লেনদেন স্বাভাবিক রাখতে সক্রিয় প্রশাসকেরা
![]() |
| বাংলাদেশ ব্যাংক |
একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে উদ্যোগ নিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ করা প্রশাসকেরা। গ্রাহকদের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁরা আমানত ফেরতের নিশ্চয়তা দিচ্ছেন। পাশাপাশি গ্রাহকেরা যাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা চাহিদামতো তুলতে পারেন, সে ব্যবস্থাও নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। এ ছাড়া প্রবাসীদের পাঠানো আয় যাতে তাঁদের পরিবারের সদস্যরা সময়মতো পান, সেদিকেও নজর রাখতে বলা হয়েছে ব্যাংক পাঁচটিকে।
গত বুধবার এই পাঁচ ব্যাংকে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে আদেশ জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর দুই দফায় প্রশাসক দলের সঙ্গে অনলাইনে আলোচনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এ সময় তিনি বিভিন্ন নির্দেশনা দেন এবং ব্যাংকগুলোর সার্বিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। ব্যাংকগুলো গভর্নরকে জানায়, দায়িত্ব নেওয়ার পর চট্টগ্রাম অঞ্চলের একটি শাখায় টাকা তোলার অস্বাভাবিক চাপ তৈরি হয়েছিল। তবে অন্যত্র পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল।
এর মধ্যে দুটি ব্যাংকের প্রশাসক দল গ্রাহকদের সঙ্গে আলাদা সভা করেছে। তাঁরা ঢাকার বাইরেও গ্রাহকদের সঙ্গে সভা করার পরিকল্পনা করছেন। এসব বৈঠকে প্রশাসকেরা গ্রাহকদের আমানত নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার অনুরোধ জানান। তাঁরা বলেন, সরকার এখন ব্যাংকগুলোর দায়িত্ব নিয়েছে, তাই আমানত নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রশাসক দলকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যেন কোনোভাবে ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ না হয়। এ জন্য শুরু থেকেই ব্যাংকগুলোর আর্থিক পরিস্থিতি ভালোভাবে বুঝে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো এখন দৈনিক ভিত্তিতে কত টাকা জমা পড়ছে এবং কত টাকা উত্তোলিত হচ্ছে, সেই হিসাব রাখছে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলো কীভাবে একীভূত করা যায়, তা নিয়েও কাজ শুরু করেছেন প্রশাসকেরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকগুলোর প্রধান কাজ হবে প্রযুক্তি ব্যবস্থা একীভূত করা। এতে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, পাঁচ ব্যাংক তিন ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। এছাড়া ব্যাংকভেদে সেবার ধরনও ভিন্ন। নতুন কোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করা হবে, নাকি বর্তমান সফটওয়্যারের কোনোটি বেছে নেওয়া হবে—এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর জনবল ও শাখা ব্যবস্থাপনাও বড় চ্যালেঞ্জ। আপাতত সব জনবল রেখে কিছু শাখা অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। পাশাপাশি আমানত বিমা তহবিল থেকে গ্রাহকদের দুই লাখ টাকা পর্যন্ত দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। চলতি মাসেই এ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। সেই প্রজ্ঞাপনে গ্রাহকেরা কখন থেকে টাকা তুলতে পারবেন, তা স্পষ্টভাবে জানানো হবে।
এক্সিম ব্যাংকের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শওকাতুল আলম। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্ব নিয়েছেন নির্বাহী পরিচালক সালাহ উদ্দিন। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্ব নিয়েছেন নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদার। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্ব নিয়েছেন পরিচালক মো. মোকসুদুজ্জামান। ইউনিয়ন ব্যাংকের দায়িত্ব নিয়েছেন আরেক পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেম। তাঁদের সঙ্গে আরও চারজন করে কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে পাঁচ ব্যাংকে মোট ২৫ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন