বৃষ্টির বাগড়া, ‘সরবরাহ কমে’ সবজির বাজার চড়া
![]() |
| রাজধানীর সাততলা কাঁচাবাজারের একটির সবিজর দোকান | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার সকাল থেকেই একনাগাড়ে বৃষ্টি, থামার নাম নেই, এর মধ্যেই ভিজে ভিজে ভ্যানের সবজি বিক্রি করছিলেন ঢাকার মগবাজারের মীরবাগের সবজি ব্যবসায়ী শাহ আলম।
কাছে গিয়ে তার ভ্যানের চাল কুমড়া, পটল, চিচিঙ্গা, শসা আর কাঁচামরিচের দাম জিজ্ঞাসার পর বললেন, 'বৃষ্টির কারণে সাপ্লাই কম, আমাদের কিনতেই বেশি পড়ে গেছে। ফলে বেচতেও হচ্ছে বেশিতে।'
সপ্তাহের ব্যবধানে শুক্রবার সবজিভেদে দাম ১০ থেকে ২০ টাকা বাড়ার তথ্য দিলেন এ সবজি ব্যবসায়ী।
রাজধানীর সাততলা ও মহাখালী কাঁচাবাজার ঘুরেও দামের এমন চিত্র দেখা গেছে। টানা বৃষ্টির কারণে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বাড়া কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে শুক্রবার বেগুন ও বরবটি প্রকারভেদে কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এদিন ৬০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।
এর বাইরে বাজারে ধুন্দল ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, কচুর লতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা, কচুমুখী ও ঝিঙা ৬০ টাকা, পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
এক সপ্তাহ আগেও মীরবাগের সবজি ব্যবসায়ী শাহআলম কাঁচা মরিচ ১৬০ টাকা দরে বিক্রি করলেও শুক্রবার দাম চাইছিলেন ২০০ টাকা কেজি। তবে সাততলা ও মহাখালী কাঁচাবাজারে ২০০ থেকে ২৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বাজারে প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, টমেটো কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১২০ টাকা, গাজর ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, দেশি শসা ৮০ থেকে ১০০ টাকা ও হাইব্রিড শসা ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
সাততলা বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. জয়নাল বলেন, 'টানা বৃষ্টিতে সবজি নষ্ট হয়েছে অনেক জায়গায়। বাজারে সরবরাহ কিছুটা কম। তাই সবজির দাম বাড়তি।'
বাজারে লেবুর হালি প্রকারভেদে ২০ থেকে ৪০ টাকা, ধনেপাতার কেজি ৩০০ টাকা, কাঁচকলার হালি ৩০ টাকা, চাল কুমড়া ৪০ থেকে৫০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা ও মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
দুই সপ্তাহ ধরে চড়া শাকের দাম। এর মধ্যে বৃষ্টির কারণে সরবরাহ কমায় দামে আরও প্রভাব পড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে শাকের আঁটির দাম বেড়ে গেছে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত। শুক্রবার ৫ টাকা বেড়ে লালশাকের আঁটি ২০ টাকা, লাউয়ের শাক ১০ টাকা বেড়ে ৪০-৫০ টাকা, কলমি শাকের আঁটি ২০ টাকা, পুঁইশাক ৩০-৪০ টাকা ও ডাটা শাকের আঁটি ১৫-২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মহাখালী কাঁচাবাজারের বিক্রেতা রুবেল হোসেন বলেন, 'কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে বাজারে শাকসবজির আমদানি কম। পরিবহন খরচও বেশি হয় বৃষ্টির কারণে। সে কারণেই দাম বেড়েছে।'
মুরগির দামও বাড়তি
বাজারে গরু-খাসির মাংস আগের দামে বিক্রি হলেও মুরগির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত।
সোনালি মুরগি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা এবং সোনালি হাইব্রিড মুরগি ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
লাল লেয়ার মুরগি ১০ টাকা বেড়ে ২৯০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৮০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি আগের সপ্তাহের মতই ১৬০ টাকা ও দেশি মুরগি ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সাততলা বাজারের রাজিব-মুক্তা পোল্ট্রি দোকানের বিক্রেতা রাজিব হোসেন বলেন, 'সোনালি আর লাল লেয়ারের দামটা কিছুটা বেড়েছে। দুয়েকদিন পর আবারও কমে যেতে পারে। মুরগির দাম তো ওঠানামার মধ্যেই থাকে।'
বাজারে গরুর মাংস আগের মতই কেজি প্রতি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা ও খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, হাঁসের ডিম ২২০ টাকা, দেশি মুরগির ডিমের হালি চাওয়া হচ্ছে ৯০ টাকা।
পেঁয়াজও চড়া
সপ্তাহের ব্যবধানে বাজাগুলোতে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ১০ টাকা বাড়ার তথ্য দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যদিও আগের সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়।
এ ছাড়া আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা, আদা রকমভেদে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, দেশি রসুন ১৩০ টাকা, ভারতীয় রসুন ১৮০ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা ও খেসারির ডাল ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে মিনিকেট চাল প্রকারভেদে ৮২ থেকে ৯২ টাকা, নাজিরশাইল ৮৪ থেকে ৯০ টাকা, স্বর্ণা ৫৫ টাকা ও ২৮ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি দরে।

Comments
Comments