হাদিকে গুলির ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ ও সিসিটিভি ফুটেজে কী উঠে এল
![]() |
| ব্যাটারিচালিত রিকশায় বসা ওসমান হাদিকে গুলি করেন মোটরসাইকেলের পেছনে বসা ব্যক্তি। দ্রুত ঘটনা ঘটিয়ে তাঁরা ওই মোটরসাইকেলে সেখান থেকে চলে যান | ছবি: সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে নেওয়া |
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার জুমার নামাজের পরে তুলনামূলক ফাঁকা রাস্তায় একটা–দুইটা গাড়ি চলছিল। হঠাৎ গুলির শব্দে আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ সময় ভেসে আসে ‘বাঁচাও’, ‘বাঁচাও’ বলে একজনের চিৎকার। ব্যাটারিচালিত রিকশা থেকে চিৎকার করছিলেন তিনি। রিকশাটি থামানো হলে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির মাথা ও কান থেকে রক্ত গড়িয়ে রাস্তায় পড়ছে।
আজ বেলা ২টা ২৪ মিনিটে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে গুলিবিদ্ধ ওই ব্যক্তি ছিলেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি। তাঁর মাথায় গুলি লেগেছে। গুরুতর অবস্থায় হাদিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসার পর তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
![]() |
| রিকশায় গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদি। আজ শুক্রবার দুপুরে শরিফ ওসমান হাদিকে রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় | ছবি: ফেসবুক থেকে |
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ওসমান হাদি গত বছর গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নানা কর্মকাণ্ডের জন্য আলোচনায় আসেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঢাকা–৮ আসনে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। করছিলেন গণসংযোগও।
দুপুরে চলন্ত ব্যাটারিচালিত রিকশায় বসে থাকা অবস্থায় হাদিকে যখন গুলি করা হয়, সে সময় ওই রাস্তার পাশে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন সাজ্জাদ খান নামের এক ব্যক্তি। তাঁর সামনেই ওসমান হাদিকে যেভাবে গুলি করা হয়েছে, সেই ঘটনার বর্ণনা তিনি তুলে ধরেছেন।
সাজ্জাদ খান জানান, তিনি ঘটনাস্থলের পাশের একটি ভবনে চাকরি করেন। পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে বাইতুস সালাহ জামে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে বেরিয়ে তিনি মসজিদের উল্টো দিকের ‘ডক্টর টাওয়ার’ নামের একটি বহুতল ভবনের সামনের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সে সময় তাঁর পরিচিত ও অপরিচিত অনেকেই ফুটপাতে ছিলেন।
![]() |
| গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদি। আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সাজ্জাদ খান বলেন, ওসমান হাদি ফকিরাপুলের দিক থেকে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশায় চড়ে পশ্চিম দিকে বিজয়নগরে যাচ্ছিলেন। রিকশায় তাঁর পাশের আসনে আরেকজন ছিলেন। একটি মোটরসাইকেলে দুই ব্যক্তি ওই অটোরিকশার পিছু নিয়ে তাঁদের অনুসরণ করছিলেন। মোটরসাইকেলের পেছনে বসা ব্যক্তির গায়ে কালো একটি চাদর ছিল। ওই চাদর দিয়ে তাঁর হাত দুটি ঢাকা ছিল। মোটরসাইকেলটি অটোরিকশার পাশে এলে পেছনে বসা ব্যক্তি একটি আগ্নেয়াস্ত্র বের করে খুব কাছ থেকে চলন্ত রিকশায় থাকা হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। মুহূর্তের মধ্যে এ ঘটনা ঘটিয়ে তাঁরা মোটরসাইকেলে করে বিজয়নগরের দিকে চলে যান।
গুলির শব্দে রাস্তায় থাকা লোকজন হতভম্ব হয়ে যান উল্লেখ করে সাজ্জাদ খান বলেন, সে সময় সবার মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তখন হাদি ‘বাঁচাও’, ‘বাঁচাও’ বলে চিৎকার করেন। রিকশাটি থামানো হলে সবাই এসে ভিড় করেন। এ সময় হাদির মাথা ও কান থেকে রক্ত গড়িয়ে রাস্তায় পড়ছিল। রিকশায় তাঁর পাশে থাকা লোকটি হাদিকে ধরে রাখেন। এরপর তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
![]() |
| রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছে শরিফ ওসমান হাদিকে। আজ শুক্রবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ঘটনার পর পুলিশ, র্যাব, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। তাঁদের সঙ্গে সেনাবাহিনীও যোগ দেয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ডক্টর (ডিআর) টাওয়ারে থাকা সিসি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে হামলাকারীদের শনাক্তের কাজ শুরু করেন।
ওই ফুটেজে দেখা যায়, একটি মোটরসাইকেলের দুই আরোহী পেছন থেকে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশাকে অনুসরণ করছেন। রিকশায় দুজন যাত্রী ছিলেন। আর মোটরসাইকেলে ছিলেন দুই ব্যক্তি। দুজনেরই হেলমেট পরা ছিল। মোটরসাইকেল চালানো ব্যক্তির পরনে ছিল জিনসের প্যান্ট এবং পেছনের আসনে বসা ব্যক্তির গায়ে চাদর ছিল। একপর্যায়ে মোটরসাইকেলটি অটোরিকশার কাছে পৌঁছালে পেছনে বসা ব্যক্তি আগ্নেয়াস্ত্র বের করে গুলি চালান।
বিকেলে বক্স কালভার্ট রোডে ঘটনাস্থলে গিয়ে সাংবাদিক ও উৎসুক মানুষের ভিড় দেখা যায়। ঘটনাস্থলের রাস্তায় রক্তের দাগ। সিআইডির অপরাধ শনাক্তকরণ দল হলুদ ফিতা দিয়ে স্থানটি ঘিরে রেখেছে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কাজ করছেন। পাশেই সেনাবাহিনী অবস্থান নিয়েছে।
![]() |
| রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকার বক্স কালভার্ট সড়কের এই জায়গায় ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। আজ শুক্রবার বিকেলের চিত্র | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সিআইডির অপরাধ শনাক্তকরণ দলের পরিদর্শক আবদুর রশীদ উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা ঘটনাস্থলের তিন জায়গা থেকে রক্তের আলামত সংগ্রহ করেছেন। এখানকার আলামত যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য স্থানটি হলুদ ফিতা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের মতিঝিল অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার হোসাইন মোহাম্মদ ফারাবী বলেন, ডক্টর টাওয়ারসহ একাধিক ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে হামলাকারীদের শনাক্ত করতে পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। কারা কেন ওসমান হাদিকে গুলি করেছে, সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি।





Comments
Comments