১০৭ বিশিষ্ট নাগরিকের দাবি, বন্দর ইজারার ‘গোপন চুক্তি’ বাতিল করুন
![]() |
| বিবৃতি | প্রতীকী ছবি |
বন্দর ইজারার ‘গোপন চুক্তি’ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন দেশের ১০৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক। আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তাঁরা চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল নিয়ে করা চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশেরও দাবি জানান।
চুক্তি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার যে চুক্তি হয়েছে, তা হয়েছে তাড়াহুড়া, অনিয়ম ও গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে। এই চুক্তির সময় বেছে নেওয়া হয়েছে শেখ হাসিনার মামলার রায়ের দিনকে।
বিশিষ্ট নাগরিকেরা বলেন, লালদিয়া ও পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনালের চুক্তিপ্রক্রিয়া ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ ত্রুটিপূর্ণ ও অস্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় বন্দর ব্যবহারকারীদের যুক্ত করা হয়নি; তাঁরা চুক্তির শর্ত বা বিষয় সম্পর্কে অবগত নন। চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনালের ক্ষেত্রেও একই ধরনের তাড়াহুড়া ও অস্বচ্ছতা দেখা যাচ্ছে।
গণমাধ্যমের তথ্য উদ্ধৃত করে বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) সরকারের পরামর্শক হিসেবে লালদিয়া ও পানগাঁও টার্মিনালের কনসেশন চুক্তি তৈরি করছে। তাদের পরামর্শেই পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকার এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার টার্মিনালগুলো বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। একইভাবে সম্প্রতি বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানোর সিদ্ধান্তও আইএফসির পরামর্শে নেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, জনগণের প্রশ্ন—কেন শুধু আইএফসির পরামর্শে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে? কেন বন্দর ব্যবহারকারী বা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হয়নি? বিভিন্ন দেশে বিশ্বব্যাংক বা তাদের সহযোগী আইএফসির ভূমিকা দেখলে বোঝা যায়, তারা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জনস্বার্থ বা জাতীয় স্বার্থ দেখে না; বরং যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের স্বার্থই দেখে। বাংলাদেশে জ্বালানি, পাট, শিক্ষা, চিকিৎসা, পানি– এসব ক্ষেত্রে আইএফসির বিরূপ ভূমিকাও রয়েছে।
অতীতে হওয়া বিদেশি ঋণচুক্তির উদাহরণ তুলে তাঁরা বলেন, বিদেশি ঋণচুক্তি বা মেট্রোরেল প্রকল্পের অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে—গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রকল্পে সময় নিয়ে অংশীজনদের মতামত না নিলে প্রকল্পের ব্যয় ও কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একইভাবে লালদিয়া, পানগাঁও ও নিউমুরিং টার্মিনালের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি জাতীয় স্বার্থের জন্য হুমকি হতে পারে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এলেও চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের দিতে গিয়ে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো বিস্তৃত আলোচনা করেনি। তাঁরা বলেন, অতীত সরকারের সময়ে এ ধরনের উদ্যোগে কমিশনভোগীদের গোপন সংশ্লিষ্টতা ছিল—যা থেকে বাংলাদেশ মুক্তি চেয়েছিল সাম্প্রতিক গণ–অভ্যুত্থানে।
বিশিষ্ট নাগরিকেরা বলেন, ‘আমরা চাই না, অতীতের মতো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদ নিয়ে গোপনে কোনো চুক্তি হোক। চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন টার্মিনাল নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে স্বচ্ছভাবে। বন্দরের মতো কৌশলগত সম্পদের চুক্তি করার আগে শর্ত প্রকাশ করতে হবে।’
চুক্তিতে সর্বজনের সম্মতি প্রয়োজন উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, আগামী নির্বাচনে যে সংসদ গঠিত হবে, সেখানে বিস্তৃত আলোচনার মধ্য দিয়ে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাই ১৭ নভেম্বর করা চুক্তি অবিলম্বে বাতিল করে, জনসমক্ষে সেই চুক্তির খসড়া প্রকাশ করতে হবে।
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন আনু মুহাম্মদ, সলিমুল্লাহ খান, খালিকুজ্জামান ইলিয়াস, মঈনুল আহসান সাবের, কামরুল হাসান মামুন, আলতাফ পারভেজ, আজফার হোসেন, ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, নূরুল আলম আতিক, ফিরোজ আহমেদ, মাহা মীর্জা, অরূপ রাহী, সৈয়দ নিজার, সামিনা লুৎফা, শেখ তাসনিম আফরোজ (ইমি), মেঘমল্লার বসু, হেমা চাকমা, রেজাউর রহমান লেনিন, নাহিদ হাসান, কল্লোল মোস্তফা, মানজুর–আল–মতিন, মীর হুযাইফা আল মামদূহ, মারজিয়া প্রভা, মোশাহিদা সুলতানা, জামসেদ আনোয়ার তপন প্রমুখ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন