[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

ফরিদপুরে এক মাসে সাত খুন, চারটির কোনো কূলকিনারা নেই

প্রকাশঃ
অ+ অ-
মরদেহ | প্রতীকী ছবি

ফরিদপুরে গত এক মাসে সাতটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে শিশু, নারী, রিকশাচালক, মাছ ব্যবসায়ী ও ডাব ব্যবসায়ী। এ ছাড়া চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২০ নভেম্বর থেকে চলতি মাসের ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে।

এই সাতটি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে পাঁচটি ছিল ক্লুলেস। এর মধ্যে একটি ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন করেছে পুলিশ। বাকি ঘটনাগুলোর তদন্ত চলছে। সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরেকটি ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক করা হয়েছে।

শিশু জায়ান হত্যাকাণ্ড
গত ২০ নভেম্বর আলফাডাঙ্গার পাকুড়িয়া গ্রামে গ্রিসপ্রবাসী পলাশ মোল্যার সাত বছর বয়সী ছেলে জায়ান মোল্যার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বাড়ির পাশের একটি বাগান থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়। শিশুটির মুখে আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং ঝুলন্ত অবস্থায় তার পরনের প্যান্ট দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা ছিল। এ ঘটনায় জায়ানের মা সিনথিয়া বেগম অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা করেন।

পুলিশ জানায়, ঘটনার পর ২৫ নভেম্বর প্রতিবেশী ইউনুচ মোল্যা নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক সুজন বিশ্বাস সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। ১০ ডিসেম্বর ফরিদপুর ৯ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক আনারুল আসিফ সেই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তবে এখনো ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। তদন্ত কর্মকর্তা সুজন বিশ্বাস বলেন, তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

নারীর হাত বাঁধা লাশ
১৯ ডিসেম্বর বেলা ১১টার দিকে সদরপুর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসসংলগ্ন সড়কের ঢাল থেকে এক নারীর হাত বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে জানা যায়, তিনি বোয়ালমারী উপজেলার সুতাশী গ্রামের বারিক শেখের মেয়ে রুমা বেগম (২৫)। এ ঘটনায় রুমার স্বামী তুহিন মণ্ডল বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান রিপন নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে বলেন, ওই নারী মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন এবং মাঝেমধ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেন। সর্বশেষ ১৫ ডিসেম্বর তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। তিনি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডটি কীভাবে ঘটেছে, তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর জানা যাবে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে কি না, সে বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’

এদিকে একই দিন সন্ধ্যায় ভাঙ্গা উপজেলার গুনপালদী গ্রামে টুকু মোল্লা (৪৫) নামের এক ব্যক্তিকে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগটি করা হয়েছে সীমা বেগম নামের এক নারীর বিরুদ্ধে। সীমা বেগম নিহত টুকু মোল্লার চাচাতো ভাই তুরস্কপ্রবাসী সোহাগ মোল্লার স্ত্রী। ঘটনার পর তিনি পালিয়ে যান। এ ঘটনায় নিহত টুকু মোল্লার স্ত্রী আমেনা আক্তার থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। মামলাটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলিমুজ্জামান।

রিকশাচালকের হত্যা
১৮ ডিসেম্বর সকালে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার চাঁদপুর গ্রামের একটি কলাবাগান থেকে টিপু সুলতান নামের এক রিকশাচালকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। দুর্বৃত্তরা তাঁকে গলা কেটে হত্যা করে এবং তাঁর রিকশাটি নিয়ে পালিয়ে যায়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক হিরামন বিশ্বাস বলেন, এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক করা হয়েছে। তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

মাছ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা
৫ ডিসেম্বর ভোর পৌনে ৫টার দিকে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর মাছের আড়তে যাওয়ার পথে সালথা উপজেলার কালীতলা ব্রিজ (মাটিয়াদহ) এলাকায় দুর্বৃত্তদের হামলায় উৎপল সরকার (৩৮) নামের এক মাছ ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। দুর্বৃত্তরা প্রথমে উৎপলের সঙ্গে থাকা ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্লার চোখ বেঁধে ব্রিজের রেলিংয়ের সঙ্গে বেঁধে রাখে। এরপর উৎপল সরকারকে কুপিয়ে হত্যা করে।

এ ঘটনায় হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন করেছে পুলিশ এবং জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বাবলুর রহমান খান বলেন, পূর্বশত্রুতা ও পরকীয়ার জেরে উৎপল সরকারকে হত্যা করা হয়েছে।

ডাব ব্যবসায়ীর লাশ, মেলেনি রহস্য
গত ২২ নভেম্বর বোয়ালমারী উপজেলার রামচন্দ্রপুর এলাকার একটি ব্রিজের পাশ থেকে ইব্রাহিম (৩৫) নামের এক ডাব ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। শুরুতে তাঁর পরিচয় জানা না গেলেও পরে শনাক্ত করা হয়। তিনি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার উত্তরটিলি গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে। ঘটনার এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন করা যায়নি।

এ ছাড়া ২৩ নভেম্বর গভীর রাতে চোর সন্দেহে এলাকাবাসীর গণপিটুনিতে শাহীন শিকদার (২৮) নামের এক যুবক নিহত হন। এ ঘটনায় আরও তিনজন আহত হন। নগরকান্দা উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের দেবীনগর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নিহত শাহীনের বাড়ি পাশের গজগাহ গ্রামে। এ ঘটনায় নিহত শাহীনের মা রিক্তা বেগম শতাধিক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। তবে এক মাসেও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক ইরানুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

হত্যাকাণ্ডগুলোর অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. শামছুল আজম বলেন, ‘সালথার একটি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন করে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আলফাডাঙ্গায় শিশু হত্যার ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা আশাবাদী, দ্রুত সব হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।’

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন