শুভ জন্মদিন হুমায়ূন আহমেদ
![]() |
| হুমায়ূন আহমেদ | গ্রাফিক্স: পদ্মা ট্রিবিউন |
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে, নাটক বানানোর জন্য। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে হুমায়ূন ও ফারুক গল্প করছিলেন। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি দেশের তরুণদের মনে বেঁচে আছেন। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে তিনি উপস্থিত আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট বয়সে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে দিতেন। তাঁর নাম পরিবর্তন করে হুমায়ূন আহমেদ রাখা হয়। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়, ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব বারবার উঠে এসেছে। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চাঁদনি, বৃষ্টি, প্রকৃতির রূপ আজও তরুণদের মনে জেগে আছে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে আরও স্মৃতিচারণ করেছেন—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তিনি প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে এলেন। বললেন, গাছে উঠে যত পারে লিচু খাও। বাচ্চারা গাছে উঠতে লাগল, খেতে লাগল, হইচই করল। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই দৃশ্য দেখলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্যভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই, এমন অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে নানা আয়োজন হচ্ছে। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং স্থানীয়দের উদ্যোগে কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী ও হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের নাটক ও চলচ্চিত্রের অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
রাজধানীতেও হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে দিনটি উদযাপিত হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন