প্রতিনিধি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহীতে রেলওয়ে স্টেশনের কক্ষ দখল করে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন মহানগর বিএনপির নেতা একরাম আলী। সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রেলওয়ে স্টেসনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

রাজশাহী মহানগর বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রেলস্টেশনের একটি কক্ষ দখলের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি রেলস্টেশনটির একটি পরিত্যক্ত কক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও রং করে চেয়ার-টেবিল বসিয়ে ‘রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড’ পরিচালনা করছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য অনুযায়ী, কক্ষটি দখলে নেতৃত্ব দেওয়া নেতার নাম মো. একরাম আলী। তিনি মহানগর বিএনপির মতিহার থানার সভাপতি। দিনের বেলা কক্ষটি তালাবদ্ধ থাকলেও সন্ধ্যা বা রাতের দিকে মাসখানেক ধরে লোকজন নিয়ে তিনি সেখানে বসেন।

রেলস্টেশনের কক্ষ দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে একরাম আলী বলেন, ‘কেন দখল করতে যাব আমি, কী দরকার? জরাজীর্ণ অবস্থায় অনেক দিন ধরে সেটি পড়ে ছিল। সেখানে মাদক সেবন ও অসামাজিক কাজ হয়। আমি খুলে সেটি পরিষ্কার করেছি। আমি দখল করছি না, জনগণের স্বার্থে সেটি জনগণ ব্যবহার করছে। সবাই বসে চা খায়। এখানে দখল করার কোনো বিষয় নেই।’ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে একরাম বলেন, ‘কার অনুমতি লিব রে ভাই। সেটি দুর্বস্থায় পড়ে ছিল। সরকারি জায়গা সরকার লিয়ে লিবে, আমার অসুবিধা কি?’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রেলস্টেশনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের উত্তর পাশে স্টেশন বাজার এলাকায় অবস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলাচলের সুবিধার্থে এ স্টেশন চালু করেছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। তবে দীর্ঘদিন ধরেই স্টেশনটি প্রায় অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। কিছু লোকাল ট্রেন এখানে দাঁড়ায়। বেশ কয়েকজন ছিন্নমূল মানুষ স্টেশনে রাত কাটান। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কক্ষটি দখলে নিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। তবে মাসখানেক আগে থেকে ওই কক্ষে একরাম আলী ও তাঁর অনুসারীরা নিয়মিত বসছেন। সেটি রঙিন রং করে চেয়ার-টেবিল বসিয়ে ‘পার্টি অফিস’ বানিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

সরেজমিনেও এর সত্যতা পাওয়া যায়। সেখানে দেখা যায়, কক্ষটিতে একটি টেবিল বসানো আছে। টেবিলটির চারপাশে চেয়ার রয়েছে। সেখানে মহানগর মতিহার থানা বিএনপির সভাপতি একরাম আলী একটি চেয়ারে বসে আছেন। তাঁর অনুসারী অন্তত ৮ থেকে ১০ জনকে সেই কক্ষে চেয়ারে বসে ও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে ওই কক্ষের কোনো সাইনবোর্ড বা ব্যানার চোখে পড়েনি। ভবনে বিএনপি ও জামায়াত লেখা–সংবলিত একাধিক দেয়াললিখন পাওয়া গেছে।

মুখ খুলতে চান না স্থানীয়রা

কে বা কারা রেলস্টেশনের কক্ষটি দখলে নিয়েছেন, এ সম্পর্কে জানতে মাস দুয়েক আগে অন্তত তিন দিন সরেজমিন যান এই প্রতিবেদক। সেখানকার অন্তত আটজন দোকানি ও স্থানীয় বাসিন্দাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তাঁরা কেউ-ই কথা বলতে রাজি হননি। বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন তাঁরা।

মাসখানেক ধরে দখলে নেওয়া কক্ষটি সন্ধ্যা বা রাতের দিকে মাঝেমধ্যে খোলা হয়। খবর পেয়ে এই প্রতিবেদক তিন দিন রাতে স্টেশন বাজার এলাকায় যান। এর মধ্যে দুই দিন কক্ষটি খোলা পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্টেশন বাজারের এক চায়ের দোকানি বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পর কক্ষটি দখলে নেওয়া হয়েছিল। এর পর থেকে সেটি তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিল। তবে সম্প্রতি রং করে চেয়ার-টেবিল বসিয়ে সেখানে নিয়মিত বসছেন তাঁরা (বিএনপির লোকজন)। শুনেছি, বসার জায়গা হিসেবে কক্ষটি নিয়েছেন তাঁরা। একরাম ভাই এই কক্ষ দখলে নেতৃত্ব দিয়েছেন।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘আমি নতুন জয়েন করেছি। বিষয়টি সর্ম্পকে আমি অবগত নই। আপনার মাধ্যমেই প্রথম জানলাম। আমি খোঁজখবর নিয়ে যদি এমন তথ্যের সত্যতা পাই, তাহলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’