প্রতিনিধি চট্টগ্রাম
![]() |
ধসে পড়ছে বেড়িবাঁধে বসানো ব্লক। ১৬ মে বিকেলে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের আকিলপুর সৈকতের জমাদারপাড়া অংশে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া সৈকত থেকে কুমিরা ফেরিঘাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধের দৈর্ঘ্য চার কিলোমিটার। এর মধ্যে তিন কিলোমিটারে ব্লক বসানো হয়েছে। জোয়ারের আঘাতে এই বেড়িবাঁধের ১৬টি স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব স্থানে ব্লক সরে গিয়ে কিছু অংশে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত।
শুধু বেড়িবাঁধ নয়, বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট এলাকায় সিকদার খালের স্লুইসগেটও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু বালুর বস্তা দিয়ে স্লুইসগেটটি ধরে রাখা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ ও স্লুইসগেট সংস্কার করা না হলে বর্ষায় মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, বেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ ৫০০ মিটারের মতো। বেড়িবাঁধের এ অংশের স্থায়ী সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি পাস হলে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হবে।
সম্প্রতি সরেজমিনে বেড়িবাঁধ ঘুরে দেখা যায়, বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের আকিলপুর সৈকতের দক্ষিণাংশে আধা কিলোমিটারের মধ্যে তিনটি স্থানে বড় বড় গর্ত। বোয়ালিয়া কুল এলাকায়ও বেড়িবাঁধের কিছু অংশ জোয়ারের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সৈকতের জমাদার পাড়া এলাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্লক বেড়িবাঁধ। জমাদার পাড়া এলাকায় দুটি অংশে তিন মিটার প্রস্থের বেড়িবাঁধের উপরিতল এক মিটারের কম হয়ে গেছে।
জমাদার পাড়া এলাকার বাসিন্দা আবদুর রউফ বলেন, পাঁচ বছর আগে এই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। আগের বেড়িবাঁধটি বিলীন হয়ে যাওয়ায় ২০ বছর দুর্ভোগের মধ্যে কাটিয়ে এই বেড়িবাঁধ মানুষ পেয়েছেন। এখন নতুন বেড়িবাঁধটিও ক্ষতিগ্রস্ত, যেকোনো সময় ভেঙে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বর্ষা মৌসুমের কথা ভেবে এলাকার মানুষ খুবই উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন।
বাঁশবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা মো. রুবেল বলেন, বর্ষার আগে স্লুইসগেট মেরামত না করলে সাগরের লবণপানি ঢুকে এলাকার চাষাবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সন্দ্বীপে যাতায়াতের জন্য স্লুইসগেটটির পাশে সুন্দর ফেরিঘাট নির্মাণ করা হয়েছে, অথচ স্লুইসগেটটি ভাঙা। এবার বর্ষায় জোয়ারের পানি ঢুকে ফেরিঘাট সড়ক ডুবে যেতে পারে। এতে সন্দ্বীপের যাত্রীরাও ভোগান্তিতে পড়বেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী এস এম তারেক বলেন, ‘আকিলপুর এলাকায় বেড়িবাঁধে যে ব্লক বসানো হয়েছে, তা আকারে তুলনামূলক ছোট। এগুলো সাধারণত ঢেউ নেই, এমন নদী এলাকায় ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের ব্লক বঙ্গোপসাগরের ঢেউয়ের উপযোগী নয়। ঢেউয়ের চাপ সামাল দিতে হলে নতুন করে ভারী ব্লক তৈরি করে এরপর বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মাণ বা মেরামত করতে হবে।’
এস এম তারেক আরও বলেন, গত সপ্তাহে কুমিরা নৌঘাট থেকে বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬০ কোটি টাকা। চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বেড়িবাঁধের উপরিতলের প্রশস্ত হবে ছয় মিটার, যাতে ওই সড়ক দিয়ে কুমিরা ও বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাটের সরাসরি যোগাযোগ শুরু হয় এবং সন্দ্বীপগামী যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের গাড়ি যাতায়াত করতে পারে। তিনি আশা করছেন, প্রকল্পটি দ্রুত পাস হবে।
দুই ইউনিয়নের ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিলীন
এদিকে উপজেলার কুমিরা ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নের দুই স্থানে চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ঘোড়ামারা এলাকায় চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধের তিন কিলোমিটারই বিলীন। কুমিরা ইউনিয়নের আলেকদিয়া এলাকায় প্রায় এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি, বেড়িবাঁধের এসব অংশ ব্যক্তিমালিকানাধীন হওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড সংস্কার করতে পারছে না।
আলেকদিয় এলাকার বাসিন্দা সোহেল মাহমুদ বলেন, অন্তত ১০ বছর ধরে তাঁদের এলাকায় বেড়িবাঁধ বিলীন। এসব অংশে অনেক জাহাজভাঙা কারখানা রয়েছে। প্রায় সব কটি কারখানা বন্ধ। এই অংশে বিলীন হওয়া বেড়িবাঁধ জাহাজভাঙা কারখানামালিকেরা নিজেরাও নির্মাণ করছেন না, আবার পানি উন্নয়ন বোর্ডকেও নির্মাণ করতে দিচ্ছেন না। ফলে প্রতিবছর তাঁদের বাড়িঘর জোয়ারের পানিতে ডুবে যায়।
একই কথা বলেন ঘোড়ামারা এলাকার বাসিন্দা নুরুল আলম। তিনি বলেন, তিন-চার বছর আগে তাঁদের এলাকায় জিও ব্যাগ ও কিছু ব্লক বসিয়ে কোনোমতে একটি বাঁধ তৈরি করে দিয়েছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেটিও এখন বিলীন হওয়ার পথে। ফকিরহাট এলাকায় একটি জাহাজভাঙা কারখানার অংশে বেড়িবাঁধ একেবারেই বিলীন। ফলে ওই এলাকায় জেলেপাড়াসহ তিনটি গ্রামে প্রতিবছরই বর্ষায় জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী এস এম তারেক বলেন, কুমিরা ও সোনাইছড়ি এলাকায় বেড়িবাঁধ অংশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা নেই। বেড়িবাঁধের ওই অংশগুলো ব্যক্তিমালিকানাধীন। তাই বেড়িবাঁধের বিষয়ে কোনো প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করা যাচ্ছে না।