[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কে উত্তাপ, আজ কার্যক্রম চালু রাখছে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র

প্রকাশঃ
অ+ অ-
বাংলাদেশ ও ভারতের পতাকা

বাংলাদেশে ‘ক্রমাবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতি’ নিয়ে নয়াদিল্লির ‘গভীর উদ্বেগ’ জানাতে গতকাল বুধবার দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর প্রায় দুই ঘণ্টা আগে ঢাকায় ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র (আইভেক) বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় দেশটির হাইকমিশন।

গতকাল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে যুক্ত একাধিক সংগঠনের মোর্চা জুলাই ঐক্যের ব্যানারে ‘মার্চ টু ইন্ডিয়ান হাইকমিশন’ কর্মসূচি ছিল। এ কর্মসূচির মধ্যে বেলা দুইটা থেকে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ভারতের কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, যমুনা ফিউচার পার্কে অবস্থিত আইভেকের কার্যক্রম আজ বৃহস্পতিবার স্বাভাবিক নিয়মে চালু থাকবে।

বাংলাদেশ–ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে চলমান টানাপোড়েন আবারও সামনে এসেছে। দুই দিনের ব্যবধানে দুই দেশের হাইকমিশনারকে তলবের ঘটনাকে ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনার ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা।

বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সূত্র জানায়, গত রোববার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেভাবে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করেছিল, দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহর ক্ষেত্রে পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন ছিল। প্রণয় ভার্মাকে আগের দিন তলবের বিষয়টি জানানো হয়েছিল। তবে গতকাল সকালে বাংলাদেশ হাইকমিশনে ফোন করে ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে রিয়াজ হামিদুল্লাহকে দিল্লির জওহরলাল নেহরু ভবনে অবস্থিত ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপস্থিত হতে বলা হয়।

দিল্লির কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বাংলাদেশ–মিয়ানমার বিভাগ) বি শ্যাম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে তলব করেন। স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার পর শুরু হওয়া বৈঠকটি প্রায় ১৫ মিনিট স্থায়ী হয়।

তলবের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাংলাদেশে ক্রমাবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নয়াদিল্লির গভীর উদ্বেগ জানাতে রিয়াজ হামিদুল্লাহকে তলব করা হয়। এ সময় তাঁর দৃষ্টি বিশেষভাবে আকর্ষণ করা হয় ‘কিছু চরমপন্থী গোষ্ঠীর’ কর্মকাণ্ডের দিকে, যারা ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন ঘিরে নিরাপত্তা পরিস্থিতি তৈরির পরিকল্পনার কথা প্রকাশ্যে জানিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কূটনৈতিক বাধ্যবাধকতার আলোকে বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন ভারতীয় মিশন ও পোস্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে—এমন প্রত্যাশা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জানিয়েছে নয়াদিল্লি।

ঢাকার একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানায়, দিল্লিতে গতকালের আলোচনার মূল বিষয় ছিল বাংলাদেশে ভারতীয় মিশনগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের উদ্বেগ। এ সময় বাংলাদেশের হাইকমিশনার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবকে স্পষ্টভাবে জানান, একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ভারতীয় মিশন ও কূটনীতিকদের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।

নতুন করে টানাপোড়েন
কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রায় ১৬ মাস ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। গত কয়েক দিনে, বিশেষ করে ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সেই সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচনবিরোধী বক্তব্য ও বিবৃতি প্রচার করা হয়।

অন্যদিকে তফসিল ঘোষণার পরদিন, ১২ ডিসেম্বর ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সমর্থক ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়। বর্তমানে তিনি সংকটাপন্ন অবস্থায় সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁকে হত্যার চেষ্টায় জড়িত ব্যক্তিরা ভারতে পালিয়ে গেছেন—এমন আলোচনা রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে ১৪ ডিসেম্বর ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাঁকে জানানো হয়, ভারতে পালিয়ে যাওয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ড দ্রুত বন্ধ করতে চায় ঢাকা। পাশাপাশি হাদিকে হত্যার চেষ্টায় জড়িত সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা ভারতে প্রবেশ করলে তাঁদের গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়।

ওই তলবের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী কোনো কাজে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে ভারতের অবস্থান আবারও জানানো হয়। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখাসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে—এমনটাই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ভারতের প্রত্যাশা।

নির্বাচন নিয়ে ‘নসিহতের’ দরকার নেই: তৌহিদ হোসেন
বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে দিল্লিতে তলবের ঘটনা, নির্বাচন ইস্যুতে ভারতের বক্তব্যসহ দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয়ে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেই বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন কোনো পর্যায়ে যাচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই ভালো থেকে কার্যকর সম্পর্ক চাই বলে আসছি। আমরা চাইলেই যে সেটা হবে, এমন তো নয়। দুই পক্ষকেই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চেষ্টা করতে হবে। আমার মনে হয়, আমরা দুই পক্ষ মিলে হয়তো ততটা এগোতে পারিনি। সে কারণেই টানাপোড়েন থেকে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ যে বক্তব্য এসেছে, তাতে আমাদের নসিহত করা হয়েছে। সেটার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। বাংলাদেশে নির্বাচন কেমন হবে, এ বিষয়ে আমরা প্রতিবেশীদের উপদেশ চাই না।’

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার শুরু থেকেই স্পষ্ট করে বলছে, তারা ‘অত্যন্ত উঁচু মানের’ নির্বাচন করতে চায়। মানুষ যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, সে জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করাই তাদের লক্ষ্য। গত ১৫ বছরে এমন পরিবেশ ছিল না।

ভারতের নির্বাচন–সংক্রান্ত বক্তব্য প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি এটাকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য মনে করি। তারা জানে, এর আগে গত ১৫ বছর যে সরকার ছিল, তাদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। সেই সময় যেসব নির্বাচন প্রহসনমূলক হয়েছিল, তখন তারা একটি শব্দও বলেনি। এখন আমরা যখন একটি ভালো নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছি, তখন আমাদের নসিহত করার কোনো প্রয়োজন নেই।’

‘আমরা তো থামাতে পারি না’
ঢাকার বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পরবর্তী পদক্ষেপ জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ভারত যদি তাঁকে থামাতে না চায়, আমরা তো থামাতে পারি না। এটা আমাদের মেনে নিতে হবে। তবে আমরা চাইব, ভারত তাঁকে থামাক।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচনের উপযোগী পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে সেই পরিবেশ যেন নষ্ট না হয়। এসব বক্তব্য বন্ধ হলে বাংলাদেশ সেটিকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখবে।

বিজয় দিবসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বার্তায় বাংলাদেশের নাম উল্লেখ না থাকার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, যারা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান অস্বীকার করে মুক্তিযুদ্ধকে ‘ভারত–পাকিস্তানের যুদ্ধ’ হিসেবে তুলে ধরতে চায়, তাদের সামরিক ইতিহাস ও বিজ্ঞান সম্পর্কে ‘কোনো জ্ঞান নেই’। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ছাড়া এই বিজয় অর্জন সম্ভব হতো না। 

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন