রাজশাহীতে আরডিএ কমপ্লেক্সে সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র চেয়ে মানববন্ধন
![]() |
| রাজশাহীর আরডিএ কমপ্লেক্স ভবনটি বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবিতে মানববন্ধন। আজ শনিবার দুপুরে নগরীর তালাইমারী মোড়ে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
রাজশাহীর আরডিএ কমপ্লেক্স একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে সেখানে ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র’ করার দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে নগরীর তালাইমারী মোড়ে অবস্থিত ওই কমপ্লেক্সের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ভবনটি মূলত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্র হিসেবে নির্মিত হলেও এখন তা সেই উদ্দেশ্যে ব্যবহার হচ্ছে না। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) জনবিরোধীভাবে এটি লিজ দিয়েছে, যা নিন্দনীয়। বক্তারা অবিলম্বে এই ইজারা বাতিল করে ভবনটিকে ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তোলার দাবি জানান।
বক্তারা আরও বলেন, রাজশাহীতে জুলাই অভ্যুত্থানের সময় মতিহার চত্বর, অর্থাৎ তালাইমারী মোড় ছিল গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এখান থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রুয়েট, রাজশাহী কলেজ, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও নাগরিক সমাজ আন্দোলন চালায়। ভবনটিকে জুলাই ইতিহাসসহ অঞ্চলের প্রাচীন ইতিহাস, বরেন্দ্র ভূমির ইতিহাস এবং ১৯৪৭ থেকে জুলাই অভ্যুত্থান পর্যন্ত বাংলার আন্দোলন–সংগ্রাম, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস সংরক্ষণ এবং উপস্থাপন করতে হবে।
মানববন্ধনে বক্তারা দাবি জানান, আরডিএ কমপ্লেক্স ভবনের জনবিরোধী ইজারা বাতিল করতে হবে এবং এর নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র’ করতে হবে।
নদীগবেষক ও লেখক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নই। শিক্ষানগরীর ধারাবাহিকতা রাখতে চাই। কিন্তু ভবনটি নির্মিত হয়েছিল ইতিহাস সংরক্ষণ ও সংস্কৃতিচর্চার জন্য, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয়।’
জুলাই ৩৬ পরিষদের আহ্বায়ক মাহমুদ জামাল কাদেরী বলেন, ‘৫ আগস্ট পরিবর্তনের পর আমরা আশা করেছিলাম, দখলবাজি ও অন্যায় শেষ হবে। কিন্তু ভবনটি নানা কৌশলে দখল হচ্ছে। আমরা রাজশাহীবাসীর পক্ষ থেকে ইতিহাস সংরক্ষণ ও সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় ছাত্র-জনতা শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলবে।’
রাজশাহী মহানগর ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নাদিম সিনা বলেন, ‘ভবনটি হওয়া উচিত ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে, যেখানে অডিটরিয়াম, আর্ট গ্যালারি ও নাট্যশালা থাকতো। রাজশাহীতে এ ধরনের সুযোগ-সুবিধার অভাব আছে। অথচ এটিকে একটি বেসরকারি স্কুলকে লিজ দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই, এটি তার মূল উদ্দেশ্যে ফিরে আসুক।’
আরডিএ সূত্রে জানা গেছে, নগরীর তালাইমারী মোড়ে ১২ হাজার ৫১৮ বর্গমিটার জমিতে ৬০ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবনটি নির্মাণ করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এটি ‘বঙ্গবন্ধু স্কয়ার’ নামে শুরু হলেও পরে নাম পরিবর্তন করে ‘আরডিএ কমপ্লেক্স’ রাখা হয়। সম্প্রতি ২৯ হাজার ৫০০ বর্গফুট স্পেস মাসে ৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকায় ১০ বছরের জন্য দেবাশীষ প্রামাণিক নামের এক ব্যক্তিকে ইজারা দেওয়া হয়, যিনি পরবর্তীতে এটি একটি স্কুলকে ভাড়া দেন। স্কুলটি ইতোমধ্যেই কার্যক্রম শুরু করেছে।
বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের আইন ও মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক হোসেন আলী পিয়ারা, নারীনেত্রী ঈশিতা ইয়াসমিন, ইয়ুথ অ্যাকশন ফর সোশ্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাসের সভাপতি শামীউল আলীম এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনকর্মী ওয়ালিউর রহমান প্রমুখ।
এর আগে ৫ নভেম্বর ৩৬ জুলাই ছাত্র পরিষদ নামে একটি সংগঠন ইজারা বাতিল চেয়ে মানববন্ধন করেছিল।
আরডিএ কমপ্লেক্স স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল তারিক বলেন, ‘আজ কারা কর্মসূচি পালন করেছেন, তা মাত্র জানলাম। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পরে পারব।’

Comments
Comments