প্রতিনিধি রাজশাহী
![]() |
নিহত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম |
প্রশিক্ষণের সব ধাপ শেষে তৌকির ইসলাম প্রথমবারের মতো একা প্রশিক্ষণ বিমান চালাবেন—এ খবরে পরিবারের সদস্যরা সোমবার সকাল থেকেই আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত ছিলেন। কিন্তু দুপুরের পর সেই বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পান তাঁরা। সঙ্গে সঙ্গে থেমে যায় সব উচ্ছ্বাস। বিকেলে রাজশাহী নগরের উপশহর এলাকায় তৌকিরদের বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালে কিছুক্ষণ পরপর কান্নার রোল ভেসে আসতে শোনা যায়।
![]() |
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের পরিবারের সদস্যদের বিমানে করে রাজশাহী থেকে ঢাকায় নেওয়া হয়। আজ সোমবার বিকেলে রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান সোমবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়ে এ পর্যন্ত বৈমানিকসহ ১৯ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) হতাহতের এ সংখ্যা জানিয়েছে।
নিহত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের ডাকনাম সাগর। তাঁদের পরিবার রাজশাহী নগরের উপশহর ৩ নম্বর সেক্টরের আশ্রয় ভবন নামে একটি বাসায় ভাড়া থাকে। তাঁর বাবা তহুরুল ইসলাম, মা সালেহা খাতুন, বোন সৃষ্টি ও ভগ্নিপতি সেই বাড়িতে থাকতেন। বাবা আমদানি–রপ্তানির ব্যবসা করেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট এলাকায়।
![]() |
নিহত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের বাড়ির সামনে মানুষের ভিড়। আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজশাহী নগরের উপশহর এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত পরিবারের সদস্যরা জানতেন না যে তৌকির ইসলাম মারা গেছেন। সে সময় জানতেন, তৌকির ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন।
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর চিকিৎসাধীন তৌকিরকে দেখতে পরিবারের সদস্যরা বিমানযোগে ঢাকায় যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। তখন বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করা হয়। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তৌকির ইসলামের বাবা, মা, বোন ও ভগ্নিপতিকে বাড়ি থেকে রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁরা বিমানবাহিনীর বিশেষ হেলিকপ্টারে ঢাকায় রওনা হন।
তৌকির ইসলামের মৃত্যুর খবরের পর রাজশাহী নগরের উপশহর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষ ভিড় করছেন। সবাই স্বজনদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। এখনো বাসায় তৌকির ইসলামের নানা, নানি ও খালা রয়েছেন। কিছুক্ষণ পরপর কান্নার রোল ভেতর থেকে ভেসে আসছে। মামা মোতাকাব্বির বাইরে দাঁড়িয়ে কৌতূহলী মানুষ ও সাংবাদিকদের পরিবারের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করছেন।
মোতাকাব্বির বলেন, তৌকির ইসলাম রাজশাহীর ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। পরে পাবনা ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হন। ২০১৭ সালে তিনি চাকরিতে যোগ দেন। এক বছর আগে তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকাকে বিয়ে করেন।
মোতাকাব্বির আরও বলেন, তৌকিরের মা–বাবা ও বোন ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে তাঁর মৃত্যুর খবর জানতেন না। পরিবারের সদস্যরা জানতেন, সাগর জীবিত এবং চিকিৎসাধীন।
আইএসপিআর বলেছে, ‘দুর্ঘটনা মোকাবিলায় এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের দোতলা একটি ভবনে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়েছে।’