[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

হলুদে মোড়া শর্ষের মাঠে মৌমাছির ব্যস্ত গুঞ্জন

প্রকাশঃ
অ+ অ-
শেরপুরের ফসলের মাঠজুড়ে এখন শর্ষের হলুদ রাজ্য। সম্প্রতি নকলা উপজেলার পশ্চিম উরফা গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

সড়কের দুপাশে চোখ যত দূর যায়, কেবল হলুদের ছোঁয়া। হলুদ শর্ষে ফুলে ভরে থাকা খেতে মৌমাছিরা উড়ছে, মধু সংগ্রহে ব্যস্ত। ফুলের মিষ্টি গন্ধ আর মৌমাছির গুঞ্জনে চারপাশ যেন প্রাণচঞ্চল। শেরপুরের নকলা উপজেলার পশ্চিম উরফা গ্রামে সম্প্রতি এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

কৃষি বিভাগ জানায়, জেলার পাঁচটি উপজেলাতেই এবার শর্ষের আবাদ ভালো হয়েছে। মাঠজুড়ে ফুল দেখে কৃষকেরা ভালো ফলনের আশা করছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে তাঁদের প্রত্যাশা। ধান ও অন্যান্য ফসলের তুলনায় বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকেরা দিন দিন শর্ষে চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

কৃষক ও কৃষানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক একর জমিতে শর্ষে চাষে খরচ হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। তিন মাস মেয়াদি এই ফসল থেকে একরপ্রতি গড়ে ১৫ থেকে ১৭ মণ শর্ষে পাওয়া যায়। মৌসুমের শুরুতে বাজারে প্রতি মণ শর্ষে বিক্রি হয় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা দরে। এতে খরচ বাদ দিয়ে একরপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ থাকে। তবে শর্ষে চাষে তুলনামূলকভাবে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কিছুটা বেশি লাগে। শর্ষে কাটার পর ওই জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়। তখন সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন তুলনামূলক কম হয়।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে শেরপুর জেলার পাঁচটি উপজেলায় মোট ১৯ হাজার ২৬৪ হেক্টর জমিতে শর্ষের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৮৫১ হেক্টর, নকলা উপজেলায় ৫ হাজার ৯৯৫ হেক্টর, নালিতাবাড়ী উপজেলায় ২ হাজার ১৬৫ হেক্টর, শ্রীবরদী উপজেলায় ৪ হাজার ২৫৮ হেক্টর এবং ঝিনাইগাতী উপজেলায় ৯৯৫ হেক্টর জমিতে শর্ষে চাষ করা হয়েছে।

নকলা উপজেলার বারমাইশা গ্রামের কৃষক সেকান্দর আলী বলেন, ‘গত বছর নিজের খেতের শর্ষের বীজ সংরক্ষণ করেছিলাম। এবার সেই বীজ দিয়ে ৫০ শতক জমিতে শর্ষে আবাদ করেছি। ফুল ভালো এসেছে।’

নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার মোরসালিন বলেন, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে শর্ষে চাষ শুরু হয় এবং প্রায় ৯০ দিনের মধ্যেই ফসল কাটা যায়। এ ফসলে সেচের প্রয়োজন হয় না এবং চাষের খরচও তুলনামূলক কম। শর্ষে থেকে তেল, খৈল ও খড় পাওয়া যায়, যা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। পাশাপাশি জমির মাটির উর্বরতাও তুলনামূলকভাবে বাড়ে। এতে কৃষকেরা শর্ষে চাষে ভালো লাভ পান।

শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এবারের মৌসুমে কৃষকদের উন্নতমানের শর্ষের বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার শর্ষের ফলন ভালো হবে বলে তিনি আশা করছেন।

নকলা উপজেলার পশ্চিম উরফা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শর্ষের হলুদ ফুলে মাঠঘাট যেন নতুন রূপ পেয়েছে। মাঠে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। ফুলের গন্ধে চারপাশে মৌমাছির আনাগোনা বেড়েছে। সড়ক দিয়ে যাতায়াত করা পথচারীরাও দাঁড়িয়ে এই হলুদ সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। অনেকেই ছবি ও সেলফি তুলছেন।

ধানের তুলনায় বেশি লাভ হওয়ায় প্রতিবছরের মতো এবারও শর্ষে আবাদ করেছেন বলে জানান গ্রামের কৃষক ফিরুজ মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমি এক একর জমিতে শর্ষে চাষ করেছি। মাঠে ভালো ফুল এসেছে। আশা করছি ফলন ভালো হবে।’

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন