[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

মব তৈরি করে বই পোড়ানো বিপজ্জনক সংস্কৃতি: রেহমান সোবহান

প্রকাশঃ
অ+ অ-
অনুষ্ঠানে কথা বলছেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান। ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫; রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারে | ছবি: ইউপিএলের সৌজন্যে

নিজেদের মতের সঙ্গে মিল না হলে উচ্ছৃঙ্খল জনতার সংঘবদ্ধ হামলার মাধ্যমে বই পোড়ানো ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে হামলার সংস্কৃতি আবার ফিরে আসছে—এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর চেয়ারম্যান ও খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান।

শনিবার রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারে ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)-এর সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ উদ্বেগের কথা জানান। চলতি বছরের ১০ ডিসেম্বর দেশের অন্যতম এই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটির ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে।

রেহমান সোবহান বলেন, ‘এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক একটি সংস্কৃতি। বাস্তবে এটি আপনাকে নাৎসি জার্মানি এবং সে সময়কার বই পোড়ানোর সংস্কৃতির দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। আমি আশা করি, তুলনামূলকভাবে ভালো গণতান্ত্রিক সময়ের এই নতুন যুগে আমরা এমন সংস্কৃতির মুখোমুখি হব না।’

এ সময় তিনি বলেন, ইংরেজি ভাষার প্রকাশনাগুলো এখনো তুলনামূলকভাবে নিরাপদ থাকার একটি কারণ হলো, শাসকশ্রেণি ব্যাপকভাবে বই পড়ে না। তবে শেষ পর্যন্ত মানুষ বই পড়ে। গোয়েন্দা সংস্থার কেউ কেউও বই পড়ে এবং সরকারকে নিয়ে লেখা যেসব বিষয় তাদের পক্ষে যায় না, সেগুলো আলাদা করে চিহ্নিত করে রাখে।

ইউপিএল নিয়ে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে রেহমান সোবহান বলেন, ‘বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এ থাকার সময় মহিউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বই প্রকাশের একটি পার্টনারশিপ শুরু করি। তখন ইউপিএল আমাদের গবেষণাকাজ প্রকাশের দায়িত্ব নেয়। মহিউদ্দিন আহমেদ কেবল গুণগত মান বজায় রেখে বই ছাপাননি, সেগুলো পাঠকের কাছে পৌঁছানোর দায়িত্বও নিয়েছিলেন। সে সময় এটি ছিল প্রথম সফল পার্টনারশিপ।’

সিপিডির চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘এরপর বিআইডিএস ছাড়ার পর সিপিডির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বই প্রকাশের কাজ শুরু হয়। ইউপিএল শুধু বই ছাপায়নি, বরং লেখকদের জন্য একটি সুচারুভাবে সম্পাদিত বই প্রকাশের নির্ভরযোগ্য ঠিকানা হয়ে ওঠে। মহিউদ্দিন আহমেদের প্রয়াণের পর তাঁর কন্যা মাহ্‌রুখ মহিউদ্দিন প্রকাশনা সংস্থাটির নেতৃত্ব দেন, যা ছিল বড় একটি চ্যালেঞ্জ।’

অনুষ্ঠানে আলোচকেরা বলেন, ইউপিএল জন্মলগ্ন থেকেই বই প্রকাশে মান বজায় রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ার যে আহ্বানে ইউপিএল বই প্রকাশ করে, তা দেশের মানুষের জ্ঞান অর্জন ও চর্চার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য ক্ষেত্র তৈরি করেছে।

পাঠক, লেখক ও শুভানুধ্যায়ীদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি এক মিলনমেলায় পরিণত হয়। সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে লেখক, অনুবাদক, সম্পাদক ও শুভানুধ্যায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। ইউপিএলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সময়কার স্মৃতি তাঁরা তুলে ধরেন।

আলোচকেরা আরও বলেন, ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ৫০ বছর ধরে গবেষণাধর্মী প্রকাশনায়, বিশেষ করে বিজ্ঞান, ইতিহাস, অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজবিজ্ঞান ও উন্নয়ন অধ্যয়ন বিষয়ে বই প্রকাশ ও পাঠে ইউপিএল গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।

অনুষ্ঠানে অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, রাশেদা কে চৌধূরী, আলী রীয়াজ, নিয়াজ জামান, মেহতাব খানম, রামেন্দু মজুমদার, আইরিন খান, রেহনুমা আহমেদ, পারভীন হাসান, সারা হোসেন, ফারুক মঈনুদ্দীন, সাজ্জাদ শরিফ, সামিনা লুৎফা, সাঈদ ফেরদৌস, আশা মেহরিন আমিন, কাজুইয়ো মিনামিদে, মোশাহিদা সুলতানা, সব্যসাচী হাজরা, মোশাহিদা সুলতানাসহ বহু শিক্ষক, কবি, লেখক ও শুভানুধ্যায়ী। অতিথিদের স্বাগত জানান এবং তাঁদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন ইউপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহ্‌রুখ মহিউদ্দিন।

সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে ইউপিএলের প্রতিষ্ঠাতা ইমেরিটাস প্রকাশক মহিউদ্দিন আহমেদের স্মরণে ‘আরশি ট্রাস্ট’-এর উদ্বোধনের ঘোষণা দেওয়া হয়। বই ও জ্ঞান সৃষ্টি, চর্চা এবং সমাজে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে এই ট্রাস্ট কাজ করবে।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন