প্রতিনিধি ফেনী

দোকানে ঢুকে মো. সুমনকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মো. সায়েম, তাঁর ভাতিজা মো. ফয়সাল। ইয়াসির আরাফাত রুবেল নামে একটি ফেসবুক আইডিতে শেয়ার করা | ভিডিও থেকে নেওয়া ছবি

ফেনীর পরশুরামে পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে এক দোকানিকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় যুবদলের বহিষ্কৃত এক নেতার বিরুদ্ধে। গতকাল শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। তবে ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার রাতে।

অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম মো. সায়েম। তিনি পরশুরাম পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন। মারধরের ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর দলের স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে গত মাসেই সায়েমকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

মারধরের শিকার দোকানির নাম মো. সুমন হোসেন। পরশুরাম উত্তর বাজারে ‘সিয়াম স্টোর’ নামে তাঁর একটি দোকান রয়েছে। সেখানে জাল, কৃষিযন্ত্রসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করা হয়। তাঁর বাড়ি পরশুরাম পৌরসভার বেড়াবাড়িয়া গ্রামে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ৫ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, দোকানে ঢুকে মো. সুমনকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মো. সায়েম, তাঁর ভাতিজা মো. ফয়সালসহ কয়েকজন। একপর্যায়ে ওই দোকানির পরনের টি-শার্টও টেনে খুলে ফেলেন তাঁরা। দোকানিকে এ সময় কিল–ঘুষি ও চড় দিতেও দেখা যায় তাঁদের।

জানতে চাইলে দোকানি মো. সুমন জানান, গত বছর বন্যার সময় তাঁর দোকান থেকে প্রায় ১৫ হাজার টাকা মূল্যের ত্রিপল নিয়ে যান মো. সায়েম। ১০ হাজার টাকা পরে পরিশোধ করলেও দীর্ঘদিনেও বাকি ৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেননি তিনি। পাওনা টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে বিষয়টি তিনি সায়েমের স্বজন ও যুবদলের কয়েকজন নেতাকে অবহিত করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে সায়েম মারধর করেছেন। মারধরের শিকার হয়ে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি।

সুমনের ভাই মো. ইব্রাহিম বলেন, গত বুধবারের হামলার ঘটনার পর থানায় যেন কোনো অভিযোগ না করা হয় সায়েম বাড়িতে গিয়ে সেই হুমকিও দিয়েছেন। বর্তমানে তাঁর ভাই সুমন ভয়ে দোকানে বসছেন না। হামলার ঘটনার বিষয়টি স্থানীয় বিএনপির নেতাদের জানানো হয়েছে। তাঁরা বিষয়টি সালিসের মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে মো. সায়েমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। জানতে চাইলে পরশুরাম পৌর যুবদলের আহ্বায়ক মোস্তফা খোকন বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে গত ২৫ জুন ওয়ার্ড যুবদলের আহ্বায়ক পদে থাকা মোহাম্মদ সায়েমকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তাঁর অপকর্মের দায় দল নেবে না।

যুবদলের স্থানীয় একাধিক নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৫ জুন সায়েমকে বহিষ্কারের বিষয়টি তাঁরা জানতেন না। দোকানিকে মারধরের ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয়ে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় একাধিক গণমাধ্যমকর্মীও জানিয়েছেন, সায়েমকে বহিষ্কারের কোনো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি তাঁরা পাননি।

পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল হাকিম বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে ওই দোকানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। বকেয়া টাকা বাজার কমিটির উদ্যোগে এরই মধ্যে আদায় হয়েছে। তাই ওই দোকানি থানায় কোনো অভিযোগ দিচ্ছেন না। এরপরও ওই দোকানিকে যেহেতু হুমকি দেওয়া হয়েছে, সে কারণে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি করে রাখা হয়েছে।