বিএনপি প্রার্থীর জনসংযোগে খুন: কর্মীদের ভিড়ে মিশে সরোয়ারের ঘাড়ে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি
![]() |
| চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থীর জনসংযোগের সময় গুলিবর্ষণ করা হচ্ছে | ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া |
চট্টগ্রাম নগরে বুধবার সন্ধ্যায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর জনসংযোগ চলছিল। জনসংযোগের বহর এগোতে এগোতে স্লোগান দিচ্ছিল। হঠাৎ গুলির শব্দ শোনা যায়। সঙ্গে সঙ্গে ছত্রভঙ্গ হয়ে যান নেতা–কর্মীরা।
ঘটনাটি ঘটে নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার চালিতাতলী খন্দকারপাড়া এলাকায়। সেখানে তখন নির্বাচনী জনসংযোগ করছিলেন চট্টগ্রাম–৮ আসনের বিএনপির প্রার্থী এবং নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ।
এ ঘটনায় এরশাদ উল্লাহসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। জনসংযোগের বহরে থাকা সরোয়ার হোসেন নিহত হন। বাকি সবাই নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশ জানায়, সরোয়ারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অস্ত্র এবং হত্যাসহ ১৫টি মামলা রয়েছে।
নগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ বলেন, এরশাদ উল্লাহ শঙ্কামুক্ত রয়েছেন। তাঁর পেটে ছররা গুলি লেগেছে।
![]() |
| গুলিতে নিহত সরোয়ার হোসেন | ছবি: সংগৃহীত |
গুলিবর্ষণের ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, এরশাদ উল্লাহ নেতা–কর্মীদের সঙ্গে প্রচারপত্র বিলি করতে করতে এগোচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সরোয়ার হোসেনও। হঠাৎ এক যুবক কর্মীদের ভিড়ে ঢুকে সরোয়ারের ঘাড়ে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি চালান। একের পর এক সাত থেকে আটটি গুলি করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরাও একই কথা জানিয়েছেন। গুলিবর্ষণের ঘটনায় এরশাদ উল্লাহ ছাড়াও আহত হন পাঁচলাইশ তিন নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইরফানুল হক ওরফে শান্ত, বিএনপি কর্মী আমিনুল হক ও মুর্তজা হক। তাঁদের মধ্যে ইরফানুল হকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
পুলিশ জানিয়েছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীর সঙ্গে সরোয়ার হোসেনের বিরোধ ছিল। এর আগে গত ৩০ মার্চ নগরের বাকলিয়া এক্সেস রোড এলাকায় সরোয়ারকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। সেদিন ঘটনাস্থলে দুজন মারা যান। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান সরোয়ার।
গুলিতে আহত ইরফানুল হকের খালাতো ভাই ও স্থানীয় ৩ নম্বর পাঁচলাইশ ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রশিদ বলেন, ‘মাগরিবের নামাজের পর মসজিদের পাশে দোকানে জনসংযোগ চালানোর জন্য আমরা নেতা–কর্মীরা এরশাদ উল্লাহসহ যাই। হঠাৎ মাস্ক পরা কয়েকজন পেছন থেকে এসে সরোয়ারের ঘাড়ে–গলায় গুলি চালায়। গুলির শব্দ পেয়ে নেতা–কর্মীরা সবাই এদিক–ওদিক ছুটতে থাকে। পরে দেখি মাটিতে পড়েছেন সরোয়ার। মৃত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।’
নিহত সরোয়ারের ভাই আজিজ হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমার ভাইকে হত্যা করার জন্য সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের লোকজন হুমকি দিচ্ছিল। সপ্তাহ পার না হতে ফোন করে বলা হতো, ‘যা খাবার খেয়ে নিতে।’ এ জন্য আমরা সতর্ক ছিলাম। কিন্তু এরশাদ উল্লাহর জনসংযোগে নিরাপত্তা থাকবে এই আশায় আমার ভাইসহ আমরা অংশ নিই।’
আজিজ হোসেন দাবি করেন, সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের সহযোগী মো. রায়হানসহ কয়েকজন সরাসরি এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চারজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, খুনে অংশ নেওয়া সন্ত্রাসীরা জনসংযোগে আসা বিএনপির লোকজনের সঙ্গে মিশে যান। তারা একটি মাইক্রোবাসে করে ঘটনাস্থলে আসে।
সরোয়ার এক মাস আগে বিয়ে করেছিলেন। তাঁর বিয়েতে বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহসহ বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর কারাগার থেকে জামিনে বের হওয়ার পর সরোয়ারকে বিএনপির বিভিন্ন সমাবেশে যোগ দিতে দেখা গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ঘটনার সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। বিএনপির প্রার্থী গণসংযোগ করার সময় সেখানে শত শত লোক অংশ নেন। সরোয়ার সেখানে অংশ নিলে সন্ত্রাসী দুটি দলের মধ্যে পূর্ববিরোধের কারণে তাঁকে গুলি করা হয়।
![]() |
| বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে চট্টগ্রাম নগরের বেসরকারি হাসপাতাল এভারকেয়ারে ভিড় করেন নেতা–কর্মীরা। বুধবার রাতে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
আহত ব্যক্তিদের নগরের এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে বুধবার রাতে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ সাংবাদিকদের বলেন, এই হত্যাকাণ্ড যারা করতে পারে, তাদের ব্যাপারে পুলিশের অনুমান আছে। মূল টার্গেট ছিল সরোয়ার, এরশাদ উল্লাহ নয়। এ ঘটনার মূল কুশীলবদের অনেকেই জেলে আছে। অপরাধীদের একজন শীর্ষ ব্যক্তি জেলে আছেন, তাঁর স্ত্রীসহ। তারা প্রত্যন্ত এলাকায় পালিয়ে থাকে। মোটরসাইকেল নিয়ে এসে তারা ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। কিলিং মিশনে যারা ছিল, তাদের শনাক্ত করার জন্য কিছু আলামত পাওয়া গেছে। অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
কমিশনার আরও বলেন, ‘নির্বাচনের আগে চট্টগ্রামে এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড উদ্বেগজনক। আমি বলব, বিএনপি–জামায়াতসহ যেকোনো দল যদি জনসভা বা গণসংযোগ করতে চায়, ২৪ ঘণ্টা আগে পুলিশকে জানান। পুলিশ সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এরশাদ উল্লাহ বিকেলে গণসংযোগের আগে আমার কার্যালয়ে ছিলেন। তিনি আমাকে একবারও বলেননি চালিতাতলীতে গণসংযোগ করবেন। এমনকি বায়েজিদ থানা–পুলিশও কিছু জানত না।’
বুধবার রাত ১১টার দিকে বায়েজিদ বোস্তামী থানার চালিতাতলী খন্দকারপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সব দোকানপাট বন্ধ। এলাকার মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় কেউ ভয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, সাধারণত রাত ১২টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা থাকে এবং মানুষ চলাচল করে। কিন্তু আতঙ্কে এলাকাবাসী ঘর থেকে বের হতে সাহস পাচ্ছেন না।
ঘটনাস্থলে পিবিআই’র কর্মকর্তারা বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করতে দেখা গেছে।



Comments
Comments