[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

তারেক রহমানের গণসংবর্ধনায় দেওয়া বক্তব্যে

প্রকাশঃ
অ+ অ-
গণসংবর্ধনায় বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরেছেন। এ উপলক্ষে জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়েতে গণসংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। এ সময় তিনি দলের নেতাকর্মী ও জাতীর উদ্দেশে বক্তব্য দেন। তার পুরো বক্তব্য- 

প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
কৃষক, শ্রমিক, গৃহবধূ নারী, পুরুষ, মাদ্রাসার ছাত্রসহ দল-মত নির্বিশেষে, শ্রেণি ও পেশার ভেদাভেদ ছাড়া সকল মানুষ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এই দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিজেদের অবদান রেখেছিল। আজ বাংলাদেশবাসী আবার তাদের কথা বলার অধিকার ফিরে পেতে চায়। তারা চায় তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে। তারা চায় যোগ্যতা অনুযায়ী ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত হোক।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আজ আমাদের সময় এসেছে। সকলে মিলে আমাদের দেশ গড়ার। এই দেশে যেমন পাহাড়ি মানুষ রয়েছে, ঠিক তেমনি সমতলের মানুষও আছে। মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এখানে বাস করে। আমরা চাই, সকলে মিলে এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলব, যা স্বপ্ন দেখেন একজন মা। আমরা চাই একটি নিরাপদ বাংলাদেশ, যেখানে নারী, পুরুষ, শিশু—যে কেউ হোক না কেন—নিরাপদে ঘর থেকে বের হতে পারবে এবং নিরাপদে ফিরে আসতে পারবে, ইনশাআল্লাহ।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা, এই দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী, ৪ কোটিরও বেশি তরুণ প্রজন্মের সদস্য, প্রায় ৫ কোটির মতো শিশু, ৪০ লক্ষের মতো প্রতিবন্ধী মানুষ, কয়েক কোটি কৃষক ও শ্রমিক রয়েছেন। এ সকল মানুষের রাষ্ট্র থেকে একটি প্রত্যাশা এবং আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। আজ যদি আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হই এবং প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, তাহলে আমরা এই লক্ষ কোটি মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে সক্ষম হব, ইনশাআল্লাহ।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা, ১৯৭১ সালে আমাদের শহীদরা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এমন একটি বাংলাদেশ গঠনের জন্য। বিগত ১৫ বছরে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে অসংখ্য মানুষ—শুধু রাজনৈতিক দলের সদস্য নয়, নিরপরাধ মানুষও—গুম ও হত্যার শিকার হয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ই আগস্টের ঘটনা তা স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে। আমাদের তরুণ প্রজন্ম কীভাবে জীবন উৎসর্গ করেছে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায়।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা, দিনগুলো আগে ২৪ এর আন্দোলনের একজন সাহসী সদস্য ওসমান হাদিকে হত্যা করা হয়েছে। ওসমান হাদি শহীদ হয়েছে। তিনি চেয়েছিলেন, এই দেশের মানুষের জন্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক, গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত হোক এবং মানুষ তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার ফিরে পাক। ২৪ এর আন্দোলনে শহীদ যারা হয়েছেন, ওসমান হাদিসহ ৭১ সালের শহীদরা এবং বিগত স্বৈরাচারের সময় নানা অত্যাচারের শিকাররা–আমাদের কাছে তাদের রক্তের ঋণ শোধ করার দায়িত্ব রয়েছে। আসুন আমরা সেই প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়ে তুলি, যেখানে সকলে মিলে কাজ করব এবং দেশকে দৃঢ় ভিত্তিতে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাব।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা, বিভিন্ন আধিপত্যবাদী শক্তির গুপ্তচররা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। আমাদেরকে ধৈর্যশীল হতে হবে এবং ধৈর্য ধারণ করতে হবে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের সদস্যরা, আপনাদেরই আগামী দিনে দেশের নেতৃত্ব গ্রহণ করতে হবে। দেশের উন্নয়নের জন্য গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্তিশালী করে, আপনাদের এই দায়িত্ব পালন করতে হবে।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আজ মঞ্চে বহু জাতীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত আছেন। আসুন আমরা দুহাত তুলে আল্লাহর দরবারে দোয়া করি। আল্লাহর রহমত আমরা চাই যেন এই দেশের নেতৃবৃন্দ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হন এবং দেশের জনগণের প্রত্যাশিত বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে পারি। আমাদেরকে যে কোনো মূল্যে শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। যে কোনো উসকানির মুখে আমাদেরকে ধীর ও শান্ত থাকতে হবে। আমরা দেশে শান্তি চাই, আমরা দেশে শান্তি চাই, আমরা দেশে শান্তি চাই।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা, মার্টিন লুথার কিং-এর নাম শুনেছেন তো? তিনি বলেছিলেন, ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম।’ আজ আমি আপনাদের সামনে বলতে চাই, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একজন সদস্য হিসেবে, ‘আই হ্যাভ এ প্ল্যান।’ এই পরিকল্পনা দেশের মানুষের স্বার্থে, দেশের উন্নয়নের জন্য এবং মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দেশের প্রতিটি মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। আপনারা যদি পাশে থাকেন এবং আমাদের সহযোগিতা করেন, ইনশাআল্লাহ আমরা ‘আই হ্যাভ এ প্ল্যান’ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব।

আসুন আমরা আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করি। হে রাব্বুল আলামীনের, হে একমাত্র মালিক, হে একমাত্র পরবারদিগার, হে একমাত্র সাহায্যকারী, হে দয়ালু, আমাদেরকে আপনার রহমত দান করুন। আপনার সাহায্যে আমরা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আমাদের প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়তে পারব। ইনশাআল্লাহ, আল্লাহর রহমত থাকলে আমরা সফল হব।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আজ আমরা সকলে মিলে প্রতিজ্ঞা করি, আগামী দিনে দেশের পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করলে আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ন্যায়পরায়ণতার পথ অনুসরণ করে দেশের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। আজ আমি আমার মা, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার কাছে যাব। তিনি এই দেশের মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। আপনাদের প্রার্থনা চাই যেন আল্লাহ তাঁকে সুস্থ রাখেন। সন্তান হিসেবে আমি চাই, যে মানুষগুলো দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের আমরা কখনো ভুলব না।

আজ আমরা নিশ্চিত করব যে ধর্ম, শ্রেণি, পেশা বা রাজনৈতিক দলের পার্থক্য নির্বিশেষে, আমরা দেশের শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষা করব। যে কোনো বিশৃঙ্খলা পরিহার করব এবং ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করব। মানুষ নিরাপদ থাকবে, শিশু, নারী, পুরুষ—সবার জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করব।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আসুন আমরা সকলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই। সবাই মিলে কাজ করব, সবাই মিলে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখব। ইনশাআল্লাহ, আমাদের বাংলাদেশ সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ হবে। এই দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে আমি আজ আমার বক্তব্য শেষ করছি এবং আপনাদের কাছে দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করছি।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন