ঈদে হাতে মেহেদি

মেহেদির নকশায় বেড়ে যায় ঈদের আমেজ। মডেল: লামিয়া  ও সামিয়া | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

উপমা ইসলাম: উৎসবের সময় হাতজুড়ে মেহেদি না থাকলে আনন্দ যেন পূর্ণতা পায় না। তবে উৎসব ভেদে মেহেদির নকশার ধরন আলাদা হয়। যেকোনো ধর্মীয় উৎসবে মেহেদির নকশা হয় খুব ছিমছাম, গোছানো ও সূক্ষ্ম কারুকাজের। গোলাকার কিংবা একটি লতানো আলপনা। মেহেদি লাগানোর আগে সেটি ত্বকের জন্য উপযুক্ত কি না, এই বিষয়ে জেনে নেওয়াটাও জরুরি।

মেহেদিশিল্পী নওরিন আমিন এবং জান্নাতুল ফেরদৌস জানালেন, বাজারে দুই ধরনের মেহেদি পাওয়া যায়। একটি হলো তৈরি করা বা ইনস্ট্যান্ট মেহেদিতে ৫ থেকে ১০ মিনিটে রং আসে এবং প্রতি ধোয়াতে হাত থেকে রং কমতে থাকে। আরেকটি হলো প্রাকৃতিক বা অরগানিক মেহেদি। দুই শিল্পীর মতে, ঈদ, বিয়েসহ যেকোনো উৎসবেই অরগানিক মেহেদি ব্যবহার করা ত্বকের জন্য ভালো। কারণ, এই মেহেদি যেহেতু হাতে তৈরি, তাই এতে রাসায়নিকের ব্যবহার থাকে না। এর রং গাঢ় হয় এবং ত্বকের জন্য ক্ষতিকর নয়। সম্পূর্ণ অরগানিক মেহেদি পাতার পাউডার থেকে তৈরি এটি। অরগানিক মেহেদিতে রং আসতে সময় লাগে ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টা। এই রং স্থায়ী হয় বেশি দিন। মেহেদি পাতার রস ত্বকের কোষগুলোকেও সতেজ রাখে। ফলে চামড়া মরে উঠে যায় না। ৮ থেকে ১০ দিনের আগে অরগানিক মেহেদির রং ফ্যাকাশে হয় না। রং উঠে যাওয়ার পর ত্বকের সজীবতা ধরে রাখে।

কিশোরী, তরুণীদের পাশাপাশি অনেক শিশুও মেহেদি দিয়ে থাকে। যাদের ত্বক সংবেদনশীল এবং অ্যালার্জির সমস্যা, তাদের জন্য অরগানিক মেহেদি ব্যবহার করা ভালো। অন্যদিকে, ইনস্ট্যান্ট মেহেদিতে ক্ষতির পরিমাণ বেশি। তাই এটা ব্যবহার না করা ভালো।

মেহেদি হাতে দেওয়ার আগে

  • মেহেদি লাগানোর আগে ভারী কোনো খাবার কিংবা পানীয় পান থেকে বিরত থাকুন।

  • কোন ধরনের নকশার মেহেদি দিতে চান, সে বিষয়ে ভালো ধারণা রাখুন। কোনো মেহেদি নকশাকার দিয়ে নকশা করাতে চাইলে নিজের পছন্দ সম্পর্কে তাঁকে স্পষ্ট ধারণা দিন।
  • মেহেদি লাগানোর আগে হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিন। মলম, ক্রিম ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
  • মেহেদি লাগানোর সময় টিস্যু পেপার, হালকা সুতি কাপড়, টুথপিক বা আলপিন সঙ্গে রাখুন।
  • হাতে ওয়াক্স করার কমপক্ষে এক দিন পর মেহেদি লাগালো ভালো। 
  • মেহেদি দেওয়ার সময় খুব সতর্ক থাকতে হবে যেন অতিরিক্ত নড়াচড়ার কারণে মেহেদির নকশা নষ্ট না হয়ে যায়। তাহলে হাত দেখতে বাজে লাগবে। 

মেহেদি দেওয়ার পরে
মেহেদি দেওয়ার পর শুকনো নকশার ওপরে লেবু, চিনির ঘন সিরাপ ব্যবহার করতে পারেন। এতে রং গাঢ় হয় এবং শুষ্কতা থেকে হাত রক্ষা পায়। এ ক্ষেত্রে লেবু, চিনির ঘন সিরাপটি তুলা দিয়ে আলতো করে নকশার ওপর চেপে চেপে দিন। খেয়াল রাখবেন যাতে পুরো নকশায় রসটি ভালোভাবে লাগে এবং নকশাটি উঠে না যায়।

মেহেদি পাতার রস ত্বকের কোষগুলোকেও সতেজ রাখে মডেল: লামিয়া  ও সামিয়া | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

মেহেদি তুলে ফেলার পর পরিচর্যা
হাত থেকে মেহেদি তুলে শুকনো হাতে শর্ষের তেল বা ভিক্স ব্যবহার করলে রং গাঢ় হয়। মেহেদি ওঠানোর পর অরগানিক মেহেদির ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টা হাতে পানি না লাগানোই ভালো। কারণ, পানির কারণে রং হালকা হয়। যাঁরা ইনস্ট্যান্ট মেহেদি ব্যবহার করেন, লাগানোর আগে ভালোভাবে বুঝে নেবেন, ত্বকে ক্ষতি হওয়ার কোনো আশঙ্কা আছে কি না। 

ইনস্ট্যান্ট মেহেদি দেওয়ার পর অবশ্যই ভালোভাবে ঘষে হাত পরিষ্কার করতে হবে। খেয়াল রাখুন যেন রাসায়নিক মেহেদি হাতে না লেগে থাকে। যাঁরা তাড়াতাড়ি রং উঠিয়ে ফেলতে চান, হাতের ওই অংশটুকুতে পেস্ট লাগিয়ে শুকানোর পর ঘষে তুলে ফেলবেন। সঙ্গে লেবু বা কাঁচা হলুদ দিয়েও ঘষে দেখতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে মাত্রাতিরিক্ত যেন না হয়ে যায়। এতে ত্বকের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।