ইরাকে মালিকের হাতে তিন টুকরা হলেন বাংলাদেশি
![]() |
খুন হওয়া আজাদ খান | ছবি: সংগৃহীত |
পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে প্রায় চার মাস আগে ইরাকে গিয়েছিলেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌর এলাকার পোশাক ব্যবসায়ী আজাদ আলী খান (৪৭)। দালালের মাধ্যমে ইরাকে গিয়ে কাজ না পেয়ে বেকার সময় কাটাচ্ছিলেন। পরে একটি বাসায় কাজ নিলেও বেতন নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় তাঁকে হত্যা করেন বাড়ির মালিক।
আজাদ আলী গোয়ালন্দ পৌরসভার কুমড়াকান্দি গ্রামের প্রয়াত ইয়াজদ্দিন খানের ছেলে। গ্রামের বাড়ি গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের হোসেন মণ্ডলপাড়ায়। কয়েক দিন আগে খুন হলেও বৃহস্পতিবার তাঁর নিহতের খবর পান স্বজনেরা। তাঁর সংসারে বৃদ্ধা মা, স্ত্রী শারমিন বেগমসহ দুই ছেলেমেয়ে আছে।
আজাদের স্বজনেরা জানান, আজাদ দৌলতদিয়া ঘাট বাজারে টেইলার্সের দোকান চালাতেন। কিন্তু তা দিয়ে সংসার চলছিল না। পরে চাচাতো ভাই ইরাকপ্রবাসী বাবুল খানের মাধ্যমে ৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা খরচ করে গত ২৪ জুন ইরাকে পাড়ি দেন। কথা ছিল ইরাকে নিয়ে তাঁকে ভালো বেতনের কাজ দেওয়া হবে। কিন্তু ইরাকের রাজধানী বাগদাদ শহরের কাজুমিয়াতে পৌঁছানোর পর তাঁকে একটি হোটেলে রেখে চলে যান বাবুল খান। সেখানে কয়েক দিন থাকার পর একটি বাসায় কাজ নেন আজাদ আলী। সেখানে তিন মাসের বেশি সময় কাজ করার পরও বেতন না দেওয়ায় বাড়ির মালিকের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয়। এ নিয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে তাঁকে হত্যা করেন বাড়ির মালিক। লাশ পাশের একটি নালায় ফেলে দেওয়া হয়। ছয় দিন পর বৃহস্পতিবার দুর্গন্ধ পেয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নালায় খণ্ডিত লাশ দেখে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর হত্যাকারীকে শনাক্তের চেষ্টা চালান। বিপদ বুঝতে পেরে বাড়ির মালিক নিজেই থানায় আত্মসমর্পণ করে আজাদকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
![]() |
পরিবারের অভাব ঘোচাতে ইরাকে গিয়ে খুন হয়েছেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের আজাদ খান। বৃহস্পতিবার রাতে এ খবর শোনার পর থেকে পরিবারে মাতম চলছে। শুক্রবার সকালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
এদিকে আজাদের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে পুরো পরিবারে মাতম চলছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে আজাদের স্ত্রী শারমিন বেগম বলেন, ১১ সেপ্টেম্বর রাতে সর্বশেষ তাঁর (আজাদ) সঙ্গে কথা হয়। সেখানে তিনি ভালো নেই বলে জানান। নেটওয়ার্কের সমস্যা বলে ফোন রেখে দেন। পরদিন ফোনে কয়েকবার চেষ্টা করে বন্ধ পাওয়ায় কথা বলতে পারেননি। এরপর আজাদের চাচাতো ভাই বাবুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনিও ফোন না ধরায় দুশ্চিন্তায় পড়ে যান।
শারমিন বেগম বলেন, ‘২৪ সেপ্টেম্বর চার মাস পূর্ণ হবে। অভাবের মধ্যে ধারদেনা করে ৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা দিয়ে তাঁকে ইরাক পাঠাই। ইরাকে নেওয়ার পর বাবুল তাঁকে ফেলে রেখে চলে যায়। কাজ করতে না পারায় কোনো টাকাপয়সা পাঠাতে পারতেন না। গত চার মাসে মাত্র ৬০ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। আমি এখন সন্তানদের নিয়ে কীভাবে চলব। এত ধারদেনা কীভাবে শোধ করব? আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।’
আজাদের শ্যালক আনোয়ার হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার রাত দুইটার দিকে তাঁর মুঠোফোনে বাবুল ইরাক থেকে জানান, কফিলের সঙ্গে কাজের বেতন নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় শুক্রবার আজাদকে তিন টুকরো করে হত্যার পর লাশ নালায় ফেলে দেওয়া হয়। দুর্গন্ধ পেয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা লাশ দেখে পুলিশকে জানালে পুলিশ খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে। পরে বাড়ির মালিক নিজেই থানায় আত্মসমর্পণ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা কী করব কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। খবর দেওয়ার পর থেকে বাবুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছি। তাঁকেও ঠিকমতো পাচ্ছি না।’
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন