[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

বাজারে আগাম সবজি কম, দাম বেশি

প্রকাশঃ
অ+ অ-
শীতকালীন সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন   

শীতের মৌসুম শুরু হলেও রাজধানীর বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ এবার কম। এ কারণে দামও চড়া। বাজারে অধিকাংশ সবজির কেজি ৮০ টাকার বেশি, কিছু সবজির দাম ১০০ টাকার ওপরে পৌঁছাচ্ছে।

বছরের এপ্রিল থেকে অক্টোবর সময়টা মূলত গ্রীষ্ম ও বর্ষার। এ সময়ে মাছ, মাংস ও ডিমের দাম তুলনামূলকভাবে বেড়ে যায়। ফলে সবজির ওপরও চাপ পড়ে। সরবরাহ থাকলেও দাম থাকে বেশি। শীতের আগাম সবজি বাজারে আসতে শুরু করলে দাম কমতে শুরু করে। সাধারণত সেপ্টেম্বর–অক্টোবর মাসে শীতের আগাম সবজি বাজারে আসে।

বিক্রেতারা বলছেন, এ বছর শীতের আগাম সবজি বাজারে তুলনামূলক বেশি সময় নিয়ে এসেছে। তাই দীর্ঘ সময় ধরে বাজারে দাম চড়া ছিল। তবে গত কয়েক দিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ফুলকপি, শিমসহ শীতের আগাম কিছু সবজি আসতে শুরু করেছে। এর ফলে এসব সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। বিক্রেতারা জানান, অক্টোবরের শুরুতেই আগাম সবজি বাজারে আসার কথা ছিল, কিন্তু এবার বেশ দেরিতে এসেছে।

দেশে সবজির অন্যতম উৎপাদনস্থল যশোর। যশোর সদর উপজেলার নোঙরপুর গ্রামের কৃষক বদরুল আলম এ বছর ৪০ শতক জমিতে আগাম মুলা চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে ২৫ শতক জমির মুলা তিনি বিক্রি করেছেন। তিনি জানান, আবহাওয়ার কারণে এ বছর আগাম সবজি তুলতেও দেরি হয়েছে।

এ বছর একটা লম্বা সময় ধরে বিভিন্ন অঞ্চলে টানা বৃষ্টি হয়েছে। ফলে বৃষ্টির সময়ে কেউ আগাম সবজি চাষের ঝুঁকি নেননি। এ কারণে আগাম শীতকালীন সবজি অক্টোবরের শেষে বাজারে আসা শুরু হয়েছে।

— আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ, অধ্যাপক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার বলেন, এ বছর সেপ্টেম্বর–অক্টোবর মাসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে অনেক কৃষক ওই সময়ে আগাম সবজি চাষ করতে পারেননি। চাষ শুরু করতে দেরি হওয়ায় সবজি তোলাও দেরিতে হয়েছে। এতে বাজারেও প্রভাব পড়েছে।

কৃষিবিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি বছর আগাম সবজি চাষে দেরি হওয়ার পেছনে সেপ্টেম্বর–অক্টোবরের টানা বৃষ্টি একটি বড় কারণ। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ সময়ে হঠাৎ টানা বৃষ্টি হয়। সামনের বছরগুলোতেও এমন পরিস্থিতি আসতে পারে বলে তারা সতর্ক করেছেন।

এ বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে অনেক কৃষক ওই সময়ে আগাম সবজি চাষ করতে পারেননি। চাষাবাদ শুরু করতে দেরি হওয়ায় সবজি পেতেও দেরি হয়েছে।
ইমরান মাস্টার, সভাপতি, কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতি

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ জানান, দেশে ফসল উৎপাদন মূলত প্রকৃতিনির্ভর পদ্ধতিতে এবং খোলা মাঠে হয়। এ ক্ষেত্রে বৃষ্টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে গত কয়েক বছরে দেশে বৃষ্টির ধরন পরিবর্তন হয়েছে। কখনো খুব বেশি বৃষ্টি হয়, কখনো কম। এ বছর বিভিন্ন অঞ্চলে লম্বা সময় ধরে টানা বৃষ্টি হয়েছে। ফলে বৃষ্টির সময়ে কেউ আগাম সবজি চাষের ঝুঁকি নেননি। এ কারণে সাধারণত সেপ্টেম্বর–অক্টোবর মাসে যেখানে আগাম শীতকালীন সবজি বাজারে চলে আসে, এবার তা অক্টোবরের শেষ দিকে আসা শুরু হয়েছে। এটিই বাজারে সবজির দাম কম না হওয়ার একটি কারণ।

তিনি আরও জানান, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে খাদ্যের চাহিদা মেটাতে কৃষিতে প্রযুক্তিনির্ভর অভিযোজন ছাড়া উপায় নেই। কম খরচে পলিথিনের শেড তৈরি করে সবজি চাষ করা সম্ভব, যা বৃষ্টি বা তাপমাত্রার পরিবর্তনে তেমন প্রভাবিত হয় না। পাতাজাতীয় শাকসবজি, মরিচ, টমেটো, বেগুন ও শসার মতো ফসল এতে সহজে উৎপাদন করা যায়। উৎপাদন স্থিতিশীল থাকলে বাজারে সবজির সরবরাহ ঠিক থাকে এবং কৃষকরাও ভালো দাম পাবেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর অতিবৃষ্টির কারণে দুই দফায় সবজির ক্ষতি হয়েছে। গত আগস্টে প্রায় ১৮ দিনের বৃষ্টিতে ৩৫১ হেক্টর জমি এবং সেপ্টেম্বরে ১৫ দিনে ১২৪ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, শীতের আগাম সবজি আসতে উল্লেখযোগ্য দেরি হয়নি। স্থানভেদে কোথাও কয়েক দিনের দেরি হলেও তা সার্বিক চিত্র নয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, ‘আগাম সবজির সরবরাহ কম—এটি ব্যবসায়ীদের সাধারণ বক্তব্য। আমাদের তথ্য অনুযায়ী, শীতের আগাম সবজি ইতিমধ্যে বাজারে এসেছে। দেশের সব বাজারেই এখন আগাম সবজি পাওয়া যায়। দামও সহনীয়। আগাম সবজি কম থাকলে দাম আরও বেশি হওয়ার কথা ছিল।’

বৃষ্টির কারণে সবজি আসতে দেরি হয়েছে কি না—এ প্রসঙ্গে ওবায়দুর রহমান বলেন, সারা দেশে একসঙ্গে টানা বৃষ্টি হয়নি। শুধু কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, রংপুরের কয়েকটি জেলা এবং চট্টগ্রামের কিছু নিচু এলাকায় অতিবৃষ্টির প্রভাব পড়েছে। বগুড়া ও যশোর অঞ্চলে বৃষ্টির তেমন প্রভাব পড়েনি।

অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, চলতি বছর শীতকালে (রবি মৌসুম) প্রায় ৬ লাখ ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ২৯ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আগাম সবজি চাষ হয়েছে। আগাম সবজি চাষ হওয়া জমিতে আবারও সবজি চাষ হবে। গত বছর শীত মৌসুমে মোট ৬ লাখ ৪২ হাজার হেক্টরে সবজি চাষ হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, বৃষ্টির অস্বাভাবিকতা এবং লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে কৃষিতে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আধুনিক প্রযুক্তির চাষাবাদ বাড়ানো জরুরি। বিশেষ করে এক ফসলি জমিকে দুই বা তিন ফসলি করা এবং নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো প্রয়োজন।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন