এনসিপি নেত্রী জান্নাতারার লাশ উদ্ধার: যা বলছেন পুলিশ ও স্বজন
![]() |
| জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ধানমন্ডি থানা শাখার যুগ্ম সমন্বয়ক ছিলেন জান্নাতারা রুমী | ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া |
রাজধানীর জিগাতলার নারী হোস্টেল থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেত্রী জান্নাতারা রুমীর লাশ উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। পুলিশ এই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে ধারণা করছে, তবে এনসিপির এক নেতা একে ‘খুন’ বলে দাবি করেছেন। তিনি যুক্তি হিসেবে বলেছেন, সম্প্রতি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে মধ্যবয়স্ক এক নারীকে লাঠি দিয়ে আঘাতের ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর অনলাইনে জান্নাতারা হয়রানি ও হুমকি পাচ্ছিলেন।
৩০ বছর বয়সী জান্নাতারা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তিনি জিগাতলার ওই হোস্টেলের পঞ্চম তলার একটি কক্ষে একা থাকতেন।
বৃহস্পতিবার সকালে খবর পেয়ে পুলিশ ওই হোস্টেলে গিয়ে তাঁর লাশ উদ্ধার করে, জানিয়েছেন হাজারীবাগ থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, সকালে হোস্টেলের গৃহকর্মী ডাকাডাকি করেও জান্নাতারার কোনো সাড়া পাননি। এরপর দরজায় ধাক্কাধাক্কি করার সময় হার্ডবোর্ডের দরজার ছিটকিনি খুলে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় জান্নাতারাকে ঝুলন্ত দেখেন। হোস্টেল থেকে পুলিশকে খবর দেওয়ায়, তারা এসে জান্নাতারার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে।
ওসি জানান, জান্নাতারার কক্ষের টেবিলে কিছু বিষণ্নতামুক্ত থাকার ট্যাবলেট পাওয়া গেছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, জান্নাতারার দুবার বিয়ে হয়েছিল এবং প্রতিবারই বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছিল। পারিবারিক অশান্তির কারণে তিনি বিষণ্নতায় ভুগছিলেন, যা থেকে আত্মহত্যা করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
জান্নাতারার গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলার নজিপুর পৌরসভার পত্নীতলায়। তার বাবা কৃষক। এক ভাই ও দুই বোনের মধ্যে জান্নাতারা দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন। মৃত্যুর খবর শুনে তার চাচাতো ভাই মেহেদী হাসান ছুটে আসেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের সামনে তিনি জানান, জান্নাতারার দুই সন্তান রয়েছে—এক ছেলে (৪) ও এক মেয়ে (২)। তারা তাদের নিজ নিজ বাবার কাছে থাকে।
মেহেদী হাসান বলেন, দ্বিতীয়বার বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার পর জান্নাতারা বিষণ্নতায় ভুগছিলেন। এই বিষণ্নতার কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে মনে হচ্ছে। তিনি আরও জানান, জান্নাতারা সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র মেডিকেল কলেজ থেকে নার্সিং পাস করেছিলেন এবং গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।
জান্নাতারা এনসিপির ধানমন্ডি থানা শাখার যুগ্ম সমন্বয়ক ছিলেন। তাকে শেষবার দেখতে বিকেলে এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিনসহ কয়েকজন ঢাকা মেডিকেলের মর্গে যান। সেখানে সাংবাদিকদের সামান্তা শারমিন বলেন, ‘রুমির ঝুলন্ত মরদেহ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা কত বড় শত্রুর বিপক্ষে লড়াই করেছি। আওয়ামী লীগের পেজ থেকে বারবার হুমকি দেওয়া হয়েছে যে, রুমি হিট লিস্টে আছেন।’
তিনি বলেন, এই স্পষ্ট হুমকিসূচক কমেন্ট থাকা সত্ত্বেও অ্যাকাউন্টগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। রুমির মৃত্যুর দায়ভার রাষ্ট্রকেই বহন করতে হবে।
মরদেহ উদ্ধারের পর বেলা সাড়ে ১১টায় এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব তারেক রেজা নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি জানান, গত মাসে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রায়ের দিনে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জিয়ার কবর খুঁড়তে চাওয়া রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সময় আওয়ামী লীগের একজনকে পিটিয়ে পুলিশে দিয়েছেন জান্নাতারা। এরপর থেকে আওয়ামী লীগ জান্নাতারাকে সাইবার বুলিং, হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছিল বলে তিনি লিখেছেন। তারেক রেজা পোস্টে আরও বলেছেন, এ কারণে জান্নাতারা রাতেই আত্মহত্যা করেছেন।
তার পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা এটাকে আত্মহত্যা হিসেবে দেখতে রাজি নই। এটা খুন। যারা আমার বোনের জীবনকে তছনছ করেছে, তাদের জীবন আমরা শান্তিতে কাটাতে দেব না।’
দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুজ্জামান জান্নাতারার লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জান্নাতারার গলায় দাগ রয়েছে। তার মাথা, কপাল ও গালসহ শরীরের অন্য কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
সন্ধ্যায় স্বজনেরা জান্নাতারার মরদেহ নওগাঁয় নিয়ে গেছেন।

Comments
Comments