[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

উপকূলে ঘূণিঝড়ের আঘাত: বেরিয়ে আসছে রিমালের ক্ষত

প্রকাশঃ
অ+ অ-

ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ধসে পড়েছে বসতঘর। অক্ষত জিনিসপত্র খুঁজে দেখছেন এক ব্যক্তি। গতকাল পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় | ছবি: এএফপি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঘূর্ণিঝড় রিমাল বাংলাদেশে আঘাত হানার পর মোট ৪০ ঘণ্টা স্থল নিম্নচাপ আকারে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে অবস্থান করেছে। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই ঝড়ের তাণ্ডব শেষ হওয়ার পর এখন বেরিয়ে আসছে ক্ষতচিহ্ন। রিমালের আঘাতে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২০। 

খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ২৬৩টি স্থানে বেড়িবাঁধের ৪১ কিলোমিটার এলাকা বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক ও পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে দেড় লাখ ঘরবাড়ি। ভেসে গেছে কয়েক হাজার মাছের ঘের ও পুকুর। দক্ষিণাঞ্চলের অনেক উপজেলা গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন ছিল।

এবারও ঘূর্ণিঝড়ের প্রবল গতিবেগ ও জলোচ্ছ্বাসের চাপ ঢাল হয়ে রক্ষা করেছে সুন্দরবন। কিন্তু হরিণ, বন্য শূকরসহ মারা গেছে সুন্দরবনের বেশ কিছু বন্য প্রাণী। গতকাল বিকেল পর্যন্ত সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থান থেকে ৩৯টি হরিণের মরদেহ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। আর অসুস্থ ১৭টি হরিণকে চিকিৎসা দিয়ে বনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বনকর্মীরা এখনো সুন্দরবনের ভেতরে ঢুকতে পারেননি। তাই ক্ষয়ক্ষতি ও বন্য প্রাণী মারা যাওয়ার পূর্ণাঙ্গ চিত্র এখনো পাওয়া যায়নি। 

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জোয়ারের পানিতে ভেসে গিয়ে গাছ ও ঘরচাপা পড়ে গতকাল ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ভোলায় তিনজন, পটুয়াখালীতে দুজন, ঝালকাঠি, কুষ্টিয়া, খাগড়াছড়ি, বাগেরহাট ও নোয়াখালীর হাতিয়ায় একজন করে মারা গেছেন। 

এর আগে গত সোমবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ঘূর্ণিঝড়ে ১০ জন নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছিলেন। গত তিন দিনে এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২০। তবে সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১৬ বলে জানানো হয়েছে।

খাগড়াছড়িতে রাস্তায় ভেঙে পড়া গাছ কাটার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রাসেল হোসেন (২১) নামের ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী নিহত হয়েছেন। সোমবার রাত ১১টার দিকে খাগড়াছড়ির আলুটিলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফেরার পথে জোয়ারের পানিতে ভেসে গিয়ে নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিশুটির নাম মো. মান্না (১২)। গতকাল সকাল ১০টার দিকে নিঝুম দ্বীপের ইসলামপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

গতকাল রাত আটটায় সরকারিভাবে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড়ে ১৯টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার সংখ্যা ১০৭। আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৮৫৮টি ঘরবাড়ি। সম্পূর্ণ ঘরবাড়ির সংখ্যা ৪১ হাজার ৩৩৮।

রিমালের প্রভাবে ভারী বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ভেঙে গেছে গোগালিছড়া নদীর বাঁধ। পানিতে তলিয়ে গেছে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা। গাজীপুর, কুলাউড়া, মৌলভীবাজার | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত
ঘূর্ণিঝড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতায় বরিশাল বিভাগের অন্তত ১২০টি পয়েন্টের ২০ কিলোমিটার বাঁধের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে শুধু পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলাতেই ৪০ থেকে ৪৫টি স্থান রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার ১৪৩টি স্থানে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের পরিমাণ প্রায় ২১ কিলোমিটার। বাঁধগুলো সংস্কার করতে ২৬ কোটি টাকার মতো খরচ হবে বলে জানিয়েছেন পাউবো খুলনার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার সাহা। তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে খুলনার কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলায়। ইতিমধ্যে প্রায় সব জায়গায় পানি আটকানো সম্ভব হয়েছে।

 

ঝড়ে উড়ে গেছে বসতঘর। বড় সন্ন্যাসী গ্রাম, বাগেরহাট | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

খুলনা বিভাগে ক্ষয়ক্ষতি
এই বিভাগের ১০ জেলায় ১ লাখ ৩২ হাজার ৭৮৪টি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। বিভাগের মোট ৪৩২টি ইউনিয়ন ও ৩টি পৌরসভা দুর্যোগকবলিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১২ লাখ ৬৯ হাজার ১৫৪ মানুষ। খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ শাহ বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে প্রাথমিকভাবে সব জেলা থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে। কৃষি ও মৎস্য খাতের ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের চেষ্টা চলছে। দু-এক দিনের মধ্যে পুরো তথ্য পাওয়া যাবে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে খুলনা জেলায়। এ জেলায় ৭৬ হাজার ৯০৪টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৫২ হাজার ২০০। খুলনা নগরে অসংখ্য গাছ উপড়ে গেছে।

ঘূর্ণিঝড়ে সাতক্ষীরায় ১ হাজার ৪৬৮টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালীগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে সাতক্ষীরা শহরেও অসংখ্য গাছ উপড়ে পড়েছে।

বাগেরহাট জেলায় অন্তত ৪৫ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন সেখানকার জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন।

জাহাজটি বাঁধা ছিল রেলিংয়ের সঙ্গে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সাগরের প্রচণ্ড ঢেউয়ের কারণে জাহাজের টানে ভেঙে গেছে রেলিং। খেজুরতলা, পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বরিশাল বিভাগের ক্ষয়ক্ষতি
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বরিশাল বিভাগে প্রাথমিক হিসাবে কৃষি খাতে ৫০৮ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বরিশাল জেলায় ক্ষতি হয়েছে ১১০ কোটি ৩৩ লাখ টাকার। বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড়ে বিভাগের ছয় জেলায় কৃষি খাতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ১৮ হাজার ২০৯ হেক্টর জমির ফসল। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মুরাদুল হাসান বলেন, জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১১০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।

নগদ বরাদ্দ
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা নগদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল, ৯ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার ও শিশুদের জন্য দেড় কোটি ও গবাদিপশুর খাবারের জন্য দেড় কোটি টাকা আলাদাভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

ফিরে আসতে পারে তাপপ্রবাহ
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ বুধবারও দেশের কয়েকটি স্থানে বৃষ্টি হতে পারে। তবে দেশের বেশির ভাগ স্থানে রোদের দেখা পাওয়া যেতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে। অনেক স্থানে তাপপ্রবাহ ফিরে আসতে পারে। তাপপ্রবাহ আগামী চার-পাঁচ দিন মৃদু থেকে মাঝারি আকারে অবস্থান করতে পারে।

এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যতগুলো ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে, তার মধ্যে রিমালের প্রভাব সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ছিল। ৪০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এটি স্থল নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করে গতকাল রাত আটটা পর্যন্ত একটি লঘু নিম্নচাপ আকারে সিলেটে অবস্থান করছিল। তবে এর প্রভাবে নতুন করে ভারী বৃষ্টি বা দমকা হাওয়ার আশঙ্কা নেই।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন