[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

স্বাধীনতার ঘোষণা বাদ দেওয়ার সুপারিশ, তাই জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না সিপিবিসহ চার দল

প্রকাশঃ
অ+ অ-
বাম ধারার চারটি দলের সংবাদ সম্মেলন। ১৬ অক্টোবর, ২০২৫, পুরানা পল্টন, ঢাকা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

জুলাই জাতীয় সনদে সংশোধিত খসড়া না পেলে স্বাক্ষর করবেন না বাংলাদেশের চারটি বামপন্থী দল। এ দলগুলো হলো: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনে সিপিবির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলগুলো এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। তারা জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে সংশোধনের দাবি জানিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি বলেন, 'মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ঐকমত্য কমিশনের যাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, সব দল যেসব বিষয়ে একমত হবে, শুধুই সেগুলোই ঐকমত্য হিসেবে গণ্য হবে। আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একমত পোষণ করেছি এবং সব সভায় উপস্থিত থেকে আমাদের মতামত জানিয়েছি। কিন্তু জুলাই সনদের চূড়ান্ত কপি যা গত ১৪ অক্টোবর আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে, সেখানে সর্বসম্মত বিষয় ছাড়া নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) দেওয়া প্রস্তাবগুলোও সনদে যুক্ত হয়েছে। আমাদের দেওয়া নোট অব ডিসেন্টগুলোর কারণও যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়নি।' 

চার বামপন্থী দল জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করছেন না। সংবাদ সম্মেলনে তারা সনদে স্বাক্ষর না করার কারণগুলো বিস্তারিত তুলে ধরেছে।

দলগুলো বলেছে, সনদের প্রথম অংশে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস এবং রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাস ঠিকভাবে তুলে ধরা হয়নি। বারবার সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়ার পরও তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদে ক্রান্তিকালীন বিধানে থাকা ৬ষ্ঠ তফসিলের ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’ ও ৭ম তফসিলের ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। তারা বলেছে, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের এই ভিত্তি বাদ দিলে বাংলাদেশের অস্তিত্বকেই প্রশ্ন করা হয়। এছাড়া, সনদের খসড়ায় ছিল অভ্যুত্থান–পরবর্তী সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্স নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের তথ্য, কিন্তু চূড়ান্ত সনদে এটি বাদ দেওয়া হয়েছে।

বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, “সংবিধানের চারটি মূলনীতি—গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ এবং ১৫০(২) অনুচ্ছেদের ক্রান্তিকালীন বিধানের তফসিল পরিবর্তনে সম্মতি দেওয়ার বিষয়, যা আদালতে প্রশ্ন করা যাবে না—এমন কোনো সনদে ভিন্নমত রেখে আমরা স্বাক্ষর করতে পারি না।”

তিনি আরও বলেন, জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামার ৩ নম্বর ধারা যেখানে বলা হয়েছে ‘জুলাই সনদ নিয়ে কেউ আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবে না’, তা নাগরিকের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারকে পুরোপুরি লঙ্ঘন করছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ আলোচনার যেসব বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছেন, শুধু সেই বিষয়গুলোই সনদে স্বাক্ষর করা উচিত। অন্য মতগুলো অতিরিক্ত প্রতিবেদন হিসেবে সনদে সংযুক্ত থাকতে পারে।

বজলুর রশীদ ফিরোজ সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করেন, ভিন্নমত থাকলে জুলাই সনদের অঙ্গীকার কীভাবে বাস্তবায়ন হবে। তিনি বলেন, ‘অঙ্গীকারনামার ২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, জুলাই সনদ সংবিধানের তফসিলে বা উপযুক্ত স্থানে যুক্ত করা হবে। আমরাও চাই সব দল মিলেই এটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হোক। তবে নোট অব ডিসেন্টসহ কীভাবে সংবিধানে যুক্ত করা হবে, তা আমাদের বুঝে উঠতে পারছি না।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা এবং বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। 

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন