প্রতিনিধি পটুয়াখালী
![]() |
বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষে শিক্ষকদের সমাবেশ। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা পরিষদ চত্বরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও শাস্তি দেওয়ার হুমকির প্রতিবাদে সর্বস্তরের ছাত্র–জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনের পর ইউএনওর পক্ষাবলম্বন করে পাল্টা মিছিল ও সমাবেশ করেছেন স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষকেরা। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা পরিষদের পুরোনো ভবনের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়। সেখান থেকে পাবলিক মাঠ পর্যন্ত এসে ঘুরে পরিষদ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
মিছিলের স্লোগান ছিল, ‘ধরি ধরি ধরি না, ধরলে কিন্তু ছাড়মু না’; ‘প্রশাসনের অপমান চলবে না, ইউএনও স্যারের অপমান সহ্য করা হবে না’, ‘হলুদ সাংবাদিকদের কালো হাত, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’ ইত্যাদি। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন শাহিন রেজা, আব্দুল্লাহ আল ফাহাদ, কারখানা আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা হাবিবুর রহমান প্রমুখ। তাঁরা বলেন, ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুযোগ–সুবিধা নেওয়া হলুদ সাংবাদিকেরা বর্তমান ইউএনওকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান, তাঁকে তাড়াতে চান। এ কারণে ইউএনওকে নিয়ে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে আসছেন।
মিছিলে আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের খুব কাছের শিক্ষকদের দেখা গেছে। তাঁদের মধ্যে নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার আপন ছোট ভাই ও নওমালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কে এম নাসির উদ্দিন (সবুজ), আওয়ামী লীগ–সমর্থিত এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ধানদী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অর্থ আত্মসাতের দায়ে বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক মঞ্জুর মোর্শেদসহ আরও অনেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুল ও মাদ্রাসার কয়েকজন সহকারী শিক্ষক বলেন, বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক সরকার না থাকায় উপজেলার প্রধান ব্যক্তি হলেন ইউএনও। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাঁর নিয়ন্ত্রণে। তাই প্রধান শিক্ষকদের মাধ্যমে ইউএনও শিক্ষকদের মিছিলে আসতে বাধ্য করেছেন।
গত সোমবার ‘অবহিত না করে’ অনুষ্ঠান আয়োজন করা নিয়ে তর্কের জেরে উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও জাতীয় একটি দৈনিকের স্থানীয় প্রতিনিধি এ এইচ এম শহীদুল হককে ইউএনওর অসৌজন্যমূলক আচরণ ও শাস্তির হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ওই দিন বাউফল আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুদকের পটুয়াখালী জেলা কার্যালয় ও বাউফল দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির আয়োজনে স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের দিনক্ষণ নির্ধারিত ছিল। দুপুর ১২টার দিকে অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে বিদ্যালয়ে এসেই ক্ষুব্ধ হন ইউএনও আমিনুল ইসলাম। এ নিয়ে শহীদুল হকের সঙ্গে ইউএনওর কথা–কাটাকাটি হয়।
কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে খেপে গিয়ে ইউএনওকে বলতে শোনা যায়, ‘প্রজাতন্ত্রের আমি এমন কর্মচারী মালিককে শাস্তিও দিতে পারি’। এ–সংক্রান্ত ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার জের ধরে গত বুধবার বিকেলে ইউএনও আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে উপজেলার সর্বস্তরের ছাত্র–জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন হয়। ওই কর্মসূচি থেকে ইউএনওকে অপসারণের দাবি জানানো হয়।
সাংবাদিক এ এইচ এম শহীদুল হকের অভিযোগ, ইউএনও আমিনুল ইসলাম বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁকে (শহীদুল) সমঝোতা করার জন্য চাপ দিয়ে ব্যর্থ হয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুযোগ–সুবিধা নেওয়া শিক্ষক ও বিএনপির সাবেক বিতর্কিত নেতা-কর্মীদের লেলিয়ে দিয়েছেন। এ কারণে তিনি শঙ্কিত।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ইউএনও আমিনুল ইসলাম বলেন, শহীদুল হককে তিনি কোনো মাধ্যমেই সমঝোতা করার জন্য চাপ দেননি। প্রথমত শহীদুল অনুষ্ঠানের অনুমতি নেননি। এরপর শহীদুল ও তাঁর সঙ্গের লোকজন তাঁর (আমিনুল ইসলাম) সঙ্গে চরম অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। এখন মিথ্যা অভিযোগ করে পরিবেশ ঘোলাটে করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।
শিক্ষকদের আজকের কর্মসূচি নিয়ে ইউএনও বলেন, শিক্ষকদের মিছিল সম্পর্কে কিছুই জানেন না। হয়তো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁর (ইউএনও) বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অপপ্রচার দেখে শিক্ষকসমাজ প্রতিবাদ জানিয়েছে। কাউকে মিছিল করতে বলেননি বলে দাবি করেন ইউএনও।