পিরোজপুরে গৃহবধূকে মারধরের পুরনো ভিডিও ভাইরাল, থানায় অভিযোগ দায়ের
| নারী নির্যাতন | প্রতীকী ছবি |
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলায় এক গৃহবধূকে (৩৫) ঘরে ঢুকে মারধর, বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ এবং চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে পাঁচজনের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার একটি পুরনো ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকায় নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। ভুক্তভোগীর পরিবার গত বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাতে নাজিরপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযুক্তরা হলেন হেলাল সিকদার (৩৫), মিলন সিকদার (৩৮), দেলোয়ার ওরফে দেলাল সিকদার (৩০), নান্নু সিকদার (৩৪) ও মামুন সিকদার (২৭)। তারা একই উপজেলার একটি গ্রামের বাসিন্দা।
অভিযোগে বলা হয়, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে গত বছরের ৬ আগস্ট রাতে পরিকল্পিতভাবে ওই গৃহবধূর ঘরে ঢুকেন হেলাল সিকদারসহ কয়েকজন। তখন তার স্বামী বাড়িতে ছিলেন না। এর আগে এক ব্যক্তি ওই গৃহবধূর স্বামীর খোঁজে বাড়িতে এসেছিলেন। পরকীয়ার অভিযোগ তুলে হেলাল সিকদার ও তার লোকজন গৃহবধূ ও ওই ব্যক্তিকে বেঁধে ফেলেন। এরপর তাদের বিবস্ত্র করে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে বিবস্ত্র অবস্থায় ওই ব্যক্তির বুকের ওপর পা দিয়ে চেপে ধরেন অভিযুক্তরা এবং পুরো ঘটনার ভিডিও ধারণ করে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, টাকা না পেয়ে অভিযুক্তরা ঘর থেকে প্রায় দুই লাখ টাকার স্বর্ণালংকার ও ২০ হাজার টাকা নিয়ে যান। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা না দেওয়ায় আপত্তিকর ভিডিওটি বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেন। এতে ভুক্তভোগী পরিবার মানসম্মান হারানোর ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।
মুঠোফোনে ওই গৃহবধূ জানান, ঘটনার দিন স্বামী বাড়িতে না থাকায় তিনি মেয়েকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ স্বামীর ব্যবসায়িক অংশীদার ওই ব্যক্তি বাড়িতে উপস্থিত হন। তিনি স্বামীর খোঁজ করছিলেন। ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে না দিতেই সুমন, হেলাল, নান্নুসহ কয়েকজন ঘরে ঢুকে পড়েন। এরপর তারা গৃহবধূ ও স্বামীর অংশীদারকে ধরে মারধর করতে থাকেন এবং ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র ও পিস্তল ঠেকিয়ে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়।
ওই গৃহবধূ বলেন, ‘আমি এখন বাড়ি যেতে পারি না, গেলে ১০ লাখ টাকা দিয়ে উঠতে হবে। ওরা আমার ঘরের সব মালামাল নিয়ে গেছে। আমি সুষ্ঠু বিচার চাই, আমার মালামাল ফেরত চাই।’
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হেলাল সিকদার। তিনি বলেন, ‘আমি ওই নারীর বাড়িতে একটু জায়গা কিনছি। এই জায়গা নিয়েই বিরোধের সূত্রপাত। যখনই দলিল চাই, তখনই ঝামেলা করে। ঘটনার দিন জনগণের সামনে মারছে, সেই দায় এখন আমার ওপর চাপানো হচ্ছে। যারা পরকীয়া হাতেনাতে ধরছে, তারাই ভিডিও করছে, সেটা এখন সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। আর দোষ পড়ছে আমার। আমি এর কিছুই জানি না।’
নাজিরপুর থানার ওসি মাহামুদ আল ফরিদ ভূঁইয়া জানিয়েছেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন