১৮ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তাদের ভাষায়, আগুন ছড়ানো বন্ধ হলে বলা হয় ‘নিয়ন্ত্রণে’, আর পুরোপুরি নেভানো হলে বলা হয় ‘নির্বাপণ’।

আগুন লাগার পরপরই বিমানবন্দরে সব ধরনের উড়োজাহাজ ওঠানামা বন্ধ হয়ে যায়। রাত ৯টার পর থেকে ধীরে ধীরে ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানায়, রাত ৯টার পর দুবাই থেকে আসা একটি ফ্লাইট শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে।

আগুনে ধোঁয়ার কুণ্ডলী | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

সন্ধ্যার পর অগ্নিকাণ্ডস্থল পরিদর্শনে গিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যত দ্রুত পারি এয়ারপোর্ট চালু করব। কারণ, এখন বিমান ওঠানামা বন্ধ আছে। চেষ্টা করছি আজ রাতের মধ্যে ফ্লাইট চালু করতে।’

এই ঘটনায় কেউ নিহত হননি। তবে আগুন নেভাতে গিয়ে কয়েকজন আনসার সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।

অন্তর্বর্তী সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডে নাশকতা বা অগ্নিসংযোগের কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, দুপুর আড়াইটার দিকে আগুন লাগার খবর পেয়ে প্রথমে কয়েকটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। আগুন ছড়িয়ে পড়লে ইউনিটের সংখ্যা বাড়তে থাকে, রাত নাগাদ তা দাঁড়ায় ৩৭টিতে।

বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালকের মুখপাত্র মো. মাসুদুল হাসান মাসুদ জানান, কার্গো ভিলেজে আগুন লাগার পর উড়োজাহাজ ওঠানামা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়।

আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে মূলত আমদানিকৃত পণ্য রাখা হয়। আগুন লাগার পর দূর থেকেও ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যায়। সেখানে উৎসুক জনতার ভিড় জমলে বিমানবাহিনী মাইকিং করে সবাইকে সরে যেতে অনুরোধ করে।

ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনীর দুটি ফায়ার ইউনিট, নৌবাহিনী, দুই প্লাটুন বিজিবি ও আনসার সদস্যরাও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

কার্গো ভিলেজটি বিমানবন্দরের পোস্ট অফিস ও হ্যাঙ্গারের মাঝামাঝি স্থানে, ৮ নম্বর গেটের পাশে অবস্থিত, যেটি হ্যাঙ্গার গেট নামে পরিচিত। আগুন লাগে আমদানি কার্গো কমপ্লেক্স ভবনের উত্তর দিকে, ৩ নম্বর গেটের পাশে।

ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনাল থেকে কার্গো ভিলেজ টার্মিনালে যাওয়ার পথটিতে উৎসুক জনতার ভিড় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

উড়োজাহাজ থেকে পণ্য ওঠানো–নামানোর কাজে থাকা ভয়েজার এভিয়েশনের গাড়িচালক মো. রাসেল মোল্লা জানান, আগুন লাগার সময় তাঁর গাড়িটি কমপ্লেক্সের মাত্র ১০০ মিটার দূরে ছিল। তিনি দ্রুত গাড়ি সরিয়ে নেন এবং ভেতরের লোকজনকে বের করে দেওয়া হয়।

ফায়ার সার্ভিসের ৩৬টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করে। তাদের সঙ্গে যোগ দেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীও | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে সাধারণত হালকা যন্ত্রপাতি, পচনশীল পণ্য ও ইলেকট্রনিক দ্রব্য আমদানি করা হয়।

আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো জানা যায়নি। তবে আমদানিকারকেরা বড় আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।

আকাশপথে পণ্য পরিবহনকারী আরএমকে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামান ইবনে আমিন সোহাইল বলেন, ‘এই ঘটনায় আমদানিকারকদের বড় ক্ষতি হয়ে গেল।’

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার পর বোঝা যাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও কবে নাগাদ কার্গো ভিলেজ আবার চালু করা যাবে।

বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে শিগগিরই তদন্ত শুরু করা হবে। অগ্নিকাণ্ডের উৎস শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।’

বেলা আড়াইটার দিকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগে। সন্ধ্যা, তখনো আগুন জ্বলছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন