কেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন বিএনপি প্রার্থী মাসুদুজ্জামান?
নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত কারণে নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনে বিএনপি–মনোনীত প্রার্থী ব্যবসায়ী ও ক্রীড়া সংগঠক মোহাম্মদ মাসুদুজ্জামান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তের পর দলের নেতা–কর্মীদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। নিরাপত্তাশঙ্কার পাশাপাশি অন্য কারণও থাকতে পারে, তা নিয়েও চলছে জল্পনা।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী নিয়ে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। দলীয় মনোনয়নের লড়াইয়ে সম্ভাব্য তিন প্রার্থীর নাম আলোচনায় এসেছে।
গত ৩ নভেম্বর আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ছিলেন মোহাম্মদ মাসুদুজ্জামান। তখন থেকে তিনি এলাকায় গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছিলেন। গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি নিরাপত্তাশঙ্কা উল্লেখ করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে মাসুদুজ্জামান বলেন, ‘সাম্প্রতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও ব্যক্তিগত কারণে আমি নির্বাচন করব না। আমি মনোনয়ন নেব না। এজন্য শহর ও বন্দরবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। একজন সমাজকর্মী হিসেবে আজীবন আপনাদের পাশে থাকব।’ তিনি আরও বলেন, ‘সবার আগে পরিবার এবং নিরাপত্তা। আমি আগেই বলেছি, পরিবার থেকে বিদায় নিয়ে রাজনীতিতে এসেছি। সেখানে তাদের কোনো বাধা ছিল না। তারা রাজি না হয়েও রাজি হয়েছে। আমি মানুষের জন্য কাজ করার জন্যই আগ্রহ প্রকাশ করেছি। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও পরিবেশ–পরিস্থিতিতে পরিবারের সদস্যরা অত্যন্ত ব্যথিত ও ভীত। এর বাইরে আরও কিছু নিরাপত্তা বিষয় আছে, যা বিস্তারিত বলতে চাই না। পরিবেশটাই নেগেটিভ। এটি দলের নয়, আমার নিজস্ব সিদ্ধান্ত।’
নিরাপত্তাশঙ্কা ও ব্যক্তিগত কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেও মাসুদুজ্জামানের এই সিদ্ধান্তের পেছনে আরও কয়েকটি কারণ থাকতে পারে বলে মনে করছেন দলের নেতা–কর্মীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির পাঁচ নেতা–কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই আসনে মাসুদুজ্জামান ছাড়াও আরও তিনজন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। মাসুদুজ্জামানকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর বঞ্চিত তিন প্রার্থী এক মঞ্চ থেকে দলীয় নেতৃত্বের কাছে প্রার্থী করার দাবি জানান। অনেক আগে মাসুদুজ্জামান যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, কিন্তু দীর্ঘদিন সক্রিয় রাজনীতি করেননি। গত সেপ্টেম্বরে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেন। স্থানীয় পদধারী নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ায় মাসুদুজ্জামান নির্বাচন থেকে সরে যেতে পারেন।
এ ছাড়া তিনি সফল ব্যবসায়ী। দেশের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি, পারিবারিক চাপ বা ব্যক্তিগত বিষয়ও তাঁর এই সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে।
আলোচনায় তিন মনোনয়নপ্রত্যাশী
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির অন্তত তিনজন নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তারা হলেন, এ আসনের তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন এবং বিএনপি নেতা ও শিল্পপতি আবু জাফর বাবুল। মাসুদুজ্জামানের সরে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর তাদের নাম নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
আবুল কালাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় এলাকায় কাজ করে যাচ্ছি। বিগত দিনে আমার স্বচ্ছ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে দল এবারও আমাকে মনোনয়ন দেবে।’
মাসুদুজ্জামানের সরে যাওয়ায় দলে প্রার্থিতা নিয়ে কোনো সংকট হবে না বলে উল্লেখ করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘দলে তিনিসহ আরও ভালো প্রার্থী আছেন। আশা করি, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তৃণমূল থেকে এখানে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেবে।’
এছাড়া দলের ত্যাগী নেতা হিসেবে মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করেন বিএনপি নেতা আবু জাফর বাবুল।
নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই বলে দাবি করেছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মুন্সি। তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তাশঙ্কা নিয়ে আমাদের বা আমাদের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে কোনো তথ্য নেই। তিনিও (মাসুদুজ্জামান) আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ জানাননি। তাই এ বিষয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।’

Comments
Comments