নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদ সরকার ছবি: সংগৃহীত

গত বছরের ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে রাজধানীর পরীবাগে সকাল ১১টার দিকে গুলিবিদ্ধ হন সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদ সরকার। চোখে গুলি লাগায় তিনি গুরুতর আহত হন। এরপর চলতি বছরের ২০ মার্চ ঢাকার একটি আদালতে তাঁর পক্ষে মামলা করা হয়।

কিন্তু কয়েক মাস পর, ১৭ জুন এমদাদ নিজেই আরেকটি মামলা করেন চট্টগ্রামের খুলশী থানায়। সেখানেও বলা হয়, তিনি ৪ আগস্ট সকাল ১১টার দিকে গুলিবিদ্ধ হন—তবে এবার ঘটনাস্থল চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট!

একই দিন, একই সময়—কিন্তু দুই ভিন্ন শহরে গুলিবিদ্ধ হওয়ার এই ঘটনাকে অনেকেই প্রশ্নের চোখে দেখছেন। আইনজীবীরাও বলছেন, এটি অবিশ্বাস্য ও অস্বাভাবিক।

ঢাকায় করা মামলায় বলা হয়, পরীবাগ এলাকায় একটি মিছিল চলাকালে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এ সময় এমদাদ গুলিবিদ্ধ হন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো সম্ভব না হওয়ায় রাতে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়।

অন্যদিকে, চট্টগ্রামের মামলায় বলা হয়, আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে তিনি নিউ মার্কেটে গুলিবিদ্ধ হন। পরদিন ৫ আগস্ট আবারও ওয়াসা মোড়ে গুলিবিদ্ধ হন।

দুই মামলার ঠিকানাও আলাদা—ঢাকায় দেওয়া ঠিকানা তোপখানা রোড, আর চট্টগ্রামে দেওয়া হয়েছে শোলকবহর, পাঁচলাইশ।

আলোচিত জুলাই যোদ্ধা সাইফুদ্দীন এজাহারে নিজেকে ঢাকার সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার আলিম (উচ্চ মাধ্যমিক) পর্যায়ের ছাত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন। জানা গেছে, তার বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার হারামিয়া ইউনিয়নের কাচিয়াপাড় গ্রামে। বাবার নাম মো. বেলাল। তিনি সরকারের গেজেটভুক্ত অতি গুরুতর আহত জুলাই যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত।

কয়েকজন আইনজীবী বলছেন, ‘কেউ যদি মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলা করেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।’

মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব জিয়া হাবিব আহসান বলেন, ‘যদি কেউ মিথ্যা মামলা করে, তাহলে ২ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। এ ছাড়া পুলিশকে মিথ্যা তথ্য দিলে ৬ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা জরিমানা হতে পারে বলেও তিনি জানান।’

জানতে চাইলে খুলশী থানার ওসি আফতাব হোসেন বলেন, ‘আইন অনুযায়ী একই ঘটনায় দুইটি মামলা হতে পারে না। আবার একই সময় ঢাকায় ও চট্টগ্রামে একই ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ হওয়া অবিশ্বাস্য। তদন্তে প্রমাণিত হলে, বাদী মিথ্যা তথ্য দিলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’  

ঢাকায় মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মুনসুর বলেন, ‘আদালত আমাদের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন চেয়েছে। আমরা এখনও প্রতিবেদন দাখিল করতে পারিনি, কারণ পীড়িতের চিকিৎসা সনদ পাওয়া যায়নি। সনদ পাওয়ার জন্য তার সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেছি, কিন্তু সনদ দেননি। পরে তার ঠিকানায় চিঠি পাঠানো হয়েছে, জবাব মেলেনি। চিকিৎসা সনদ পেলেই প্রতিবেদন দাখিল করব আদালতে।’ 

ঢাকার মামলার বাদী এম এ হাশেম রাজু বলেন, ‘সেদিন ঢাকায় এমদাদের চোখে গুলি লাগতে আমি নিজে দেখেছি। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়, কিন্তু ভর্তি না হওয়ায় আমরা চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দিই। তখন সে মামলা করতে পারেনি, তাই আমি তার পক্ষে মামলা করেছি।’

সাইফুদ্দীন এমদাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তিনি গণমাধ্যমে বলেছেন, 'আমি কাউকে হয়রানি করার জন্য মামলা করিনি। তদন্তেই সব প্রমাণ বেরিয়ে আসবে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার জুলাই ও আগস্টের আন্দোলনে নিহত-আহতের ঘটনায় শুধু ঢাকাতেই ৫০০ এর বেশি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৬ মাসে প্রায় ২ হাজার ৯৭০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী, এমপি, সরকারি কর্মকর্তা, এমনকি সেনা ও পুলিশ সদস্যরাও। জামিন পেয়েছেন ১ হাজার ৩৮ জন, যাঁদের একজন সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।