[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

শামীম রেজার গ্রামে শোকের ছায়া

প্রকাশঃ
অ+ অ-
সুদানে হামলায় নিহত শামীম রেজার পরিবারের সদস্যদের আহাজারি। রোববার বিকেলে রাজবাড়ীর কালুখালীতে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক শামীম রেজার বাড়িতে চলছে মাতম। প্রিয়জন হারানোর বেদনায় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বাবা-মা, স্ত্রী ও স্বজনেরা। গ্রামজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

নিহত সৈনিক শামীম রেজার বাড়ি রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হোগলাডাঙ্গী গ্রামে। তাঁর বাবা আলমগীর ফকির। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে শামীম রেজা ছিলেন সবার বড়। পরিবার ও এলাকাবাসীর কাছে তিনি শান্ত স্বভাবের, দায়িত্বশীল এবং পরিশ্রমী একজন তরুণ হিসেবে পরিচিত।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শামীম রেজা ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগ দেন। চলতি বছরের ৭ নভেম্বর তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিতে বাংলাদেশ থেকে সুদানে যান। সেখানে দায়িত্ব পালনকালে শনিবার সন্ত্রাসীদের হামলায় তিনি নিহত হন।

আজ রোববার বিকেলে নিহত শামীম রেজার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উঠানজুড়ে স্বজন ও প্রতিবেশীদের ভিড়। পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের কান্না দেখে কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না। সদ্য নির্মিত একতলা বাড়ির ভেতরে শোকাহত মা এবং স্ত্রী বারবার আহাজারিতে মূর্ছা যাচ্ছেন। শোকের ভারে পুরো পরিবার নির্বাক হয়ে পড়েছে। কালুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সেনাবাহিনীর রাজবাড়ী ক্যাম্পের সদস্যরাও পরিবারের খোঁজখবর নিতে এসেছেন।

নিহত শামীম রেজার বাবা আলমগীর ফকির কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেছে। ছেলেটার দেড় বছর আগে বিয়ে হয়েছে। এখনো তার কোনো সন্তান হয়নি। কত স্বপ্ন ছিল ছেলেকে নিয়ে। অন্তত শেষবারের মতো আমার ছেলের লাশটা দেখতে চাই।’

নিহত শামীম রেজার ছোট ভাই সোহান ফকির বলেন, ‘গতকাল শনিবার রাতে টেলিভিশনে সুদানের ঘটনার খবর দেখার পর থেকেই আমরা ভীষণ দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ভাইয়ের মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। রাত ১২টার পর আমরা নিশ্চিত হই, আমার ভাই আর নেই। আগের দিন শুক্রবার সে বাড়িতে ভিডিও কলে কথা বলেছিল। তখনো কিছু বুঝতে পারিনি।’

নিহত সেনাসদস্য শামীম রেজা | ছবি: সংগৃহীত

শামীম রেজার মৃত্যুর খবরে এলাকায় নেমেছে শোকের আবহ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা এবং বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা নিহত সেনাসদস্যের বাড়িতে গিয়ে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। তাঁরা শামীম রেজার আত্মত্যাগের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

শামীম রেজার বাড়ি ঘুরে এসে কালুখালীর ইউএনও মো. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘দুঃসংবাদটি পেয়ে আমরা নিহত সেনাসদস্য শামীম রেজার বাড়িতে যাই। সেখানে পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেওয়ার পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে কিছু আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে, যেহেতু তিনি সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের করণীয় থাকলে তা-ও করা হবে।’

গতকাল শনিবার রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘের ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় ছয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। এই হামলায় আরও আট শান্তিরক্ষী আহত হয়েছেন। হতাহতরা সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। তারা আবেইর জন্য জাতিসংঘের অন্তর্বর্তী নিরাপত্তা বাহিনীতে (ইউএনআইএসএফএ) কর্মরত ছিলেন। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন