ফেসবুকে হাসিনার পক্ষে পোস্ট, ৫ মাস আগের মামলায় ঢাবির ডেপুটি রেজিস্ট্রার কারাগারে
| ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ লাভলু মোল্লাহ | ছবি: ফেসবুক ভিডিও থেকে নেওয়া |
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে রাজধানীর শাহবাগ থানার মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ডেপুটি রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ লাভলু মোল্লাহ শিশিরকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সাড়ে পাঁচ মাস আগে আওয়ামী লীগের ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীদের মিছিল করার ঘটনায় এ মামলা হয়। সোমবার শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর তাঁর পক্ষে অবস্থান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফটোকার্ড বানিয়ে পোস্ট করায় তাঁকে বাসা থেকে আটক করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় ঢাবির শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম মিয়া শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী জি এম কাউসার উল ইসলাম বলেন, ‘আজ আসামিকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়, কিন্তু আদালতে ওঠানো হয়নি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক তাঁকে কারাগারে রাখার আবেদন করেন। আসামির পক্ষে আমরা জামিন চেয়ে শুনানি করি। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুনানিতে আমরা বলেছি, গতকাল শেখ হাসিনার রায়ের প্রতিবাদ করে লাভলু মোল্লাহ ফেসবুকে পোস্ট করেন। রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী তাঁর বাসার সামনে মব তৈরি করে তাঁকে আটক করে। আটকের আগে তিনি ফেসবুক লাইভে আসেন। আটকের পর থেকে তাঁকে শাহবাগ থানায় রাখা হয়েছে। থানা পুলিশ সাড়ে পাঁচ মাস আগের মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। এ মামলার সঙ্গে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। মতপ্রকাশের কারণে তাঁকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। পরে আমরা জামিনের আবেদন জানাই।’
সাড়ে পাঁচ মাস আগের মামলায় এখন কেন গ্রেপ্তার দেখানো হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আলামিন বলেন, ‘আমার ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলেন।’ এরপর তিনি কল রেখে দেন।
জানা গেছে, লাভলু মোল্লাহ তাঁর ফেসবুক আইডিতে শেখ হাসিনার ছবিসংবলিত একটি ফটোকার্ড শেয়ার করেন, যেখানে লেখা ছিল—‘আই ডোন্ট কেয়ার’। ওপরে ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’।
আটকের আগে লাভলু ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। পোস্টে তিনি বলেন, ‘আমাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ঘণ্টা দুই ধরে মব করার জন্য কিছু লোক আমার বাসার সামনে এসেছে। পুলিশ এসেছে। আপনাদের কাছে আমি বললাম, আপনারা একটু দেখবেন। কারণ, আমি কোনো অন্যায় করিনি। শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’
কারাগারে আটকের আবেদনে বলা হয়, ‘আসামি (লাভলু মোল্লাহ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আক্তারুজ্জামানের পিএস হিসেবে কর্মরত ছিলেন। শাহবাগ থানা এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য অর্থ দিয়ে সহায়তা করার যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। মামলাটি তদন্তাধীন। এমতাবস্থায় মামলাটির সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তদন্ত কার্য সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে জেলহাজতে রাখা একান্ত প্রয়োজন। প্রকাশ থাকে, মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিদের নাম–ঠিকানা সংগ্রহপূর্বক গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনার জন্য আসামিকে পুলিশ রিমান্ডে পাওয়ার আবেদন প্রক্রিয়াধীন।’
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, এ বছরের ৩১ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাহবাগ থানাধীন কাঁটাবন মোড় এলাকায় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা স্লোগান দেন। ৫ মিনিট পর পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যান। পরের দিন ৯ জনকে এজাহারনামীয়, ৪০ থেকে ৫০ জনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় আসামি করে শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক কামাল উদ্দিন মিয়া মামলা করেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন