[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

বিষমুক্ত বাঙ্গি চাষে সাফল্য, ১০ টাকার বীজে বদলে গেল আবদুস সাত্তারের ভাগ্য

প্রকাশঃ
অ+ অ-
সফল বাঙ্গিচাষি আবদুস সাত্তার। সম্প্রতি কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের ঐচারচর গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

কৃষক আবদুস সাত্তার (৫০) জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বিষমুক্ত আগাম বাঙ্গি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। এই পদ্ধতিতে চাষ করে তিনি শুধু নিজের অবস্থাই বদলাননি, আশপাশের অনেক কৃষকের মাঝেও নতুন আশার সঞ্চার করেছেন।

কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের ঐচারচর গ্রামে আবদুস সাত্তারের বাড়ি। চলতি বছরের প্রথম ধাপে তিনি নিজের ১৫ শতক জমিতে আগাম জাতের বাঙ্গি চাষ করেন। এতে তাঁর খরচ হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫০০ টাকা। এই জমি থেকে তিনি ইতিমধ্যে ৬০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি করেছেন। আরও প্রায় ১০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি। একই সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপে আরও ১৫ শতক জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছেন। সেখান থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে বাঙ্গি সংগ্রহ করা যাবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাঙ্গিখেত পরিচর্যায় ব্যস্ত আবদুস সাত্তার। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে কাঁচা ও পাকা বাঙ্গি ঝুলছে। খেত থেকে বাঙ্গি তুলে বাজারে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। আবদুস সাত্তার বলেন, তিনি মাঝেমধ্যে নিজেই বাজারে গিয়ে বাঙ্গি বিক্রি করেন। তাঁর বাঙ্গি স্বাদ ও গন্ধে খুব ভালো হওয়ায় অনেক সময় পথেই বিক্রি হয়ে যায়। আবার কখনো পাইকারি ব্যবসায়ীরা খেতে এসে বাঙ্গি কিনে নিয়ে যান।

আবদুস সাত্তার জানান, ৪ থেকে ৫ কেজি ওজনের প্রতিটি বাঙ্গি ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। ৭ থেকে ৮ কেজি ওজনের বাঙ্গির দাম ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। আর ১০ কেজি ওজনের বাঙ্গি খুচরা বিক্রি হয় ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে তিনি প্রতিটি বাঙ্গি খুচরা দামের চেয়ে ৫০ টাকা কমে বিক্রি করেন। বাঙ্গির জাত লম্বা হওয়ায় ওজন তুলনামূলক বেশি হয়।

একই গ্রামের কৃষক রাজিব মিয়া বলেন, আবদুস সাত্তারের দেখাদেখি গ্রামের অন্য কৃষকরাও বাঙ্গি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। গ্রামের দুই সহোদর মহসীন হোসেন ও তোফাজ্জল হোসেনও তাঁর অনুসরণে বাঙ্গি চাষ করে টানা তিন বছর ধরে ভালো লাভ করছেন।

আবদুস সাত্তার জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করতেন। জীবিকার প্রয়োজনে ২৫ বছর বয়সে তিনি সৌদি আরবে যান। ১০ বছর পর ২০১১ সালে দেশে ফিরে বাবাকে হারান। এরপর একটি গরুর খামার গড়লেও রোগে গরু মারা যাওয়ায় তিনি প্রায় ২০ লাখ টাকার ঋণে পড়ে যান। সেই কঠিন সময়ে ১০ টাকা দিয়ে কেনা এক প্যাকেট বাঙ্গির বীজ তাঁর জীবনে নতুন পথ দেখায়। ৭ শতক জমিতে বাঙ্গি চাষ করে তিনি ৪০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি করেন। তিনি বলেন, জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনি ফসল আবাদ করেন এবং এ বিষয়ে একাধিকবার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাঁর উৎপাদিত সব ফসলই বিষমুক্ত এবং স্বাদ ও গন্ধে ভালো। তবে বাঙ্গি চাষ করেই তিনি সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন।

কৃষিকাজে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২২ ও ২০২৩ সালে আবদুস সাত্তার জেলার শ্রেষ্ঠ কৃষকের পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর এই সাফল্যের পেছনে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছেন স্ত্রী নার্গিস আক্তার।

তিতাস উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাউছার আহমেদ বলেন, আবদুস সাত্তার কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ফসল আবাদ করেন। তিনি টানা ১০ বছর ধরে লাভজনকভাবে কৃষিকাজ করে আসছেন। এর মধ্যে বাঙ্গি চাষ করে তিনি সবচেয়ে বেশি লাভ পেয়েছেন। গোবর সার ব্যবহার করে বাঙ্গি চাষ করায় তাঁর বাঙ্গি স্বাদ ও গন্ধে আলাদা বৈশিষ্ট্য পেয়েছে।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন