প্রতিনিধি নাটোর
![]() |
বাগানটিকে পরিকল্পনামাফিক সাজানো হয়েছে। বিভিন্ন প্রজাতির গাছগুলো আলাদা আলাদা অবস্থানে রেখে সেঁটে দেওয়া হয়েছে বৈজ্ঞানিক নাম ও নির্দেশনা। নাটোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ছাদে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠতেই চোখে পড়বে লাল-সবুজের বাহারি গালিচা। এর আশপাশে বর্ণিল ফুলের সমারোহ। এ ছাড়া বেড়ে উঠেছে সারি সারি জলপাই, সফেদা, কতবেল, আম, জাম, পিটুনিয়া, পীতরাজসহ নানা জাতের ফুল-ফল আর ঔষধি গাছগাছড়া। প্রতিটি গাছ লাগানো হয়েছে একেকটি ড্রামে। পাশে কাঠিতে সাঁটানো আছে গাছগুলোর বৈজ্ঞানিক নামফলক। পুরো বাগানটির একটি নামও আছে, সেটি ‘পুষ্পমঞ্জরি’।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা ২০২৫ এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০২৫-এর অনুষ্ঠানে এই ছাদবাগানকে জাতীয় পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
বাগানটির অবস্থান নাটোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পশ্চিম পাশের বর্ধিত অংশের ছাদে। জেলায় পরিচিতি পেলেও এবার বাগানটি নজর কেড়েছে সারা দেশের মানুষের। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বাগানটি পেয়েছে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা। ২৫ জুন রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সেই পুরস্কার গ্রহণ করেন নাটোরের জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন।
ঐতিহ্যবাহী নাটোরকে নান্দনিক নাটোর হিসেবে গড়ে তোলার বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ছাদবাগান অনন্য ভূমিকা রাখছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বাগানে আছে ৯ প্রজাতির বনজ, ৪৫ প্রজাতির ফলদ, ২১ প্রজাতির ভেষজ, ২৬ প্রজাতির শোভাবর্ধনকারী, ৭ প্রজাতির দেশীয় বিলুপ্তপ্রায়, ৭ প্রজাতির বিরল এবং ১১ প্রজাতির সবজি ও অন্যান্য গাছ। জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল ইক্ষুও এই ছাদবাগানে চাষ করা হয়েছে।
![]() |
২৫ জুন রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সেই পুরস্কার গ্রহণ করেন নাটোরের জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন | ছবি: সংগৃহীত |
শুক্রবার বিকেলে প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে দেখা যায়, বাগানের পশ্চিম পাশটা উন্মুক্ত। তবে নিচ থেকে উঠে আসা আম গাছের ডালপালা এসে ছাদবাগানের সঙ্গে মিশে গেছে। এতে বাগানের সৌন্দর্য কয়েক গুণ বেড়েছে। বাগানের গাছগুলোকে বিজ্ঞানভিত্তিক বিন্যাস করা হয়েছে। প্রতিটি গাছে যেন প্রয়োজন মতো আলো, বাতাস ও পানি পায়, তা নিশ্চিত করা হয়েছে। পুরো বাগানটিকে ফুল, ফল ও ভেষজ কর্নারে বিভক্ত করা হয়েছে।
এমন উদ্যোগের বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবুল হায়াত জানান, নাটোর এমনিতেই উত্তরা গণভবন, রানি ভবানীর রাজবাড়ি ও কাঁচাগোল্লা প্রভৃতির জন্য সুপরিচিত। এর বাইরে শহরে তেমন কোনো উদ্যান বা পার্ক নেই। বিষয়টি উপলব্ধি করেই এক যুগ আগে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গড়ে তোলা হয় ডিসি পার্ক। আয়তনে ছোট হলেও শত শত দর্শনার্থীর আগমন ঘটে সেখানে। এর পাশের ভবনের ছাদে গড়ে তোলা হয়েছে বর্ণিল ছাদবাগান।
জেলা প্রশাসক আসমা শাহীনের মতে, শুধু টাকা খরচ করলেই বাগান করা যায় না। এ জন্য রুচিশীল মানসিকতা ও নিয়মিত যত্নআত্তি লাগে। সাবেক জেলা প্রশাসক জাফর আহমেদ, শাহিনা খাতুন, শামীম আহমেদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় প্রশাসন চত্বরে সবুজ উদ্যান সৃষ্টির কাজ শুরু হয়েছিল। সর্বশেষ জেলা পরিষদের সহায়তায় এ চত্বরকে বিজ্ঞানভিত্তিক উদ্যানে রূপ দেওয়া হয়েছে। এরই ফলে নাটোর জেলা প্রশাসন এবার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে।