প্রাথমিকে সংগীতের শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্তে উদ্বেগ
| এইচআরএফবি ও আসক |
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ প্রস্তাব বাতিলের সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)। সংস্থাটি মনে করে, সরকারের এ সিদ্ধান্ত শুধু অযৌক্তিক নয়, বরং একটি বিশেষ গোষ্ঠীর চাপে প্রাথমিক শিক্ষার কাঠামো থেকে এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ জানিয়ে এইচআরএফবি সরকারের কাছে দাবি করেছে, সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করে পুনরায় শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা চালু করা হোক।
সংস্থাটির ভাষ্য, সরকারের যুক্তি হলো, এত অল্পসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ করলে কার্যকর সুফল পাওয়া যাবে না এবং এতে বৈষম্যও হতে পারে। বর্তমানে দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে এই নিয়োগকাঠামো বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তবে ভবিষ্যতে অর্থের সংস্থান অনুযায়ী ধাপে ধাপে সব স্কুলে নতুন বিষয়ের শিক্ষক পদ সৃষ্টি এবং নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।
তবে এইচআরএফবি মনে করে, এই ব্যাখ্যা কেবল বাস্তব কারণ আড়াল করার চেষ্টা। কারণ, গত ২৮ আগস্ট প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা জারির পর থেকেই কয়েকটি রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক গোষ্ঠী প্রকাশ্যে সংগীত শিক্ষকের বদলে ‘ধর্ম শিক্ষক’ নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল। তারা একাধিক সভা, সমাবেশ ও বিক্ষোভে এই সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে আন্দোলনের হুমকিও দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের আচমকা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন দেখাচ্ছে, যে তারা গোষ্ঠীগত চাপের মুখে নীতিগত অবস্থান থেকে সরে গেছে।
এইচআরএফবি মনে করে, সরকারের উচিত ছিল বাজেট বা পরিকল্পনার সীমাবদ্ধতার অজুহাত দেখিয়ে না থেমে ধাপে ধাপে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পথ খোঁজা। পরিবর্তে তারা একটি গোষ্ঠীর চাপের মুখে প্রাথমিক শিক্ষার কাঠামো থেকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ দিয়েছে, যা গণতান্ত্রিক ও বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের জন্য নেতিবাচক দৃষ্টান্ত।
পশ্চাৎমুখী পদক্ষেপ: আসক
বুধবার আরেক বিবৃতিতে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ প্রস্তাব বাতিল করা শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং মানবিক মূল্যবোধ গঠনের ক্ষেত্রে একটি অনভিপ্রেত ও পশ্চাৎমুখী পদক্ষেপ।
আসক মনে করছে, আপাতদৃষ্টিতে সরকারের ব্যাখ্যা যুক্তিসংগত হলেও বাস্তবে এটি পরিকল্পনার ত্রুটির চেয়ে রাজনৈতিক চাপের ফলাফল বেশি।
তারা বলেন, পরিকল্পনার ত্রুটি থাকলে সেটির সমাধান হওয়া উচিত যুক্তিসংগত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে; বাতিল করে নয়। শিক্ষাবিষয়ক কোনো নীতি কখনোই ধর্মীয় বা রাজনৈতিক চাপের ভিত্তিতে নয়, বরং যুক্তি, সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানবিক মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে প্রণীত হওয়া উচিত।
এছাড়া বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রও বলেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষানীতির মূল ভাবনার বিরোধী। বুধবার এক বিবৃতিতে তারা এই সিদ্ধান্ত পরিহার করে দ্রুত সৃজনশীল শিল্প ও ক্রীড়া শিক্ষকের নিয়োগের দাবি জানিয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন