[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

বিএনপির শরিকদের সঙ্গে নির্বাচনী পরিকল্পনায় নতুন মোড়

প্রকাশঃ
অ+ অ-
বিএনপির লোগো

এতদিন যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে বিএনপির জোটভিত্তিক নির্বাচনের ভাবনা ছিল, তা কিছুটা বদলে যাচ্ছে।

দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এবারের নির্বাচনে শরিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো পূর্ণাঙ্গ নির্বাচনী জোট হবে না। তবে কিছু আসনে সমঝোতা করা হবে। এর অংশ হিসেবে কিছু শীর্ষ নেতার আসনে বিএনপি কোনো প্রার্থী দেবে না। পাশাপাশি, শরিক দলগুলোর ছাড় দেওয়া আসনে বিএনপি যদি প্রার্থী ঘোষণা করে, তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে। বাকিটা কিছু আসনে প্রার্থিতা উন্মুক্ত থাকবে, যেখানে শরিকরা চাইলে বিএনপির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিএনপি এই সিদ্ধান্তের পথে এগোচ্ছে। দলের নেতারা মনে করছেন, নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতেও এবারের জাতীয় নির্বাচন ততটা সুবিধাজনক নয় যতটা আশা করা হয়েছিল। সূত্র জানিয়েছে, শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে সমঝোতার বিষয় চূড়ান্ত হতে পারে।

সব মিলিয়ে এবার যুগপৎ আন্দোলনের শরিক বা সমমনাদের আসন ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জোটগত ভোটে দলীয় প্রতীকে অংশগ্রহণের বাধ্যবাধকতার কারণে শরিকদের আসন ছাড়ার বিষয়ে বিএনপির ভূমিকা রক্ষণশীল হয়ে যাচ্ছে। এর কারণ, গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে ভোটের সুযোগ সীমিত ছিল। ২০১৪ ও ২০২৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। ২০১৮ সালে অংশ নিলেও মাঠে কার্যকরভাবে থাকতে পারেনি। এর ফলে দলটির মধ্যে প্রার্থীজট তৈরি হয়েছে।

এছাড়া, ফ্যাসিবাদী শাসনের ১৫ বছরের মধ্যে নানা নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার নেতাদের মধ্যে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এই আগ্রহ বিএনপির নেতৃত্ব উপেক্ষা করতে পারছে না।

আমরা যেটা করছি, এটা জোট নয়। বিগত যুগপৎ আন্দোলনে আমাদের যে কনসেপ্ট, ওইভাবে আমাদের কিছু আসন শরিকদের ছেড়ে দেওয়া হবে।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য

সব মিলিয়ে এবার যুগপৎ আন্দোলনের শরিক বা সমমনাদের আসন ছাড় দেওয়ার বিষয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। আবার জোট করলেও ভোট দিতে হবে নিজ দলের প্রতীকে। এসব কারণে শরিকদের মধ্যে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন প্রার্থীদের আসন ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।

যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি জানিয়েছেন, বিষয়টি এখনো আলোচনার মধ্যে আছে। তিনি বলেন, ‘বিএনপির কাছ থেকে যেটা বোঝা গেছে, তা হলো কিছু শরিক দলের শীর্ষ নেতাদের আসনে তারা প্রার্থী দেবে না। এখন ঠিক করা হচ্ছে, কাকে ছাড় দেওয়া হবে। বিষয়টি এখনও আলোচনায় রয়েছে।’

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এখন পর্যন্ত চারটি জোট বা নির্বাচনী ঐক্যের কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে। তবে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনকে জোটবদ্ধ নির্বাচন বলছে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যেটা করছি, সেটা জোট নয়। বিগত যুগপৎ আন্দোলনে যে কনসেপ্ট ছিল, ওইভাবে কিছু আসন শরিকদের ছাড় দেওয়া হবে।’

ইতিমধ্যে বিএনপি দুই দফায় ২৭২টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তার আগে শরিক বা সমমনা কারও সঙ্গে বিএনপি আলোচনা করেনি। এ নিয়ে শরিকদের মনঃক্ষুণ্নতা আছে।

শরিকদের একাধিক সূত্র বলছে, বিএনপি কত আসন শরিকদের ছাড়বে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ইতিমধ্যে বিএনপি দুই দফায় ২৭২টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর আগে শরিক বা সমমনা কোনো দলের সঙ্গে বিএনপি আলোচনা করেনি। এ নিয়ে শরিকদের মধ্যে মনঃক্ষুণ্ণতার ছায়া পড়েছে। কারণ ঘোষিত আসনগুলোর মধ্যে কিছু আছে, যেখানে শরিকদের কেউ কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে চান। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জ-৫ (জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা), নড়াইল-২ (এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ), কুষ্টিয়া-২ (জাতীয় পার্টির আহসান হাবিব লিংকন) ও ঢাকা-১২ (বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক) উল্লেখযোগ্য।

আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও একমাত্র লক্ষ্মীপুর-১ আসনে বাংলাদেশ এলডিপির সাবেক চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিমের প্রার্থিতা নিশ্চিত বলা হচ্ছে। তিনি সম্প্রতি দলবল নিয়ে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশনায় তাঁকে ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী করার লক্ষ্যে দলবলে যোগদান করানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

 
দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে ঐক্য তৈরি হয়েছে, সেই ঐক্য ধরে রাখা এবং আসন সমঝোতা নিয়ে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, সেটি ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে আলোচনা করে মীমাংসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সাইফুল হক, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক
শরিকদের সঙ্গে লিয়াজোঁর দায়িত্বে থাকা বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, শরিকদের ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর যদি কোনো আসনে বিএনপি ইতিমধ্যেই প্রার্থী ঘোষণা করে থাকে, তাহলে সেই প্রার্থী সরিয়ে নেওয়া হবে।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্তত চারটি শরিক দলের শীর্ষ নেতার আসনে বিএনপি প্রার্থী না দেওয়ার বা প্রার্থী থাকলে সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা চলছে। এর মধ্যে রয়েছে নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, জেএসডি ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জানিয়েছেন, দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে ঐক্য তৈরি হয়েছে, সেই ঐক্য ধরে রাখা এবং আসন সমঝোতা নিয়ে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে আলোচনা করে মীমাংসার সিদ্ধান্ত হবে।
 
যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের বাইরে আসন সমঝোতায় বিএনপির কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। বিএনপি চায় এই দলকে চারটি আসন দিতে। এই চারটি আসনে এখনও প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। তবে জমিয়ত আরও ছয়টি আসন চায়, যেখানে ইতিমধ্যেই বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী জানিয়েছেন, ‘আগামী ১৮ ডিসেম্বর আমাদের সঙ্গে আলোচনার সময় দেওয়া হয়েছে। আমরা তার অপেক্ষায় রয়েছি।’

দূরদর্শী জোট হিসেবে পরিচিত যুগপৎ আন্দোলনের ২৯টি রাজনৈতিক দল ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠক করে মনোনয়ন বিষয়ে বিএনপির ভূমিকায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। বৈঠক-সংক্রান্ত সূত্র বলছে, প্রত্যাশিত আসন না পাওয়ায় শরিক দলগুলো আশঙ্কিত। ২০১৮ সালে যেসব দলকে পাঁচটি আসন দেওয়া হয়েছিল, এবার তাদের একটি বা দুটি আসন দেওয়া হতে পারে।

গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘ধরুন, আমাকে দুটি আসন দিল। তাহলে জোট করে আমি সংকুচিত হব কীভাবে? পাঁচটা থেকে দুটি হলে আমাদের দল কিভাবে বাড়বে। বিএনপি যা-ই দিক দিক, আমরা আমাদের মতো করে নির্বাচন করব।’

বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসন সমঝোতার জন্য আজ বুধবার ও আগামীকাল বৃহস্পতিবার আলোচনা হবে। তবে দুই দিনের আলোচনায় বিষয়টি চূড়ান্ত হবে কি না, তা নিয়ে শরিকদের মধ্যে সংশয় রয়েছে। কারণ, আসন ছাড়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি লন্ডনে থেকে নাকি দেশে ফিরে সিদ্ধান্ত দেবেন, তা নিশ্চিত নয়। দেশে ফেরার ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও পেছাতে পারে।

তারেক রহমান ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে শরিকদের আসন সমঝোতা শেষ করতে হবে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, ‘শরিকদের সঙ্গে যখন আলোচনা শেষ হবে, তখনই বলতে পারব। এর আগে কিছু বলা সম্ভব নয়।’ 
Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন