এক পরিবহন বন্ধের দাবিতে কুমিল্লায় বন্ধ বাস চলাচল, যাত্রীদের ভোগান্তি
![]() |
| বাস বন্ধ পেয়ে অনেকেই বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লা নগরের শাসনগাছা বাস টার্মিনালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
কুমিল্লা-চাঁদপুর সড়কে রুট পারমিট ছাড়া ‘আইদি’ পরিবহনের বাস চলাচলের অভিযোগে কুমিল্লা থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রেখে ধর্মঘট চলছে। আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হওয়া এই ধর্মঘটে কুমিল্লা-ঢাকা, কুমিল্লা-চট্টগ্রামসহ সব আন্তজেলা ও অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে যাত্রী, চালক ও সংশ্লিষ্টরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
কুমিল্লা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। পরিবহন নেতারা বলেন, কুমিল্লা নগরের জাঙ্গালিয়া, শাসনগাছা ও চকবাজার—এই তিনটি প্রধান বাস টার্মিনাল থেকে কুমিল্লা-ঢাকা, কুমিল্লা-চট্টগ্রাম, কুমিল্লা-সিলেট, কুমিল্লা-নোয়াখালী, কুমিল্লা-ফেনী ও কুমিল্লা-চাঁদপুরসহ বিভিন্ন রুটে অন্তত ৩০টি পরিবহনের কয়েক হাজার বাস ও মিনিবাস চলাচল করে। এসব রুটে রুট পারমিটবিহীন ‘আইদি’ পরিবহন চলাচলের প্রতিবাদে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
পরিবহন নেতারা দাবি করেন, ২০২৩ সালে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে ‘আইদি’ পরিবহন চলাচল শুরু করলেও কুমিল্লা থেকে কোনো রুট পারমিট দেওয়া হয়নি। এরপরও তারা নিয়ম না মেনে বাস চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। আজ সকালে শাসনগাছা ও জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, কাউন্টারগুলোয় তালা ঝুলছে। অনেক যাত্রী টার্মিনালে এসে জানতে পারেন, বাস চলাচল বন্ধ।
অসুস্থ দাদিকে নেওয়ার জন্য কুমিল্লায় এসেছিলেন রাজধানীর বাসিন্দা আকাশ মজুমদার। তিনি বলেন, ‘আজ সকাল ৯টার দিকে শাসনগাছা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখেছি বাস চলাচল বন্ধ। যাত্রীদের জিম্মি করে দাবি আদায় এভাবে আর কত দিন চলবে? এখন কীভাবে ঢাকায় ফিরব, বুঝতে পারছি না।’
একই টার্মিনালে এশিয়া লাইন পরিবহনের কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে ভোগান্তির কথা জানান কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় এলাকার বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘জরুরি কাজে মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় যেতে হবে। কিন্তু এসে দেখি বাস বন্ধ। এখন বাধ্য হয়ে অটোরিকশা দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গিয়ে অন্য বাস ধরতে হবে।’
শাসনগাছা বাস টার্মিনাল থেকে সাধারণত এশিয়া লাইনের বাসে করে ঢাকায় যাতায়াত করেন বেশির ভাগ মানুষ। তবে ওই পরিবহনের কাউন্টারেও তালা ঝুলতে দেখা গেছে। সেখানে থাকা বাসের হেলপার জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ভোর থেকেই বাস চলাচল বন্ধ। প্রশাসন দাবি মেনে নিলে দুপুরের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে।’
এ বিষয়ে গতকাল জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি অধ্যক্ষ কবির আহমেদ। তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে বহিরাগত শক্তির সহযোগিতায় ওই পরিবহন চলাচল করছে। নিয়ম মেনে রুট পারমিট না নিলে এটিকে চলাচল করতে দেওয়া হবে না।’
অন্যদিকে ‘আইদি’ পরিবহনের উপদেষ্টা তাজুল ইসলাম দাবি করেছেন, তাঁদের বাস চলাচলে আইনগত কোনো বাধা নেই। চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে পরিবহন চালু করা হয়েছে। তবে কুমিল্লার বাস মালিকদের একটি সিন্ডিকেট শুরু থেকেই বাধা দিচ্ছে। চাঁদপুরের অনুমোদনের কপি কুমিল্লায় পাঠানো হয়েছে। এখন শুধু অনাপত্তিপত্র পেলে চলাচল স্বাভাবিক হবে।
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জাফর সাদিক বলেন, ‘আইদি পরিবহনের কুমিল্লা থেকে কোনো রুট পারমিট নেই। তাদের একাধিকবার বাস চলাচল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশ অমান্য করায় তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Comments
Comments