ঘন কুয়াশায় পথ হারিয়ে লঞ্চ চরে, চার ঘণ্টা পর যাত্রী উদ্ধার, নৌযান বন্ধ
![]() |
| চরে আটকা পড়া লঞ্চ থেকে চার ঘণ্টা পর শতাধিক যাত্রীকে উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। শুক্রবার রাতে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ঘন কুয়াশার কারণে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া–মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া এবং মানিকগঞ্জের আরিচা–পাবনার কাজিরহাট নৌপথে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া কুয়াশায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে দৌলতদিয়া–পাটুরিয়া ও আরিচা–কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ৭টা থেকে দৌলতদিয়া–পাটুরিয়া এবং রাত সোয়া ৮টা থেকে আরিচা–কাজিরহাট নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। একই কারণে রাত ৮টা থেকে দৌলতদিয়া–পাটুরিয়া রুটে লঞ্চ চলাচলও বন্ধ করে দেয় বিআইডব্লিউটিএ।
এর আগে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ দিক হারিয়ে ঘাট থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে পদ্মা নদীর চরে আটকা পড়ে। পরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে নৌ পুলিশের সহায়তায় দিবাগত রাত ১২টার দিকে লঞ্চের যাত্রীরা উদ্ধার হন। এ ছাড়া বিকেল থেকেই আরিচা–কাজিরহাট নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কুয়াশার কারণে এক সপ্তাহ ধরে নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত দৌলতদিয়া–পাটুরিয়া নৌপথে সাড়ে ৯ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। পরে গতকাল সন্ধ্যা থেকে আবার কুয়াশা ঘন হতে শুরু করে।
গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে দৌলতদিয়া থেকে ছেড়ে যাওয়া শাহ মখদুম, এনায়েতপুরী ও ভাষাশহীদ বরকত নামের তিনটি বড় ফেরি মাঝনদীতে কুয়াশার কবলে পড়ে। দিক নির্ণয় করতে না পেরে ফেরিগুলো মাঝনদীতে নোঙর করে রাখা হয়। এতে কুয়াশা ও শীতের মধ্যে ফেরিতে থাকা প্রায় ৭০টি যানবাহনের চালকসহ কয়েক শ যাত্রী দুর্ভোগে পড়েন।
ফেরি আটকে পড়ার খবর পেয়ে সন্ধ্যা সোয়া ৭টা থেকে দৌলতদিয়া–পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এ সময় দৌলতদিয়া প্রান্তে কোনো ফেরি ছিল না। পাটুরিয়া প্রান্তে হাসনাহেনা, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন, শাহ পরান, কেরামত আলী, ভাষাশহীদ বরকত ও বীরশ্রেষ্ঠ গোলাম মাওলা নামের ফেরিগুলো নোঙর করতে বাধ্য হয়। পারাপার বন্ধ থাকায় উভয় ঘাটে বেশ কিছু যানবাহন আটকা পড়ে।
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপমহাব্যবস্থাপক আবদুস সালাম বলেন, ‘কুয়াশা কেটে গেলে আবার ফেরি চলাচল শুরু হবে। ফেরির সংখ্যা বেশি থাকায় তখন যানবাহন দ্রুত পারাপার করা সম্ভব হবে।’
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আবু আবদুল্লাহ রনি বলেন, কাজিরহাট ঘাট এলাকায় চিত্রা ও শাহ আলী এবং নদীতে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান ও ধানসিঁড়ি নামের ফেরিগুলো নোঙর করে রাখা হয়েছে।
এদিকে কুয়াশার কারণে গতকাল রাত ৮টা থেকে দৌলতদিয়া–পাটুরিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। কুয়াশায় চলাচল বন্ধ থাকায় এই রুটের ছোট-বড় ১৭টি লঞ্চ উভয় ঘাটে নোঙর করে রাখা হয়। পাশাপাশি যাত্রীসংখ্যা কম থাকায় সন্ধ্যার আগেই আরিচা–কাজিরহাট নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের ট্রাফিক সুপারভাইজার মো. শিমুল ইসলাম।
গতকাল রাত পৌনে ৮টার দিকে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে পাটুরিয়ার উদ্দেশে যাত্রীবাহী লঞ্চ এমএল মিজানুর রহমান ছেড়ে যায়। ঘাট ছাড়ার পর ঘন কুয়াশায় দিক হারিয়ে লঞ্চটি প্রায় চার কিলোমিটার ভাটিতে বাহির চর কলাবাগান এলাকায় পদ্মা নদীর চরে আটকা পড়ে। এতে লঞ্চে থাকা যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে উপায় না পেয়ে যাত্রীরা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করেন।
খবর পেয়ে দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ উদ্ধার অভিযান শুরু করে। দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান অপূর্ব বলেন, ‘আমি নিজেসহ ফাঁড়ির এএসআই অশোক দত্ত ও অন্যান্য সদস্য স্থানীয় লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে একটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে উদ্ধার অভিযানে নামি। ঘন কুয়াশার কারণে কাছের কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। কৃত্রিম আলোর সাহায্যে ঘাট থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে কলাবাগান এলাকায় লঞ্চটির অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে দিবাগত রাত ১২টার দিকে লঞ্চে থাকা প্রায় ১০০ জন যাত্রীকে উদ্ধার করে দৌলতদিয়া ঘাটে নিয়ে আসা হয়। এ ঘটনায় কোনো যাত্রী হতাহত হননি।’

Comments
Comments