{getBlock} $results={3} $label={ছবি} $type={headermagazine}

রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত গাছ লুট

এ বিষয়ে জানতে প্রকল্প পরিচালক ও উপাচার্য জাওয়াদুল হককে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
প্রকাশঃ
অ+ অ-

কাটা গাছ ও গাছের গুঁড়ি পড়ে আছে। সম্প্রতি রাজশাহী শহর লাগোয়া সিলিন্দা মৌজায় এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের জন্য অধিগ্রহণ করা ২০৫ বিঘা জমি থেকে ১০ মাস ধরে অবৈধভাবে একটি, দুটি করে অনেক গাছ কেটে নেওয়া হচ্ছে। সেখানে গাছ কাটার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। যাতে শ্রমিকেরা জানাচ্ছেন, তাঁরা ‘হাফিজ ভাই’–এর হয়ে গাছ কাটছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই হাফিজ ভাই হলেন হাফিজুল ইসলাম। রাজশাহী শহর লাগোয়া সিলিন্দা মৌজায় রাজশাহী মেডিকেলের স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য যে ২০৫ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, তার এক কোণে হাফিজুল ইসলামের একটি খামার ছিল। তাঁর বাড়ি রাজশাহী নগরের তেরখাদিয়া এলাকায়।

এদিকে সেখানে গাছ কাটার অভিযোগে বালু ভরাটের কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হোসাইন কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেনকে ১৩ আগস্ট কারণ দর্শানোর চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার আনোয়ার হোসেন লিখিত জবাব দিয়েছেন। এতে তিনি বলেছেন, গাছ কাটার সঙ্গে তাঁরা কোনোভাবেই জড়িত নন। তাঁর অভিযোগ, গাছ কাটার সঙ্গে হাফিজুল ইসলাম জড়িত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, অধিগ্রহণ করা জমিতে গাছ ছিল প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার। গাছ বিক্রির জন্য নাম্বারিং করা হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো দরপত্র হয়নি, কাউকে কার্যাদেশও দেওয়া হয়নি। ১০ মাস ধরে একটি, দুটি করে অনেক গাছ কেটে লুট করা হচ্ছে। গত এক মাসে সবচেয়ে বেশি গাছ কাটা হয়েছে। ইতিমধ্যে আম ও মেহগনির ছোট–বড় ৭০০ গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। এই গাছগুলোর বয়স ১০ বছরের কাছাকাছি। তবে স্থানীয় লোকজনের হিসাব অনুযায়ী আরও বেশি গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, গাছ কাটছেন একদল শ্রমিক। ভিডিও করতে করতে গিয়ে একজন প্রশ্ন করছেন, ‘ভাই, কার লোক আপনারা?’ শ্রমিকদের আবার প্রশ্ন করেন, ‘কার লোক?’ তখন এক শ্রমিক আরেক শ্রমিককে বলেন, ‘কিরে কথা বুইলছিস না ক্যা?’ তখন এক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা তো কার লোক বুইলবোই, আপনারা?’ এবার ভিডিও করা ব্যক্তিটি বলেন, ‘আপনাকে আগে কি বুলেছি, সেইডা বলেন।’ এবার ওই শ্রমিক বলেন, ‘আমরা হচ্ছি হাফিজ ভাইয়ের (লোক), হাজি সাহেব।’ ভিডিও করা ব্যক্তি আবার প্রশ্ন করেন, ‘হাফিজ ভাইয়ের? হাজি সাহেব?’ শ্রমিকেরা তা আবার নিশ্চিত করেন। ‘হাফিজ ভাই বুইলাছে নাকি হাফিজ ভাইয়ের নির্দেশেই কাজ করছেন’ শ্রমিকদের আবার প্রশ্ন করেন ভিডিও করা ব্যক্তি। শ্রমিকদের জবাব, ‘জি, জি।’

এ বিষয়ে জানতে আজ শুক্রবার হাফিজুল ইসলামের যোগাযোগ করা হলেও তিনি বলেন, ‘ওই ভিডিও দেখেছি। শ্রমিকেরা কেন আমার নাম বলল, বুঝতে পারছি না। গাছ কাটার ঘটনায় ঠিকাদারকে নোটিশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।’ এর আগে গত বুধবার তিনি বলেছিলেন, ‘কে গাছ কেটেছে আমি বলতে পারব না। আমার এখানে ফার্ম ছিল, অধিগ্রহণ করে নিয়েছে। তারপর এখানে আমার কাজ শেষ।’

গাছ কাটার অভিযোগ তুলে ক্যাম্পাসে বালু ভরাটের কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হোসাইন কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেনকে ১৩ আগস্ট কারণ দর্শানোর চিঠি দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ক্যাম্পাস স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) অধ্যাপক জাওয়াদুল হক। এতে লিখিতভাবে সাত দিনের মধ্যে জবাব দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

আনোয়ার হোসেন গতকাল প্রকল্প পরিচালকের কাছে লিখিতভাবে জবাব দেন। তিনি লিখেছেন, ‘হোসাইন কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড কর্তৃক অনুমতিহীনভাবে গাছ কর্তনের অভিযোগ তোলা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ও দৃঢ়ভাবে জানাচ্ছি যে এ ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। আমরা গাছ কর্তন কিংবা পরিবেশবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে কখনোই জড়িত ছিলাম না এবং ভবিষ্যতেও থাকব না। অসত্য তথ্যের কারণে আমাদের প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়া অনভিপ্রেত। এ ধরনের ভুল তথ্যের কারণে প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট না করে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক। আমরা সর্বদা আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি।’

হোসাইন কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপক দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ করেন, ‘হাফিজুল মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যারদের নির্দেশে বিভিন্ন কাজ করেন। তিনি আমগাছ নিয়েছেন, পুকুর নিয়েছেন। তা ছাড়া তিনি মূলত পুরো এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত লোক। ওই ক্যাম্পাসে যদি কিছু করতে হয় তাঁর অনুমতি লাগবে; কিছু নিয়ে যেতে হলেও।’

এ বিষয়ে জানতে প্রকল্প পরিচালক ও উপাচার্য জাওয়াদুল হককে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। উপপ্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী সিরাজুম মুনীর বলেন, ‘হাফিজুলকে আমি চিনি। সে অতটা পাওয়ারফুল নয় যে গাছ কেটে নিয়ে যাবে। আমি তো গিয়েছিলাম, আমার কাছে মনে হয়েছে যে ঠিকাদারের লোকজনই গাছ কেটেছেন। তাই তাঁদের শোকজ করা হয়। ঘটনা ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগও একেবারেই সঠিক নয়।’

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন