নিউমুরিং টার্মিনালের চুক্তি চূড়ান্তে শুনানি পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নয়
![]() |
| সুপ্রিম কোর্ট | ফাইল ছবি |
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল ‘এনসিটি’ পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি–সম্পর্কিত প্রক্রিয়া প্রশ্নে রুলের ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য ২৫ নভেম্বর দিন রেখেছেন হাইকোর্ট। সে পর্যন্ত এনসিটি পরিচালনায় চুক্তি–সম্পর্কিত প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার বিষয়ে সরকার উদ্যোগ নেবে না বলে আদালতকে জানিয়েছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।
আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ মামলার শুনানি হয়। এর আগে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৩০ জুলাই হাইকোর্ট রুল দেন। এর ধারাবাহিকতায় এনসিটি পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডের চুক্তি–সম্পর্কিত প্রক্রিয়ায় স্থিতাবস্থা চেয়ে সম্পূরক আবেদন দাখিল করে রিট আবেদনকারী পক্ষ। এই আবেদনের শুনানিতে ১৩ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল শুনানির জন্য ১৯ নভেম্বর দিন রাখেন। এ অনুসারে গতকাল ও আজ শুনানি হয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও আহসানুল করিম, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. আনোয়ার হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।
পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী মঙ্গলবার দিন রাখেন। তখন আবেদনকারী পক্ষ থেকে চুক্তি–সম্পর্কিত প্রক্রিয়ায় স্থিতাবস্থা চাওয়া হয়। কারণ, ১৩ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ বলেছিল, শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেবে না। অথচ ইতিমধ্যে চুক্তি প্রক্রিয়ার জন্য মূল্যায়ন কমিটি গঠনের প্রস্তাবও গ্রহণ করা হয়েছে। আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই চুক্তিপ্রক্রিয়া এগিয়ে না নিতে রাষ্ট্রপক্ষকে মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। শুনানি না হওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে না বলে আদালতকে জানিয়েছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল।
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের পক্ষে সংগঠনটির সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন চলতি বছর রিট করেন। রুলে দেশি অপারেটরদের ‘প্রতিষ্ঠান’ অনুমতি না দিয়ে পিপিপি আইন ও নীতি লঙ্ঘন করে এনসিটি পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে যেকোনো অপারেটরকে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব ‘নিযুক্ত’ দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতি অনুসারে ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক পাবলিক বিডিং ‘দরপত্র আহ্বান’ নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা–ও জানতে চাওয়া হয় রুলে। নৌসচিব, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এই রুলের ওপর আজ দ্বিতীয় দিনে শুনানি হয়।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার নতুন দায়িত্ব নিয়েছে নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড। টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাইফ পাওয়ারটেকের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৬ জুলাই দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে এ দায়িত্ব নেয় জাহাজ মেরামতের এ প্রতিষ্ঠান। প্রথমবারের মতো বন্দরে টার্মিনাল পরিচালনায় যুক্ত হলো চিটাগং ড্রাইডক।
চট্টগ্রাম বন্দরের বৃহৎ এই টার্মিনাল নির্মিত হয় ২০০৭ সালে। টার্মিনালটি নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি সংযোজনে বন্দর কর্তৃপক্ষ ধাপে ধাপে মোট ২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। বন্দরের আমদানি–রপ্তানি কনটেইনারের বড় অংশ এই টার্মিনাল দিয়ে পরিবহন হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন