[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

মাদারীপুরে মহাসড়ক আটকে ৩ ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ, অর্ধশত ককটেল বিস্ফোরণ

প্রকাশঃ
অ+ অ-
মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মহাসড়ক আটকে দুই পক্ষের লোকজনের সংঘর্ষ। মঙ্গলবার বিকেলে সদর উপজেলার মস্তফাপুর এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের লোকজন মঙ্গলবার বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সদর উপজেলার মস্তফাপুর গোলচত্বরে বিরতিহীন সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এই সময় অর্ধশত ককটেল বিস্ফোরণ হয়ে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

সংঘর্ষে ছয়টি দোকান ও চারটি বসতঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। এর কারণে মাদারীপুর-চাঁদপুর-শরীয়তপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে প্রায় দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে সাধারণ যাত্রী ও যানচালকেরা তীব্র যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মস্তফাপুর গোলচত্বর এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাবিব হাওলাদার ও ইদ্রিস হাওলাদারের সঙ্গে শামচু সরদার বা কোপা শামচুর দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিরোধ চলে আসছিল। সম্প্রতি একটি বিস্ফোরক মামলায় র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন শামচু সরদার। জামিনে বের হয়ে আজ সকালে হাওলাদার বংশের এক কিশোরকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে, যা সংঘর্ষের মূল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

সংঘর্ষে অর্ধশত ককটেল বিস্ফোরণ হয় এবং ছয়টি দোকান ও চারটি বসতঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে তাদের লক্ষ্য করে কয়েকটি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। পরে স্থানীয় বিএনপির নেতা ও কৃষক দলের সদস্যসচিব অহিদুজ্জামান ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। সন্ধ্যা ছয়টা থেকে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

সংঘর্ষে আহত ১০ জনকে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে হানিফ সরদার (২৬) আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি, আর জুবায়ের হাওলাদার মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

মাদারীপুরে দুটি মহাসড়ক অবরোধ করে দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে তিন ঘন্টা ধরে বিরতিহীনভাবে চলে সংঘর্ষ। মঙ্গলবার বিকেলে সদর উপজেলার মস্তফাপুর এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বিকেল পাঁচটার দিকে মস্তফাপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মস্তফাপুর গোলচত্বরের পূর্ব দিকে হাওলাদার বাড়িতে হামলা চলছে। কিছুক্ষণ পর হাওলাদার বাড়ির লোকজন একত্র হয়ে পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছেন মস্তফাপুর বাসস্ট্যান্ডের পাশে উত্তর-পূর্ব দিকে সরদার বাড়িতে। উভয় পক্ষের হাতে টেঁটা, বল্লম, ফলা, সড়কি, কাতরা, রামদা দেখা গেছে।

ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাবিব হাওলাদার অভিযোগ করেছেন, ‘শামচু সরদার এলাকায় সন্ত্রাসীদের লালন পালন করেন। তাঁর কারণে আজ এই সংঘর্ষ। তিনি নিজে বোমা তৈরি করেন, মাদকের ব্যবসা করেন। তাঁর বিরুদ্ধে খুন, মাদক, ডাকাতিসহ ১২টি মামলা আছে। সম্প্রতি র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন। জামিনে বের হয়ে শামচু আমাদের হুমকি দিতে থাকেন। আজ তিনি তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমাদের লোকজনের ওপর হামলা চালালে আমরা তা প্রতিহত করেছি।’

অভিযোগ অস্বীকার করে শামচু সরদার বলেন, ‘হাওলাদার বংশের লোকজন আমাদের ওপর হামলা করেছে। বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি। পুলিশ ব্যবস্থা না নেওয়ায় পাল্টা জবাব দেওয়া হয়েছে।’

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ফারিহা রফিক ভাবনা জানান, ‘মস্তফাপুরে হাওলাদার ও সরদার দুই গ্রুপের সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আমরা উপস্থিত হই। আমাদের সঙ্গে পুলিশ, র‍্যাব, ডিবি ও সেনাবাহিনী ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। মহাসড়কের যানবাহন ও যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ট্রাফিক পুলিশ যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে থেমে থেমে বাস চললেও মাদারীপুর-চাঁদপুর-শরীয়তপুর সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকলেও সন্ধ্যা ছয়টার পর সবকিছু স্বাভাবিক হয়েছে।’

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘পুলিশ উভয় পক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে তারা পুলিশের দিকে হাতবোমা নিক্ষেপ করে। কেউ আইন মানছে না। পুলিশ সর্বোচ্চ ধৈর্য ধরে শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছে। যারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা–ভাঙচুর করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন