[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

নীরবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জাপা

প্রকাশঃ
অ+ অ-
জাতীয় পার্টি | গ্রাফিক্স: পদ্মা ট্রিবিউন 

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (জাপা) অংশ নিতে পারবে কিনা এখনো নিশ্চিত নয়। দলটির অংশগ্রহণ নিয়ে নানা সংশয় ও চ্যালেঞ্জ থাকলেও নেতারা নীরবে প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছেন।

জাপার প্রতিষ্ঠাতা হুসেইম মুহাম্মদ এরশাদের ভাই জিএম কাদেরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা প্রার্থী তালিকা ঠিক করার জন্য ইতিমধ্যে জেলাগুলোতে সফর শুরু করেছেন।

দলটির অভ্যন্তরীণ সূত্র পদ্মা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, সরকার অনানুষ্ঠানিকভাবে জাপাকে নির্বাচনের বাইরে রাখবে না বলে জানিয়েছে, যাতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখানো যায়। পাশাপাশি বিএনপি জামায়াতকেও চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে জাপাকে ভোটের বাইরে রাখার বিরুদ্ধে রয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও রাজনীতি বিশ্লেষক আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, ‘যেহেতু আওয়ামী লীগ নির্বাচনের বাইরে, তাই দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনা এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে জাপার অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।’

আইনগতভাবে ভোটে অংশগ্রহণে এখনো বাধা না থাকলেও দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল জাপার বিষয়ে ইতিবাচক নয়। তাই জাপা এখনও প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করছে না এবং কৌশলগতভাবে তফসিল ঘোষণার আগে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি অনুকূলে আসার অপেক্ষা করছে।

জামায়াত ইসলামী, এনসিপি এবং গণঅধিকার পরিষদসহ কিছু ছোট দল জাপাকে নিষিদ্ধ করে ভোটের বাইরে রাখতে চাইছে। তাদের অভিযোগ, জাপা আওয়ামী লীগকে ‘স্বৈরাচার’ হওয়ার পথে সহযোগিতা করেছে।

তবে দলগুলো যাই বলুক না কেন, জাপাকে বাইরে রেখে নির্বাচন করলে আওয়ামী লীগের আমলে হওয়া বেশিরভাগ নির্বাচনের মতো এবারের সংসদ নির্বাচনও বহির্বিশ্বের কাছে ‘একতরফা’ হিসেবে দেখা যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এটি দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে তখন যখন আওয়ামী লীগ নির্বাচনী দৌড়ের বাইরে।

এসব আলোচনার এবং সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে জাপা এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যে পরিস্থিতি, তাতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কোনো অবস্থা নেই। বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই আমরা আশা করছি সরকার জাপাসহ সব দলকে ভোটে অংশ নেওয়ার পরিবেশ করবে। এমনকী আওয়ামী লীগের ক্লিন ইমেজধারী নেতাদের বা দলটিকে রিফাইন্ড করে ভোটে আসার সুযোগ দেওয়া হবে।’

জাপা আওয়ামী লীগের ক্লিন ইমেজধারীদের মনোনয়ন দেবে কিনা জানতে চাইলে শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘শুধু আওয়ামী লীগ নয়, যেকোনো ভালো প্রার্থী পেলে আমরা মনোনয়ন দেবো।’

দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জাপা এবার প্রার্থী নির্বাচনে বেশ কৌশলীভাবে এগোচ্ছে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তাদের ভোট ব্যাংক কাজে লাগাতে চাইছে জাপা। তাই দল সরাসরি আওয়ামী লীগের পদ-পদবিতে না থাকলেও, বিভিন্ন ক্ষেত্রে জনপ্রিয় ব্যক্তিদের প্রার্থী করার চেষ্টা করছে। বর্তমানে প্রার্থী তালিকা ঠিক করতে জাপা নেতারা কাজ শুরু করেছেন। এরই মধ্যে প্রায় ২০০ আসনের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঠিক করা হয়েছে। ১৫ নভেম্বরের মধ্যে অবশিষ্ট আসনের তালিকাও করা হবে। বিশেষভাবে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি।

জাপা চায়, আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই সব আসনে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হোক। সে অনুযায়ীই কাজ করছেন নেতারা।

তবে দলটির নেতাদের মধ্যে নির্বাচন অংশগ্রহণ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন। তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন করতে পারব কিনা জানি না। এক দিকে সরকার, অন্য দিকে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল আমাদের বিপক্ষে। এই পরিস্থিতিতে ভোটে অংশ নেওয়া মানে প্রার্থী ও কর্মীদের জন্য জীবনের ঝুঁকি তৈরি হওয়া।’

মিলন বলেন, ‘জাপা নির্বাচন করতে চায়। আমরা দেখছি সরকার আসলেই নির্বাচনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারে কি না। দেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হলে জাপাকে নির্বাচনে রাখতে হবে।’

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে যায়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের মিত্র হিসেবে জাপা ‘তথাকথিত’ বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত ছিল।

সরকার পতনের পর জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ শীর্ষ নেতাদের নামে মামলা হয়। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর চলতি বছরের শুরু থেকে জাপা বিভিন্ন বিষয়ে সরকারবিরোধী অবস্থানে আসে। এছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জড়িত থাকার মামলাও থাকলেও শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তার হননি, যা দলের শক্তি নিয়ে জল্পনা বাড়িয়েছে।

গত ২৯ আগস্ট গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে হামলার শিকার হতে হয়, যা জাপা নিষিদ্ধের দাবিতে কর্মসূচি সংক্রান্ত। ওই হামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। এরপর জামায়াত, এনসিপি ও বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল জাপাকে ভোটের বাইরে রাখতে চায়। তবে বিএনপি কৌশলগতভাবে দলটিকে নিষিদ্ধের দাবি করে না।

১৯৮৬ সালে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে গঠিত জাপা এখন ছয় ভাগে বিভক্ত। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের পতনের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সরকারের অংশীজন ছিল জাপা। তাই সরকারের পতনের পর দলটি নাজুক অবস্থায় পড়েছে। 

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন