ধর্ম দিয়ে রাজনীতি করলে দুর্বল হবে বাংলাদেশ: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতির যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা বাংলাদেশের এগিয়ে চলার পথে কতটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে, তা তুলে ধরেন নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, ধর্মভিত্তিক বিভাজনের রাজনীতি দেশের সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করবে। একই সঙ্গে এটি বাংলাদেশের সমাজকেও দুর্বল করে তুলবে। ধর্মভিত্তিক বা জাতিগত পরিচয়ের রাজনীতি ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করবে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
শনিবার সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের আয়োজন করা ‘সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার: বর্তমান বাস্তবতা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল সংলাপে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ মন্তব্য করেন। তাঁর মতে, এখন দেশের নিরাপত্তাবোধের অভাব শুধু ধর্মীয় বা জাতিগত সংখ্যালঘুর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এটি পুরো সমাজের একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, নিরাপত্তাবোধের অভাব এখন নারী, মাজার ও সুফি চিন্তাধারার মানুষ, ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটি, আহমদিয়া সম্প্রদায়সহ আরও অনেকের জন্য সত্য। এটি এক সার্বিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর আচরণ বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের জন্য বিপদসঙ্কেত তৈরি করছে, উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, খ্রিষ্টানদের বড়দিনের উৎসবে ভারতে যে ধরনের অত্যাচার হয়েছে, তা দেশে থাকা সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীদের একই ধরনের আচরণের প্ররোচনা দিচ্ছে। তিনি বলেন, ভারতের পরিস্থিতি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের দায় নয়।
তিনি আরও বলেন, সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, সম্প্রীতি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার দৃষ্টিকোণ থেকে নতুন একতাবোধকে যদি ধারণ না করা যায়, তাহলে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও দেশপ্রেম অসম্পূর্ণ থাকবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরার পর নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার কথা উল্লেখের প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সামনে আনা সঠিক। নির্বাচনের আগে ও পরে নিরাপত্তা সংক্রান্ত পদক্ষেপ কী হবে, তা বোঝা এখন গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মার্টিন লুথার কিংয়ের উদ্ধৃতিকে নিজের মতোভাবে উল্লেখ করে বলেন, ওই পরিকল্পনার মধ্যে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের অবস্থান কী হবে এবং মানবাধিকারের ভিত্তিতে দেশে নাগরিক সমাজ গড়ে উঠবে কি না, তা গুরুত্বপূর্ণ।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আন্দোলনকারীদের একটি স্লোগান তাঁর মনে প্রভাব ফেলেছে, সেটি হলো, ‘সুশীলতার দিন শেষ, জবাব চায় বাংলাদেশ’।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ শুধু হাদির হত্যাকারীদের বিচার চাইছে না, একই সঙ্গে দেশের নাগরিকদের অধিকার কিভাবে রক্ষা হবে, সেই প্রশ্নেরও উত্তর চাইছে। যে নারীকে অত্যাচার করা হয় শুধু তাঁর পোশাকের জন্য, তার বিচার কী হবে? যে বাউলগান গাইতে পারে না, তাঁর অধিকার কী হবে? এসবের উত্তরও দিতে হবে।
তিনি সতর্কবার্তা দেন, চলমান নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের প্রক্রিয়ায় ধর্মীয় বা জাতিগত সংখ্যালঘুদের কোনো নেতিবাচক ভূমিকা থাকা উচিত নয়।
সংলাপে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি নির্মল রোজারিও। এতে আরও বক্তব্য দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী সারা হোসেন, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নিমচন্দ্র ভৌমিক, আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, সাংবাদিক এম এ আজিজ, বাংলাদেশ সনাতন পার্টির সাধারণ সম্পাদক সুমন কুমার রায়, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়া, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার দেব। সংলাপটি সঞ্চালনা করেন পরিষদের সদস্য রঞ্জন কর্মকার।

Comments
Comments