[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

পাবনা মানসিক হাসপাতাল: রোগীদের বাড়ি ফেরাতে অনীহা

প্রকাশঃ
অ+ অ-

ভরদুপুরে ঝুম বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছেন এক মানসিক রোগী। পাবনার হিমাইতপুরে অবস্থিত পাবনা মানসিক হাসপাতালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি পাবনা: ষাটোর্ধ্ব বদিউল আলমকে ১৯৯৯ সালে প্রথম মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরেছিলেন তিনি। ২০০৫ সালে আবার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে স্বজনেরা কেউ তাঁর খোঁজ নেননি। একই অবস্থা সাঈদার হোসেনেরও। ঢাকার মগবাজারের ঠিকানা দিয়ে ১৯৯৬ সালে তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়। এরপর আর কোনো দিন কেউ তাঁর খোঁজ করেননি। এমনকি ঠিকানাও বদলে ফেলেছেন স্বজনেরা।

শুধু বদিউল ও সাঈদার নন। পাবনা মানসিক হাসপাতালে এমন অনেকেই আছেন। তাঁদের মধ্যে ২৫ জন সুস্থ হলেও ঠিকানা জটিলতায় বাড়ি ফিরতে পারছিলেন না। পরে আদালতের আদেশে ১৫ জনের ঠিকানা খুঁজে বাড়িতে পাঠানো হয়। তিনজন হাসপাতালেই মারা যান। এখনো হাসপাতালে আছেন ৯ জন। তাঁদের স্বজনদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

হাসপাতালের পরিচালক শাফকাত ওয়াহিদ বলেন, মানসিক রোগীরা কখনো পুরোপুরি সুস্থ হন না। তাই তাঁদের দীর্ঘ মেয়াদে হাসপাতালে ভর্তি রাখার প্রয়োজন নেই। দীর্ঘদিন হাসপাতালে রাখলে তাঁদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। রোগীদের জন্য স্বজনদের সঙ্গে কথা বলা জরুরি। পরিবারের সঙ্গে থাকলে তাঁরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।

চিকিৎসক শাফকাত ওয়াহিদ আরও বলেন, মানসিক রোগীদের প্রতি অনেক পরিবারেরই অনীহা দেখা যায়। তাঁরা হাসপাতালে রোগী ভর্তির পর আর খোঁজ নেন না। কয়েক দিন আগে একজন রোগী হাসপাতালে মারা গেছেন। তিনি ১৭ বছর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। কিন্তু পরিবারের কেউ কোনো দিন তাঁর খোঁজ নেননি।

মানসিক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৫০০ শয্যার হাসপাতালটিতে ৩৫০টি সাধারণ ও ১৫০টি বিশেষ শয্যা আছে। এখন রোগী ভর্তি করতে জাতীয় পরিচয়পত্র লাগলেও আগে জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া পরিচয়পত্র অনুযায়ী রোগী ভর্তি করা হতো। আর এ কারণেই স্বজনেরা ভুল ঠিকানা দিয়ে রোগী ভর্তি করতেন। এমন ২৫ জন রোগীর ঠিকানা জটিলতা তৈরি হয়। ২০১৪ সালে বিষয়টি নিয়ে আদালতে রিট করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ২০১৯ সালে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, ১৫ জন রোগীর স্বজনদের খুঁজে বের করা হয়। বাকিদের জন্য পত্রিকায় ছবিসহ বিজ্ঞাপন দেওয়া হলে তাঁদের খোঁজ মেলেনি।

সূত্র জানায়, বাড়ি ফিরতে না পারা রোগীদের মধ্যে জাকিয়া সুলতানা ২০০৯ সালের ১৭ জুলাই, শিপ্রা রানী একই বছরের ২৫ নভেম্বর, অনামিকা বুবি ১৯৯৯ সালের ১৪ অক্টোবর, নাজমা নিলুফা ১৯৮৯ সালের ১ এপ্রিল, গোলজার বিবি ২০০০ সালে ৭ আগস্ট, শাহানারা আক্তার ১৯৯৯ সালের ৮ মে ও নাঈমা চৌধুরী ২০০৯ সালের ১৪ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর তাঁদের কেউ খোঁজ নেননি। পরিবারের লোকজন যে ঠিকানা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন, সেই ঠিকানায় গিয়েও তাঁদের পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া অপেক্ষায় থাকতে থাকতে হাসপাতালে মারা গেছেন তিনজন রোগী। ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট মাহবুব আনোয়ার, ৮ আগস্ট ছকিনা খাতুন এবং ২০১৮ সালের ২১ নভেম্বর সাহিদা আক্তার মারা যান। তাঁরা সবাই সুস্থ ছিলেন।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, সবুজ ছায়াঘেরা হেমায়েতপুর গ্রামের শুরুতেই পাবনা মানসিক হাসপাতাল। লাল রঙের ভবনগুলোতে পুরোনোর ছাপ। তবে পরিচ্ছন্নতার অভাব নেই। ধরন অনুযায়ী রোগীদের পৃথক পৃথক কক্ষে রাখা হয়েছে। বিনোদনের জন্য প্রতিটি কক্ষে আছে টেলিভিশন। রোগীদের কেউ টেলিভিশন দেখছেন কেউবা কথা বলছেন। কেউ আবার আপন মনে গান গাইছেন।

৯ নম্বর কক্ষের সামনে যেতেই ডাকলেন সাঈদার হোসেন। করুণ কণ্ঠে বলে উঠলেন, ‘আমি সুস্থ হয়ে গেছি। আর কাউকে জ্বালাব না। আমার আব্বাকে খুঁজে দেন। আমাকে নিয়ে যেতে বলেন।’ একই সুরে বদিউল আলম বললেন, ‘মা-বাবা, ভাই-বোনদের খুব মনে পড়ে। বুকটা ফেটে কান্না আসে। হাসপাতালের স্যারদের কত বলি কিন্তু কেউই বাড়িতে নিয়ে যায় না।’

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন